ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সুযোগ পেয়েও মেডিক্যালে ভর্তি অনিশ্চিত সাবিনার

শরিফুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২২
সুযোগ পেয়েও মেডিক্যালে ভর্তি অনিশ্চিত সাবিনার বাবা-মা, ভাই-বোনের সঙ্গে সাবিনা।

ঠাকুরগাঁও: ময়মনসিংহ সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েও অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে ঠাকুরগাঁও সদরের চিলারং আরাজি ঝাড়গাঁও গ্রামের দিনমজুরের মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিনের। অভাবের কারণে তার মেডিক্যালে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

জানা যায়-অনেক চড়াই উৎরাই পার করে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের পিছিয়ে পড়া গ্রাম আরাজি ঝাড়গাঁয়ের মেধাবী সাবিনা এবার ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু অভাব অনটনের সংসারে তার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি এখন অনিশ্চিত।

সাবিনা বলেন, অনেক ছোটবেলা থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন আমার। আমার মা আমাকে উৎসাহ দিয়ে পড়াশোনা করিয়ে আসছেন। আমার এতদিনে লেখাপড়ার খরচ চালাতে তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। গাভী বিক্রি করতে হয়েছে, এছাড়াও শখের অনেক জিনিসও বিক্রি করেছে মা-বাবা। তারপরেও আমাকে লেখাপড়া শেখাতে একটু পিছপা হননি তারা। এর জন্য গ্রামের অনেক মানুষ অনেক কথা বলেছে। বাল্যবিয়ে দেওয়ার কথাও বলেছে। মেয়েদের এত পড়াশোনা করানো ঠিক না এমনও কথা শুনিয়েছে।

কিন্তু আমার মা ডাক্তার বানানোর যে স্বপ্ন দেখেছেন আমাকে নিয়ে সে স্বপ্ন থেকে এক চুলও নড়েননি। অভাবের সংসারে থেকেও একদম শূন্য হাতে এখন পর্যন্ত তিনি আশায় বুক বেঁধে আছেন আমি একদিন ডাক্তার হবো।
 
সাবিনার মা বিউটি আক্তার বলেন, তীরে এসে তরী ডুবে যাবে এটা আমি মানতে পারছি না। আমার ঘরে কোনো টাকা নেই। আমার মেয়েটা অনেক মেধাবী। তাকে আমি কথা দিয়েছি বেঁচে থাকলে তাকে মানুষের কাছে হাত পেতে হলেও লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের ডাক্তার বানাবো।

অনেকদিন আগে আমার মেয়েটা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। আমি সেদিন ডাক্তারের চেম্বারে মেয়েকে নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলাম। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিল সাবিনা। হাতে টাকা ছিল না। সেদিন ওই ডাক্তার আমাকে সাহস যুগিয়েছে, বিনা টাকায় আমার মেয়ের চিকিৎসা করেছে। আমি সেদিন বুঝেছিলাম আমার মেয়ে এমন ডাক্তার হলে সেও অন্য মায়ের মন খুশী করাতে পারবে। আমার মেয়েটাকে ডাক্তার বানাতে যদি কেউ সহযোগিতা করেন আমি কৃতজ্ঞ থাকবো। প্রয়োজনে কাজ করে ধার শোধ করবো। আমার মেয়েকে সহযোগিতা করুন।

বাবা আনিসুর রহমান বলেন, শরীরে যখন শক্তি ছিল তখন মাঠে কামলা দিয়ে রোজগার করতাম। মেয়ের কিছুটা চাহিদা পূরণ করতে পারতাম। কিন্তু এখন পারিনা। শরীরের শক্তিতে আর কুলায়না। ধার-দেনা করে পড়াশোনা করাই মেয়েকে আর গাভী পালন করে বিক্রি করে দেনা শোধ করি। এভাবেই চলতো। কিন্তু এখন আমার মেয়ে তার স্বপ্ন পূরণের এত কাছে এসেও তা সম্ভব হচ্ছে না। আমি বর্তমানে একেবারই নিরুপায়। এমন পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছি না। সরকারের কাছে অনুরোধ কিছু একটা করুন।

স্থানীয় আব্দুল খালেক বলেন, সাবিনা গ্রামের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রী। গোটা গ্রামে সে প্রথম এইচএসসি পাস করেছে। রংপুরের একটি কলেজে পড়াশোনা করেছে। তার বাবা-মা অনেক কষ্ট করে ধার-দেনা করে তাকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখছেন। সে আমাদের গ্রামের গর্ব। এবারে মেডিক্যালে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে সে। মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। আমরা চাই তাকে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিক সরকার। ও দেশের একদম খাঁটি সম্পদ এতে কোনো সন্দেহ নেই আমাদের গ্রামবাসীর।

ভেলাজান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার সরকার বলেন, অত্যন্ত মেধাবী সাবিনা ইয়াসমিন। নীতি ও আদর্শ নিয়ে জীবনযাপন করে মেয়েটি। প্রাইভেটের টাকা দিতে পারতো না বলে সে প্রাইভেটে আসতে চাইতো না। আমরা শিক্ষকরা তাকে বিনা পারিশ্রমিকে প্রাইভেট পড়ানোর চেষ্টা করেছি। সে মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে শুনে আনন্দে চোখে জল গড়িয়েছিল। এখন খুব খারাপ লাগছে মেডিক্যালে পড়ার মতো সামর্থ্য তার নাই। আমি শিক্ষক হয়ে সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। সত্যি সাবিনা ভর্তি হতে পারলে বাংলাদেশ একজন ভালো ডাক্তার পাবে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তাহের মো. সামসুজ্জোহা বলেন, মেধাবীরা ভালো স্থান পাক এটি আমরা সবাই চাই। আমরা সরকারিভাবে তাকে সহযোগিতা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।  

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।