ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ছাত্রলীগ নেতার ধর্ষণের ঘটনা টাকার বিনিময়ে মীমাংসা, এসআই ক্লোজ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২২
ছাত্রলীগ নেতার ধর্ষণের ঘটনা টাকার বিনিময়ে মীমাংসা, এসআই ক্লোজ

সাভার (ঢাকা): সাভারের আশুলিয়ায় এক ছাত্রলীগ নেতার ধর্ষণের ঘটনায় আসামির সঙ্গে আঁতাত করে থানায় বসে আড়াই লাখ টাকায় আপস-মীমাংসা করে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের এক এসআই এর বিরুদ্ধে।  

পরে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় এ ঘটনায় একটি মামলার পর অভিযুক্ত আসামি গ্রেফতারসহ এসআইকে ক্লোজড করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) রাতে এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম।

এর আগে গত ২১ মার্চ আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা সাকিব ভূঁইয়ার (২৮) বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করে এক পোশাক শ্রমিক।  
গ্রেফতার সাকিব ভুঁইয়া আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকার শাহ আলম ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

জানা গেছে, ভুক্তভোগী ওই পোশাক শ্রমিক আশুলিয়া থানায় সাকিবের বিরুদ্ধে বিয়ের ধর্ষণের অভিযোগ করলে সেই অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পরে থানার এসআই মো. ফরিদুল আলম এর উপর। পরে অভিযুক্তের সঙ্গে আঁতাত করে আড়াই লাখ টাকায় ঘটনাটি মীমাংসা করেন এসআই। পরবর্তীতে মীমাংসার বিষয়টি জানাজানি হলে গত সোমবার (১১ এপ্রিল) থানায় মামলা গ্রহণ করে আশুলিয়া থানা পুলিশ (মামলা নং-২৮)। এমনকি অভিযুক্ত সাকিব ভূঁইয়াকে অভিযান চালিয়ে সেদিন রাতে গ্রেফতারও করা হয়।

ভুক্তভোগীর এজাহার থেকে জানা যায়, গত তিন-চার মাস আগে তার দোকানে গিয়ে অভিযুক্ত সাকিবের সঙ্গে পরিচয় হয় ভুক্তভোগীর। এরপরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তাদের মধ্যে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়। গত ৬ মার্চ সর্বশেষ তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। এরপর থেকে বিয়ের কথা বললে (ভিকটিম) সাকিব টালবাহানা করে তাকে ঘোরাতে থাকে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী বলেন, আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘটনার মীমাংসা করা হয়েছিল। এসআই ফরিদ ও আরও কয়েকজন স্থানীয় লোক থানায় বসেই আমাকে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে মীমাংসা করায়। তারা বলে মামলায় গেলে অনেক ঝামেলা অনেক খরচ, তুমি মীমাংসা করে নাও। এ বিষয়ে আমার আর কোনো অভিযোগও ছিল না। সেই টাকা থেকে আমার কাছে বিভিন্ন খরচাপাতির কথা বলে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে উপস্থিতরা। আমি ৪০ হাজার টাকা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে চলে আসি। এরপর থেকে আমি আমার মত এলাকায় বসবাস করে আসছিলাম। আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে আমি এ বিষয়ে আর কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইনি। কিন্তু হঠাৎ করে এসআই ফরিদ আমাকে ফোন দিয়ে বলে, বোন আমার চাকরিটা বাঁচাও। তুমি থানায় এসে একটা স্টেটমেন্ট দিয়ে যাও। পরে আমাকে থানায় নিয়ে মামলা গ্রহণ করে। আমি যখন মামলা করতে চেয়েছি তখন আমার মামলা নেওয়া হয়নি। আর পরে আমি যখন সব ভুলে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চেয়েছি তখন আমাকে এই পথে আনা হল। আমাকে হেনস্তা করা হয়েছে। আমি সাকিবকে এখনো ভালবাসি তাই চাইনি সে ঝামেলায় থাকুক। কিন্তু এখন তো তাদের পথে এসে আমাকে মামলা পরিচালনা করতে হবে। আমি তো এখন এসব চাইনি। আমি এ টাকা নিয়েও খুব অস্বস্তিতে আছি। আমি এ টাকা ফেরতও দিতে চেয়েছিলাম।

এ অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা দাবি করে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফরিদুল আলম বলেন, আজ থেকে আমি পুলিশ লাইনে সংযুক্ত আছি। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমি, টাকা পয়সা নিয়ে কোনো মীমাংসা করা হয়নি। তাহলে কেন আপনাকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার সিনিয়র কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আর মামলা সংক্রান্ত একটি জটিলতা নিয়ে এসআই ফরিদুল আলমকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে যুক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, যেকোনো সময় যেকোনো পুলিশ বদলি হতে পারে। এ বদলি তার জন্য শাস্তিমূলক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা শাস্তিমূলক বিষয় নয়। এটা অভ্যন্তরীণ বিষয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২২
এসএফ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।