ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঈদের আগেই বন্ধকৃত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালুর দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২২
ঈদের আগেই বন্ধকৃত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল  চালুর দাবি

খুলনা: বন্ধকৃত সব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল অবিলম্বে চালু ও ঈদের আগে শ্রমিক-কর্মচারীদের সব বকেয়া পরিশোধের দাবিতে জানানো হয়েছে। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের  হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

রোববার (৩ এপ্রিল) দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবের শহীদ সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব এস এ রশীদ।

এ সময় অ্যাভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, গত ২০২০ সালের ২ জুলাই ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল একযোগে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক শিল্পের মধ্যে বিশ্ববাজার বিবেচনায় সবচেয়ে  সম্ভাবনাময় পাটশিল্পকে দেশি-বিদেশি বড় পুঁজিপতিদের মুনাফার ক্ষেত্রে পরিণত করার প্রথম ধাপ হিসেবে এই পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে আমরা মনে করি। বিজেএমসি, অর্থ ও পাট মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা ও ভ্রান্তনীতির কারণে পাটকলগুলো লোকসান হয়েছে। স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে প্রত্যেক সরকারই এই লোকসান প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রেখে এসব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। অথচ এখনও এসব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাতে সুষ্ঠু পরিকল্পনার ভিত্তিতে পরিচালনা করে লাভজনক করার সুযোগ আছে। শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)-এর প্রস্তাবনা অনুযায়ী মাত্র ১২শ কোটি টাকা ব্যয় করে এসব প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, পাটকল শ্রমঘন শিল্প। এই শিল্পের বিকাশের মধ্য দিয়ে আমাদের বেকার সমস্যা অনেকটা লাঘব করা যাবে। একই সঙ্গে বর্তমান বিশ্ববাজার বিবেচনায় প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। কিন্তু সরকার লিজ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিমালিকদের বরাদ্দ দিয়ে এসব পাটকল পরিচালনা করার প্রক্রিয়া নিয়ে এগোচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীল অর্থনৈতিক বিকাশের কথা বিবেচনা করলে সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থের জন্য মহাবিপদ ডেকে আনবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে নেতারা বলেন, পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার ফলে স্থায়ী, বদলি ও দৈনিকভিত্তিকসহ প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। গত ২১ মাস তারা অমানবিক জীবন-যাপন করছেন। শুধু পাটকল শ্রমিকরাই নয়, পাটশিল্প সংশ্লিষ্ট প্রায় তিন কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর কালো ছায়া নেমে এসেছে। সরকার তিন মাসের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধের ঘোষণা দিলেও এখনও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। বদলি শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেক এবং ৫টি মিলের (খালিশপুর জুট মিলস, দৌলতপুর জুট মিলস, জাতীয় জুট মিলস, আর আর জুট মিলস ও কেএফডি জুট মিলস)  শ্রমিকরা কেউই এখনও তাদের বকেয়া পাওনা পায়নি। তাদের প্রাপ্যর বাইরেও ২০১৯ সালের ৬ সপ্তাহের মজুরি, ২০২০ সালের ঈদুল আজহার বোনাসসহ ২০১৫ থেকে পাঁচ বছরের উৎসব বোনাসের ডিফারেন্স, ২০২০ সালের জুলাই মাসের প্রথম দুই দিনে ইনক্রিমেন্টসহ মজুরি এখনও বকেয়া। ২০১৩ সাল থেকে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীরাও এপর্যন্ত তাদের প্রাপ্য টাকা পায়নি।

তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে ৫ দফা দাবি বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানাই। ৫ দফা দাবিনামা হলো- বন্ধকৃত সব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় মালিকানায়  চালু করতে হবে, আগামী ঈদুল ফিতরের আগেই সব বদলি শ্রমিক, ৫ মিলের শ্রমিক, নামের ভুলের কারণে বঞ্চিত সব শ্রমিক এবং ২০১৩ সাল থেকে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের এরিয়ারসহ সব বকেয়া ক্ষতিপূরণসহ এককালীন পরিশোধ, ২০১৯ সালের ৬ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি ও ২০২০ সালের ঈদুল আজহার বোনাসসহ পূর্ববর্তী ৫ বছরের উৎসব বোনাসের ডিফারেন্স এবং জুলাই ২০২০-এর ইনক্রিমেন্টসহ দুইদিনের মজুরি পরিশোধ করতে হবে, পাট ও অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিজেএমসির কর্মকর্তাদের দুর্নীতি-ভ্রান্তনীতি-লুটপাটের বিচার ও মাথাভারী প্রশাসন পোষা বন্ধ করতে হবে, স্কপ-এর প্রস্তাবনা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ সাপেক্ষে পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করতে হবে, শ্রমিক ও শ্রমিক নেতৃবাদের নামে দায়েরকরা সব  মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

উপরোক্ত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে সব শ্রমিককে যুক্ত করে ঈদের আগে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাম গণতান্ত্রিক জোট খুলনা জেলা সমন্বয়ক  মিজানুর রহমান বাবু, , বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ জেলা আহ্বায়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা আহ্বায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী খুলনা জেলা সভাপতি মো. মোজাম্মেল হক খান, সিপিবি নেতা এইচ এম শাহাদাৎ, শেখ আবদুল হান্নান, সুতপা বেদজ্ঞ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ জেলা সদস্য মোস্তফা খালিদ খসরু, সিপিবি ফুলতলা উপজেলা সভাপতি গাজী আফজাল হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন ফুলতলা উপজেলা আহ্বায়ক অলিয়ার রহমান, খালিশপুর-দৌলতপুর জুট মিল যৌথ কারখানা কমিটির সভাপতি মনির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সভাপতি নূর মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক মো. মোফাজ্জেল হোসেন, যশোর-খুলনা আঞ্চলিক বদলি কমিটির আহ্বায়ক ইলিয়াস হোসেন, সদস্য সচিব আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার, শ্রমিকনেতা মো. নূরুল ইসলাম, মো. কাজী ডালিম, মোশারেফ হোসেন, শামস শারফিন শ্যামন, নাসিম উদ্দীন জয়, বহুমুখী শ্রমজীবী ও হকার সমিতি নেতা সেলিম বকুল, ছাত্র ফেডারেশন খুলনা মহানগর আহ্বায়ক আল আমিন শেখ, বরিশাল ছাত্র ফেডারেশন নেতা হাসিব আহমেদ  প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২২
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।