ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সড়ক সংস্কারে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সাজিদুর রহমান রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২২
সড়ক সংস্কারে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বালিটেক-দোহার আঞ্চলিক সড়কে কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৯ কিলোমিটার রাস্তা সড়ক বিভাগের মাধ্যমে  পুনঃসংস্কার করছে ‘মেসার্স আবেদ মন্সুর কন্সট্রাকশন’ নামে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করায়, কাজ শেষ হওয়ার আগেই ১০-১৫ শতাংশ পাথর উঠে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

 

জানা যায়, সিঙ্গেল বিটুমিন সারফেস ট্রিটমেন্ট (এসবিএসটি) ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের চলতি মাসে বালিটেক-দোহার আঞ্চলিক সড়কে মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগের অধীনে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আবেদ মন্সুর কন্সট্রাকশন রাস্তা পুনঃসংস্কারের কাজ করছে, আর এই কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে সড়ক বিভাগ।  

সরেজমিনে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার বালিটেক দোহার আঞ্চলিক কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কে মেসার্স আবেদ মন্সুর কনেকট্রাকশন নামে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রায় ৯ কিলোমিটার রাস্তা পুনঃসংস্কার কাজ করছে। এই রাস্তার প্রশস্ত হবে ৩.৭ মিটার ও বিভিন্ন বাঁকে বাঁকে হবে ৪ মিটার কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে রাস্তার প্রশস্তের কোনো মিল নেই। সড়ক বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কোনো মতে কাজ করে যাচ্ছে মেসার্স আবেদ মন্সুর কন্সট্রাকশন। নতুন রাস্তা তৈরি করার পরপরই গাড়ি চলাচল করতে গেলে বিটুমিনের ওপর আটকে থাকা পাথর উঠে যাচ্ছে আর এতে করে প্রতিনিয়তই ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে যানবাহনের মালিকের।

বালিটেক দোহার সড়কের চলাচলরত গাড়ির চালক সোহেল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কে গাড়ি চালাচ্ছি। অনেক কাজ হয়েছে এই রাস্তায় তবে এ রকম নিন্মমানের কাজ কোনোদিন দেখিনি। কাজ শেষ হওয়ার আগেই রাস্তা থেকে পাথর উঠে যাচ্ছে আর কী কারণে এই পাথর উঠে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না। তবে আমার মনে হচ্ছে পিচের (বিটুমিন) টেমপার না থাকায় এ রকমটা হচ্ছে। সামনে আসছে বৃষ্টি বাদলের দিন ওই সময়টাতে গাছের পানিতে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান এই গাড়ি চালক।

হাটিপাড়া এলাকার ৫০ ঊর্ধ্বো নারী শুক্কুরী বেগম বলেন, এই রাস্তা মাঝে মাঝে কাজ করে। কিন্তু বেশিদিন টেকসই হয় না। ভালো মতো করে কাজ করলে এতো তাড়াতাড়ি কোনোদিনই রাস্তা নষ্ট হয় না। কাজ করতে হইবো তাই কাজ করছে আর কিভাবে টাকা নিতে হইবো তারা এখন সেই সুযোগের অপেক্ষায় আছে।  

ওই একই এলাকার স্কুলছাত্র আবির হাসান জানায়, আমরা অনেক খুশি হয়েছিলাম রাস্তার কাজ শুরু করায়। কারণ নতুন রাস্তা দিয়ে স্কুলে যাবো। রাস্তায় যে কাজ হচ্ছে তা দেখে মনটা নষ্ট হয়ে গেছে, কারণ নতুন রাস্তার অধিকাংশই পাথর উঠে যাচ্ছে।

দোহার বেড়িবাঁধ এলাকার ব্যবসায়ী তাসকিন মাহমুদ রনি বলেন, আমি দোহার বেড়িবাঁধ এলাকায় অনেক বছর ধরে ব্যবসা করছি অনেক রাস্তার কাজ দেখেছি তবে এ বছরের রাস্তার যে কাজ হচ্ছে এমন কাজ কোনো দিন দেখিনি। আমরা এই কাজ দায়সারাভাবে না করার জন্য বাঁধাও দিয়েছিলাম তখন এক সড়ক বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার এসে বললো আপনাদের কোনো কথা থাকলে মানিকগঞ্জ গিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দিতে পারেন। তখন আমরা সকলেই বুঝতে পারলাম আসলে আমাদের মাথায় কাঠাল ভাঙার মতো একটি গল্প বলছেন তারা।

মেসার্স আবেদ মন্সুর কন্সট্রাকশনের প্রকৌশলী আল মামুন বলেন, আমরা সারা দেশে কাজ করছি। আমাদের কোম্পানির সুনাম সারা দেশ জোড়া। এখানে অনেক ভালো মানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে কাজ করলে কিছু ভুল হতে পারে, তবে আমার মনে হয় এই কাজে কোনো ভুল হচ্ছে না বলেও দাবি করেন এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী।

বালিটেক দোহার রাস্তার দ্বায়িত্বরত সড়ক বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফারুক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সড়ক বিভাগের লোকজন সব সময় এই কাজের সাইটেই থাকি। যাতে করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের নয়-ছয় করতে না পারে। তবে এ ধরনের কাজ যেহেতু মানিকগঞ্জে নতুন, সে কারণে অনেকেই কিছু ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে।

মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গাউস-উল-হাসান মারুফ বাংলানিউজকে বলেন, কার্পেটিং সিলকোটের চেয়ে সিঙ্গেল বিটুমিন সারফেস ট্রিটমেন্ট (এসবিএসটি) কাজ দীর্ঘস্থায়ী এছাড়া খরচও সিলকোটের চেয়ে অনেক কম। এসবিএসটি এটির একটি টেকনিক্যাল বৈশিষ্ট হলো বিটুমিনের ওপর যে পাথর দেওয়া হয় সেই পাথরটা একটু ছাড়া ছাড়া থাকে। তবে ওই পাথরের উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করলে কিছু পাথর উঠে যাবে আর বাকি পাথরগুলো বিটুমিনের সঙ্গে গেঁথে যাবে। এসবিএসটি সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ তেমন কিছু জানেন না তাই তারা হয়তো ভুল বুঝছে। এই এসবিএসটির রাস্তা দুই বছরের মতো টেকসই হয় যে কারণে আমরা এই প্রযুক্তির রাস্তার কাজ হাতে নিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।