ঢাকা, সোমবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হারিয়ে যাচ্ছে চরদুয়ানীর ভাড়ানি খালের যৌবন

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২
হারিয়ে যাচ্ছে চরদুয়ানীর ভাড়ানি খালের যৌবন নির্মাণকাজ চলছে ভাড়ানি খালে। ছবি: বাংলানিউজ

পাথরঘাটা (বরগুনা): এক সময়ের ব্যস্ততম খাল। যে খালে খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে একমাত্র নৌপথের যোগাযোগ ছিল।

এ খালটি মিশেছে বিষখালী ও বলেশ্বর নদীতে। ব্যবসায়ীদের একমাত্র রুট ছিল চরদুয়ানী লঞ্চঘাট। কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে গেছে চরদুয়ানীর ভাড়ানি খালের যৌবন।

এ খালের রয়েছে অনেক ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্যবাহী চরদুয়ানীর ভাড়ানি খালটি দখলের মহা উৎসব চলছে। যার জমির সামনে খালের অংশ পড়েছে সেই তার ইচ্ছে মতো ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করছে। এ যেন দেখার কেউ নেই। আস্তে আস্তে যৌবন হারাচ্ছে ভাড়ানি খাল। এ খালের যৌবন ফেরাতে যেন ভাড়ানি খাল নিজেই কান্না করছে।

এ চিত্র পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের ভাড়ানি খালের। বলেশ্বর নদের পূর্বে চরদুয়ানী বাজার আর পশ্চিমে সুন্দরবন হওয়ায় এ বাজারটি সব সময়ই সরগরম থাকে। আর এতো মানুষের ভিড়েও আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে এভাবেই খাল জবর দখলে নিচ্ছে দস্যুরা। অবৈধ স্থাপনা সরাতে প্রশাসন এবং আদালতের একাধিকবার নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও মানছে না কেউ। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, চরদুয়ানী বাজারের একমাত্র খালটি দখলে চলে যাচ্ছে এলাকার প্রভাবশালীদের। যার জমির সামনে খালের অংশ পড়েছে সেই তার ইচ্ছে মতো দোকান ঘর নির্মাণ করছে। চরদুয়ানী ও কাঠালতলীর দুই ইউনিয়নের সংযোগ খালের দুই পাশেই ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করে খালটি একেবারেই দখলে নিয়ে গেছে।  

স্থানীয় মো. ফয়সাল হাওলাদার, মোসা. হালিমা বেগম, মো. ইউসুফ আলী, ফজলুর রহমান, মো.বেলাল, মো. শহিদ মিয়া, মো. হারুন, আবদুল মমিন, মো. মোস্তফা, দিপ্ত গোমস্তা, রুহুল আমিন, মো. শাহজাহান, দুলাল বেপারী, শহিদ দফাদার, ফারুক হোসেন, মোসা. হাফিজার বিরুদ্ধে দখলের অভিযোগ রয়েছে।

কাগজপত্র ঘেটে দেখা যায়, ২০১৪ সালের ২৫ মে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে উচ্ছেদ সংক্রান্ত কেস নথি অনুমোদনের জন্য পাঠান তৎকালীন পাথরঘাটা ইউএনও সাখাওয়াত হোসেন সরকার। পরের বছর ১৯ ফেরুয়ারি ১৯টি উচ্ছেদ মামলা কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বরগুনা জেলার তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী হাফিজুল আমিনকে নিয়োগ দেন। এর মাঝে চলে গেল বেশ কয়েক বছর। সবশেষ গত কয়েকদিন আগে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ সরেজমিন গিয়ে খাল দখল বন্ধ করেন, পরে নতুন করে কোনো নির্মাণকাজ শুরু না করার জন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়ে আসলেও কাজের কাজ হয়নি। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই চলছে প্রকাশ্য দিবালোকে এ দখলের মহোৎসব চলছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মাওলানা ইদ্রিস আলী বলেন, কয়েকদিন আগে ইউএনও সাহেব সরেজমিন এসে কাজ বন্ধ করে দেয়। কয়েকদিন যাওয়ার পরই ফাঁকে ফাঁকে কাজ করছে তারা।

চরদুয়ানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ডা. প্রফুল¬ চন্দ্র মিত্র বলেন, নাব্যতা হারিয়ে গেলে প্রকৃতির ওপর বিরুপ চাপ পড়ে। প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়। যার কারণে পরিবেশের ভারসাম্যতাও হারিয়ে যেতে বাধ্য। এ জন্য পরিবেশের স্বার্থে সম্মিলিতভাবে কাজ করা উচিত।

অভিযুক্ত মধ্যে মো. মোস্তফার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে পুরাতন ঘর মেরামত করছি মাত্র। এর আগে ২০১৫ সালে ডিসি অফিস থেকে আমাদের ঘর ভাঙার নির্দেশনা দিলে ২০১৬ সালে আমরা হাইকোর্ট থেকে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ আনি, পরে এক বছরের মেয়াদ বাড়িয়ে আনি। বর্তমানে হাইকোর্টে চলমান।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএন) হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ বলেন, কয়েকদিন আগে সব কাজ বন্ধে করে স্থাপনাগুলো ভাঙার নির্দেশনা দিয়েছি। এখন কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। আবার কাজ শুরু করে থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, যে সব খাল অবৈধ দখলে রয়েছে, সেসব জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান আমাদের অব্যাহত রয়েছে। চরদুয়ানীতে এ রকম যদি অবৈধভাবে দখল হয়ে থাকে তাহলে তাও উচ্ছেদ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।