ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ঘুষ দিয়েও মেলেনি বিদ্যুৎ, সেচের অভাবে বোরো ক্ষেত চৌচির

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২২
ঘুষ দিয়েও মেলেনি বিদ্যুৎ, সেচের অভাবে বোরো ক্ষেত চৌচির

লালমনিরহাট: কেটে দেওয়া বিদ্যুৎ লাইনের পুনরায় সংযোগ দিতে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েও মিলছে না সংযোগ। ফলে সেচের অভাবে ১১০ বিঘা জমির বোরো ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।



জানা গেছে, লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের বোরো চাষের সর্বোচ্চ ফলনশীল এলাকা উত্তর গোবদা গ্রাম। এ গ্রামে শত শত বিঘা জমিতে তেল চালিত শ্যালো মেশিনের সেচে প্রতিবছর বোরো চাষাবাদ করতেন চাষিরা। এ ফসলেই চলে এ গ্রামের মানুষের সংসার।  

গত ২০১৮ সালে সেচ সংকট দূর করতে স্থানীয় কৃষক মৃত আসমত আলীর ছেলে মোক্তার আলী পল্লী বিদ্যুৎ অফিস আদিতমারীতে যোগাযোগ করে সেচ পাম্পের অনুমোদন নেন। নিজের টাকায় ট্রান্সফরমার ক্রয় করে সেচ পাম্পের সংযোগ নেন। যার হিসাব নম্বর -০৭/২৬৫/১০১২। সেই থেকে ওই গ্রামের ১১০ বিঘা জমির বোরো ক্ষেতে সেচ দেওয়া হচ্ছে। বৈদ্যুতিক সেচ পাম্পের কারণে বোরোর ফলনও বেড়েছে।

চলতি বোরো মৌসুমেও ওই সেচ পাম্পের আওতায় ১১০ বিঘা জমিতে বোরো চাষাবাদ করেন গ্রামের চাষিরা। ঊর্ধ্বমুখী বাজারে নিজে না খেয়েও বোরো ক্ষেতে সার ও সেচ দেওয়াসহ নিয়মিত পরিচর্যা করছেন কৃষকরা।

গত ৩ মার্চ সেই সেচ পাম্পের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আদিতমারী সাব জোনাল অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিজিএম) মোস্তফা কামাল। সংযোগ বিচ্ছিন্নের কারণ জানতে চাইলে সেচ পাম্প মালিক মোক্তার আলীকে অফিসে ডাকেন তারা।

বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ৯ দিন ধরে ১১০ বিঘা বোরো ক্ষেতে সেচ দিতে পারছেন না চাষিরা। ফলে তাদের ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। কষ্টে লাগানো বোরো ক্ষেত রক্ষায় কৃষকরা প্রতিদিন সেচ পাম্প মালিকের কাছে বলেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না।

কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, গত ৪/৫ বছর ধরে এই সেচ পাম্প থেকে সেচ নিয়ে বোরো চাষাবাদ করে সংসার চালাচ্ছি। এবার বোরো চাষের মধ্যবর্তী সময় হঠাৎ সেচ বন্ধ করায় বোরো ক্ষেত মরে যাচ্ছে পানির অভাবে। সেচ পাম্প মালিক বলছে বিদ্যুৎ অফিস অযথা লাইন কেটে দিয়েছে। তারা যদি লাইন কেটে দেবে। তবে চাষাবাদের শুরুতে কেন কাটলো না? তখন কাটলে তো আমরা বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করে চাষাবাদ করতাম। এখন ভরা ক্ষেতে সেচ কোথায় পাই। পানি না দিলে ক্ষেত তো মরে যাবে। ধান না হলে তো পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। এখানে দুই-এক বিঘা নয়। একশ ১০ বিঘার জমির ধান নষ্ট হতে বসেছে। দ্রুত সংযোগ দিয়ে বোরো ক্ষেত রক্ষার দাবি জানান তিনি।

সেচ পাম্প মালিক মোক্তার আলী বলেন, নিজের টাকায় ট্রান্সফরমার কিনে ৫ বছর ধরে এই বডিং থেকে ১১০ বিঘা জমির সেচ দিচ্ছি। বিদ্যুৎ বিলও বকেয়া নেই। হঠাৎ গত ৩ মার্চ বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম এসে লাইন কেটে দেন। কারণ জানতে চাইলে তারা আমাকে অফিসে আসতে বলেন। আমি গত ৭ তারিখ অফিসে গেলে ডিজিএম একটি খাবার হোটেলে নিয়ে কথা বলেন। এসময় তিনি ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমি তাৎক্ষণিক ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। তারা পরদিন সংযোগ দেওয়ার কথা দিলেও তা আজও দেয়নি। পানির অভাবে বোরো ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। মরে যাচ্ছে মধ্য বয়স্ক বোরো ধানের গাছ। তাদের চাহিদা মতো টাকা দিয়েও সংযোগ নিতে পারছি না। এ ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

পল্লী বিদ্যুতের হাজীগঞ্জ সাব স্টেশনের ইনচার্জ মোর্শেদ আলম বলেন, অনুমোদনকৃত স্থান থেকে বোয়িং সরিয়ে নেওয়ায় মোক্তার আলীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আগের স্থানে ফিরে গেলে সংযোগ দেওয়া হবে। অন্যথায় বোরো নষ্ট হলেও সুযোগ নেই। ৪ বছর ধরে চললেও সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। তখন যারা দায়িত্বে ছিলেন। তারা বলতে পারবেন। তবে ঘুষের ১০ হাজার টাকা গ্রহণের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আদিতমারী জোনাল অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিজিএম) মোস্তফা কামাল ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি কোনো অবৈধ টাকা গ্রহণ করিনি। যে স্থানে অনুমোদন দেওয়া ছিল, সেখান থেকে বোয়িং সরানো হয়েছে। তাই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ৪ বছর আগে কারা অনুমোদন দিয়েছে তা আমার জানা নেই। আমি অনিয়ম পেয়েছি, তাই বিচ্ছিন্ন করেছি। শত বিঘা কেন? হাজার বিঘা বোরো নষ্ট হলেও অনুমোদিত স্থানে না গেলে সংযোগ হবে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।