ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মেয়রের গৃহকর্মীকে দ্বারিয়াপুর হাটের ইজারা দেওয়ার অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২২
মেয়রের গৃহকর্মীকে দ্বারিয়াপুর হাটের ইজারা দেওয়ার অভিযোগ

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌরসভার দ্বারিয়াপুর হাট-বাজার (তাঁতের শাড়ি-লুঙ্গির হাটসহ) ইজারা দেওয়ায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।  

নিয়ম বহির্ভূতভাবে এক রাতের কারিশমায় নিজের গৃহকর্মীর নামে উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ হাটটির ইজারা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পৌর মেয়র মনির আকতার খান তরু লোদীর বিরুদ্ধে।

 
 
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) বিকেলে ওই ইজারা বাতিল করে তদন্ত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ মো. শামসুজ্জোহার মাধ্যমে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন দুই দরপত্র দাতা৷ 

তারা হলেন- উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাহবুবে ওয়াহেদ শেখ কাজল ও উপজেলা যুবলীগের সবেক আহ্বায়ক মো. রাজীব শেখ।  

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে শাহজাদপুর পৌরসভাধীন দ্বারিয়াপুর হাট-বাজারটি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এক কোটি ২৫ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু নির্বাচিত হয়েই পরের অর্থ বছরে (২০২০-২১) মেয়র মনির আক্তার খান তরু লোদী উন্মুক্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ছাড়াই অনিয়মের মাধ্যমে গোপনে নিজের গৃহকর্মী রফিকুল ইসলামের নামে মাত্র ৭৪ লাখ টাকায় হাটটি ইজারা দেন। এর ফলে আগের বছরের তুলনায় ওই বছরে সরকার ৫১ লাখ টাকা রাজস্ব হারায়। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২০২২ অর্থ বছরেও একই কায়দায় উন্মুক্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ছাড়াই অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে গোপনে নিজের পছন্দের ব্যক্তির নামে ইজারা দেওয়ার পাঁয়তারা শুরু করেন মেয়র।

পরে বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদের কারণে পৌরসভার মেয়র উন্মুক্ত দরপত্র ফরম বিতরণ করতে বাধ্য হন। উন্মুক্ত দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে দরপত্র ফরম বিক্রির শেষ তারিখ ৮ মার্চ ও জমাদানের শেষ তারিখ ৯ মার্চ। ৯ তারিখ দুপুর ১টার আগেই দরপত্র বাক্স সিলগালা করা হয়। খামে পৌরসভার নির্ধারিত সিলগালা করা বাক্সে মাহবুবে ওয়াহেদ শেখ কাজল এক কোটি ৬১ লাখ ও মো. রাজিব শেখ ৯৫ লাখ টাকা দর নির্ধারণ করে দরপত্র জমা দেন। ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে সব দরদাতার উপস্থিতিতে বাক্স খোলার নিয়ম থাকলেও মেয়রের অনুপস্থিতি দেখিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে বাক্স না খুলে পরদিন ১০ মার্চ দুপুর ১২টার পরে খোলে।  

বাক্স খোলার সময় দেখা যায়, দরপত্র বাক্সের তালার গায়ে কোনো সিলগালা করা নেই, শুধু সুতা দিয়ে পেঁচানো রয়েছে। সেখানে জমাকৃত দু’টি দরপত্র ছাড়াও পৌর মেয়র মনির আক্তার খান তরু লোদীর বাড়ির ম্যানেজার আবু বক্কারের নামে আরও একটি দরপত্র জমা দেখানো হয়।

এ অনিয়মের প্রতিবাদ করলে পৌর কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত না করে শাহজাদপুর পৌর মেয়র মনির আক্তার খান তরু লোদীর বাড়ির ম্যানেজার দ্বারিয়াপুর গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে আবু বক্কারকে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ঘোষণা করে। তিনি দর দিয়েছেন ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

অভিযোগকারী দরপত্র দাতা মাহবুবে ওয়াহেদ শেখ কাজল বলেন, পৌর মেয়র মনির আকতার খান তরু লোদী ৯ মার্চ রাতে গোপনে দরপত্র বাক্স খুলে আমার দর দেখে তার চেয়ে মাত্র ১ লাখ টাকা বেশি দর দিয়ে তার পছন্দের ব্যক্তি নিজ বাড়ির ম্যানেজার আবু বক্কারের নামে ইজারা দিয়েছেন।  

তবে শাহজাদপুর পৌর মেয়র মনির আকতার খান তরু লোদী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, টেন্ডার ড্রপ এবং ওপেন নিয়ম অনুযায়ীই হয়েছে। আপনি অফিসে এসে দেখে যাবেন, সব প্রমাণাদি আছে।

শাহজাদপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী হারুনর রশীদ জানান, ৯ মার্চ বিকেল ৩টায় টেন্ডার ওপেন হওয়ার কথা থাকলেও মেয়র অনুপস্থিত থাকায় পরদিন ১০ মার্চ বেলা ১১টায় ওপেন করা হয়েছে। তবে অফিসিয়ালি ৯ মার্চই ওপেন দেখানো হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।