ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বসতঘর গুঁড়িয়ে দিল সন্ত্রাসীরা, মানবেতর অবস্থায় বসবাস

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২২
বসতঘর গুঁড়িয়ে দিল সন্ত্রাসীরা,  মানবেতর অবস্থায় বসবাস

লক্ষ্মীপুর: রান্না শেষ করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুপুরের খাবার খাবেন মল্লিকা রানী শীল। কিন্তু এর আগেই সব লণ্ডভণ্ড করে দিল বাড়ির এক প্রতিবেশীর ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা।

 

মল্লিকার বসতঘরটি ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে দুপুরের জন্য রান্না করা ভাত-তরকারিতেও ছাই দিয়ে দিয়েছে। বসতঘর হারিয়ে গত কয়েকদিন থেকে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন মল্লিকা রানী শীল ও বিমল চন্দ্র মজুমদার।  

অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের অবিরখিল গ্রামের নাপিত বাড়িতে।
 

ফিল্মি স্টাইলে এবং সন্ত্রাসী কায়দায় তাদের বসতঘরটি চুরমার করে দেয় একই বাড়ির মৃত দুলাল বাবুর ছেলে জয় চৌধুরী, তার দাদা ননি গোপাল ও তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। তারা দেশীয় অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত থাকায় বাড়ির কেউ সাহস করে এগিয়ে আসেনি। এছাড়া ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী পরিবারটি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।

রাত্রিযাপন করছেন বসতভিটার ওপর খোলা আকাশের নিচে। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে শুক্রবার (৪ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এবং শনিবার (৬ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে দুইবার হামলা করে অভিযুক্তরা।  

এ ঘটনায় থানায় মামলা হলেও সেমাবার (৭ মার্চ) রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা মামলা তুলে নেওয়াসহ বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে অসহায় পরিবারটিকে।  

সোমবার বিকেলে সরেজমিনে ভুক্তভোগী পরিবাটির করুণ চিত্র দেখা গেছে।

মল্লিকা রানী শীল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। দিন এনে দিন খাওয়ার মতো অবস্থা। কোনোমতে এ ঘরে দুই ছেলে এবং স্বামীকে নিয়ে থাকতাম। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় মৃত দুলাল চৌধুরীর ছেলে জয় চৌধুরী আমাদের বসতভিটা কেড়ে নিতে চাচ্ছে। তাই ঘরটি ভেঙে দিয়েছে। আমাদের ওপর নির্মম অবিচার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, শুক্রবার দুপুরে রান্নার কাজ শেষ করেছি। স্বামী সন্তানরা সেলুনের কাজ করে। তারা কাজ শেষ করে এসে ভাত খাবে। কিন্তু তার আগেই জয় চৌধুরী ও তার দাদা ননী গোপালের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী এসে হঠাৎ ঘর ভাঙা শুরু করে। তাদের হাতে দা-খুন্তিসহ ধারালো অস্ত্র ছিল। তাই ভয়ে বাধা দিতে পারিনি। দুপুরের খাওয়ার জন্য যে ভাত রান্না করেছি, সেগুলো নষ্ট করে দিয়ে যায়। ওইদিন ছেলে-মেয়ে এবং স্বামীকে নিয়ে না খেয়েই ছিলাম। এখন খুব কষ্টে দিন কাটছে। পাশের লোকজন কিছুটা খাবার দিচ্ছে। কিন্তু থাকার জন্য কোনো জায়গা নেই। শুক্রবার দুপুরের পর থেকে রাতের বেলা এ খোলা আকাশের নিচে থাকছি। তাদের (হামলাকারী) ভয়ে কেউ আমাদের রাখতেও রাজি হচ্ছে না।
 
ঘটনার প্রথম দিন তার এক মেয়েকে (২৪) মারধর করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন মল্লিকা রানী।

তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর থেকে আমরা এ ঘরে বসবাস করে আসছি। এখন এখান থেকে আমাদের উচ্ছেদ করার পাঁয়তারা করছে।
 
ভুক্তভোগীর ছেলে মনোজ মজুমদার বলেন, আমি একটি সেলুনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। ঘটনার সময় আমি বাড়ি ছিলাম না। কাজ শেষ করে এসে দেখি ঘর নেই। সন্ত্রাসীরা এসে আমাদের ঘরটি ভেঙে দিয়েছে। এখন আমাদের থাকার ঘরটুকু নেই। হঠাৎ করে সন্ত্রাসীরা এসে আমাদের ঘর ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। ঘরের পাশে কয়েকটি গাছ ছিল- সেগুলো কেটে দিয়েছে জয় চৌধুরী ও তার লোকজন। আমরা গরিব, তাই তাদের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছি না। এ বিষয়ে আমি প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
 
মনোজের বাবা বিমল চন্দ্র মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, হামলার ঘটনায় আমি বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছি। এতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত জয় চৌধুরী ও তার দাদা ননী গোপাল, তসলিম ও আরিফ নামে চার জনের নাম উল্লেখ এবং ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করি। আসামিরা বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পাঠাচ্ছে মামলাতে যেন না যাই। তাহলে পরে দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়।
 
জমির বিষয়ে তিনি বলেন, আমার খালাতো ভাই হরিপদ মজুমদার ৩ শতাংশ জমি আমার ছেলে মনোজ মজুমদারের নামে লিখে দিয়েছে। ওই জমিতে আমাদের বসতঘর। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর থেকে সেখানে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে বসবাস করে আসছি। কিন্তু এ নিয়ে বিভিন্ন সময় আমাদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। আর সর্বশেষ জমি থেকে আমাদের সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করার উদ্দেশে ঘর ভেঙে দিয়েছে।

এদিকে, খবর পেয়ে সোমবার (৭ মার্চ) সকালে অসহায় পরিবরটিকে সরেজমিনে দেখতে যান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু। তিনি খোঁজ-খবর নিয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।  

বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এটি একেবারে জঘন্য ঘটনা। কোনো মানুষকে বসতভিটে ছাড়া করা অমানবিক কাজ। বিষয়টি নিয়ে আমরা খোঁজ-খবর রাখছি। অসহায় পরিবার যেন ন্যায় বিচার পায়, আমি প্রশাসনের প্রতি সে অনুরোধ জানাই। বিষয়টি আমাদের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেখে গেছেন। তিনিও প্রশাসনকে অনুরোধ করেছেন অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

এদিকে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত জনি চৌধুরীকে এলাকায় পাওয়া যায়নি। মামলার পর থেকে তিনি ঘা-ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসীম উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার বিষয়ে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।        

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।