ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ আষাঢ় ১৪৩১, ১৮ জুন ২০২৪, ১০ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

পুলিশে নারী মাত্র ৮ শতাংশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৭ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২২
পুলিশে নারী মাত্র ৮ শতাংশ

ঢাকা: ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ বাংলাদেশে বর্তমানে সব ক্ষেত্রেই বেড়েছে নারীর অংশগ্রহণ। সংখ্যায় কম হলেও পুরুষের সঙ্গে সমান তালে অবদান রাখছেন নারীরা।

তবে টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশ বাহিনীতে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ৮.০২ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও সংখ্যার বিবেচনায় পুলিশে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা খুবই কম। এজন্য দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন পদে নারীদের নিয়োগ না হওয়া, নিয়োগে ধীরগতি, সামাজিক প্রেক্ষাপটসহ নানা কারণকেই দেখা হচ্ছে। তবে এখন সব বাধা পেরিয়ে নারীবান্ধব এ সরকারের সময়ে পুলিশে ক্রমেই বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ।

পুলিশ সদর দফতর জানায়, পুলিশ বাহিনীতে ক্রমেই বাড়ছে নারীর প্রাধান্য। যোগ্যতা ও সুযোগ অনুযায়ী বড় ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদোন্নতি ও দায়িত্ব পাচ্ছেন তারা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও উজ্জ্বল ভূমিকায় বাংলাদেশ নারী পুলিশ সদস্যরা।

পুরুষের পাশাপাশি সমান চ্যালেঞ্জে পুলিশে নারীরা অভাবনীয় সাফল্য পাচ্ছেন, মিলছে স্বীকৃতিও। এদিকে পুলিশকে নারীবান্ধব হিসেবে ঘোষণা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি।

জানা যায়, স্বাধীনতার পর পুলিশ বাহিনীতে কোনো নারীর অংশগ্রহণ ছিল না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে প্রথম আটজন নারী কনস্টেবল নিয়োগ দেন। তবে তারা কাজ করতেন সাদা পোশাকে।

এরপর পুলিশের পোশাকে নারী সদস্যদের নিয়োগ শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। মাত্র ১১ জন নারী সদস্য নিয়োগের মধ্য দিয়ে যে পথচলা শুরু সেখানে আজ পুলিশে নারীর সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। যা প্রতি বছরই ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের জুলাইয়ের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত মোট নারীর সংখ্যা ১৩ হাজার ৪০২, যা ছিল সে সময়কার বাংলাদেশ পুলিশের মোট জনবলের ৭.১০ শতাংশ।

সর্বশেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত মোট জনবলের সংখ্যা ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৯৯ জন। এরমধ্যে নারীর সংখ্যা ১৫ হাজার ২৩৯ জন। যা মোট জনবলের ৮.০২ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় যা বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, পুলিশে উচ্চ পর্যায়ে অর্থাৎ বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত প্রথম শ্রেণির নারী পুলিশ কর্মকর্তা ২৯৬ জন। এর মধ্যে ডিআইজি (গ্রেড-৩) দুজন, অতিরিক্ত ডিআইজি তিনজন, পুলিশ সুপার ৮০ জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১২১ জন ও সহকারী পুলিশ সুপার ৯০ জন।

এছাড়া পরিদর্শক (নিরস্ত্র) ১১৪ জন, উপ-পরিদর্শক (এসআই) ৮৫৮ জন, সার্জেন্ট ৫৭ জন, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এক হাজার ১৩৩ জন, এএসআই (স্বশস্ত্র) তিন জন, নায়েক ২৬১ জন ও নারী কনস্টেবল ১২ হাজার ৫১৭ জন।

১৯৮৬ সালে প্রথম সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে ফাতেমা বেগমের যোগদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশে উচ্চ পর্যায়ে (বিসিএস) নারী নিয়োগ শুরু হয়। দীর্ঘদিন পর ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী পুলিশ অফিসারদের নিয়োগ চালু করেন।

১৯৯৯ সালে ১৮তম বিসিএসে আটজন নারী সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারে নারীদের প্রবেশাধিকার আবার উন্মুক্ত হয়।

পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে নারী সদস্যরা দায়িত্ব পালন করলেও আগে ট্রাফিক সার্জেন্ট পদে নারী সদস্যদের দেখা যায়নি। ২০১৭ সালে ৩২ জন নারী সার্জেন্টের যোগদানের মধ্য দিয়ে সার্জেন্ট হিসেবে রাজপথে কাজ করতে শুরু করেন নারী পুলিশ সদস্যরা। বর্তমানে শুধু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগেই কাজ করছেন ৫২ নারী পুলিশ সদস্য।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ডিএমপিতে মোট জনবল ৩০ হাজার ৩৫৯ জন। এর মধ্যে নারী কর্মকর্তা ২৯ জন। পুরুষ কর্মকর্তা ৩০০ জন। নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে যুগ্ম কমিশনার একজন, উপ-কমিশনার (ডিসি) তিনজন, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ১২ জন আর সহকারী কমিশনার (এসি) রয়েছেন ১৩ জন।  

ডিএমপিতে সহকারী কমিশনারের নিচে নারীর সংখ্যা দুই হাজার ২৮ জন। এর মধ্যে পরিদর্শক আটজন, এসআই ১১৮ জন, সার্জেন্ট ৩৫ জন, এএসআই (নিরস্ত্র) ১৫৯ জন, নায়েক ৪৩ জন ও কনস্টেবল এক হাজার ৬৬৫ জন।

বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিওএন) সূত্র জানায়, নারী পুলিশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, নেতৃত্ব ও দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০০৮ সালে চালু করা হয় উইমেন পুলিশ নেটওয়ার্ক। ২০১২ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয় নারী পুলিশের আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নারী পুলিশের ভূমিকা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হয়।

১৯৮৯ সাল থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরাও। চলতি বছরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৪৪ নারী পুলিশ সদস্য জাতিসংঘ মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বর্তমানে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) কর্মরত ও বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিওএন) সভাপতি ডিআইজি আমেনা বেগম বলেন, দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ পুলিশের জয়যাত্রা চলছে। এতে পুরুষের মতো নারী পুলিশ সদস্যদেরও রয়েছে উল্লেখযোগ্য অবদান। সমাজে নারীর নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হলে পুলিশের মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

পুলিশের দক্ষতা-সক্ষমতা বৃদ্ধি, নেতৃত্বের বিকাশ, মানবিক কাজে উদ্বুদ্ধ করতে নিয়মিত নারী পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যার প্রতিফলন বিভিন্ন অপারেশনাল কাজে পুরুষের মতো সমান সাফল্য পাচ্ছেন নারী কর্মকর্তারা।

কর্মক্ষেত্র হিসেবে পুলিশে নারী সদস্যদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্য ‘কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও যৌন নির্যাতন বন্ধে নীতিমালা ও কর্মপন্থা ২০২১’ গ্রহণ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার ভিত্তিতে পুলিশ সদর দফতরের গাইড লাইন্স অনুসরণ করে সব বিভাগে নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে এ নীতিমালা ও কর্মপন্থা প্রণয়ন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাংলদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২২
পিএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।