ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুকে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২২
বঙ্গবন্ধুকে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ফাইল ছবি

ঢাকা: বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের আগে ও পরে ছাত্রলীগের তৎকালীন কিছু নেতা বঙ্গবন্ধুকে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৭ মার্চের ভাষণের পর মানুষ হতাশ হয়েছে বলে বঙ্গবন্ধুর কাছে তারা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ উপলক্ষে সোমবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা জানান দলটির সভাপতি। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হন।

৭ মার্চের ভাষণের সময়কার স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, তখন অনেকেই অনেক কথা বলেছিল। আমার মা বলেছিলেন, তোমার মনে যেটা আসে সেই কথাটাই তুমি বলবে। আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছে আমাদের সাথেই রাজনীতি করে, ছাত্রলীগে তাদের কিছু কিছু ছিল এরকম—এই মুহূর্তে স্বাধীনতার ঘোষণা করতে হবে, তা না হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। অনেকে আসছে কাগজ দিয়ে যাচ্ছে ভাষণে কী বলতে হবে, সে কাগজ বস্তা, বস্তা। আগের দিন সন্ধ্যার সময় সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক আরও কয়েকজন ছাত্রনেতা, আমার মনে আছে সিরাজুল আলম খান বলেছে—লিডার কাল কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু কিছু বলেননি, তিনি হাসলেন। ভাষণের দিন আমি, রেহানাও গিয়েছিলাম, মিটিংয়ে কিছু সময় ঘুরলাম। এরপর এসে মঞ্চের ঠিক কোণায় দাঁড়ালাম। ভাষণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের যে উচ্ছ্বাসটা আমার মনে আছে, যেন তারা যা চাচ্ছিল তা পেয়ে গেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষণ দিয়ে তিনি যখন ফিরে আসলেন, পিছু পিছু আমরাও আসি। মানুষ খুশিতে টগবগ করছে। আমরা শহীদ মিনারের সামনে দিয়ে চলে আসছিলাম, গাড়ি থামিয়ে নেমে সবাই স্লোগান দিলাম। এরপর নিউমার্কেটের সামনে দিয়ে বাসায় ফিরলাম। বাসায় ফিরে দেখি, এটাই গুরুত্বপূর্ণ। দেখি সেই সিরাজুল আলম খানসহ কয়েকজন নেতা, তারা আগেই চলে এসেছেন। এসেই বলছে—লিডার এটা কী হলো, সব মানুষ তো হতাশ হয়ে চলে গেছে! তারা যা চাচ্ছিল তা হয় নাই। শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল, আমি বললাম যে, আপনারা মিথ্যা কথা বলেন কেন? আমি সোজা আব্বাকে বললাম, ওনাদের কথা বিশ্বাস করবেন না, সব মিথ্যা কথা বলছে। আমি নিজে ছিলাম মাঠে, আমি দেখে আসলাম। আমার গাড়ি থামিয়ে সবাই স্লোগান দিচ্ছে, যা চেয়েছিল তা পেয়ে গেছে সবাই। মানুষ খুশিতে লাফাতে লাফাতে যাচ্ছে, হতাশটা কখন হলো?

আমি বললাম—মিথ্যা কথা বলেন কেন? যদিও আমি ছাত্রলীগের একজন কর্মী, তারা আমার নেতা। কিন্তু তাদের মুখের ওপর কথা বলতে আমার কোনো দ্বিধা ছিল না। কারণ সবসময় আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে ছিলাম। প্রতিটা আন্দোলন, প্রতিটা মিছিলে আমি ছিলাম। আমি ওখানেই বললাম—আব্বা আপনি এ কথা বিশ্বাস করবেন না, এরা সব মিথ্যা কথা বলছে। আমি বললাম—কী ব্যাপার, আপনারা চাচ্ছেন সেটা হলো না, তাই আপনারা হতাশ, বাঙালি কিন্তু হতাশ না। আপনাদের ধারণা ভুল, আমার ওপর একটু রাগই করে গেল মনে হলো। যা হোক এটা হলো বাস্তব কথা। ওইটাই সন্দেহ হয়, কেন সেদিন তারা এ কথা বলল? আপনারা জানেন কেউ যদি এককভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা দেয় তার পরিণতিটা কী হবে। তা অর্জন করতে হলে ধৈর্য ধরে প্রতি পদে পদে পদক্ষেপ নিয়ে এগোতে হয় এবং তিনি সেটাই করেছিলেন। যে জন্য আমাদের সফলতা এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ করবে তার কিছু কিছু বোঝা যাচ্ছে। তখন আমাদের কিছু নেতা—ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম, সিরাজুল আলম খান। একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করলাম যে কয়জন নেতা এসব কথা বললেন, তারা কিন্তু পরে আর আওয়ামী লীগে থাকেননি। ওবায়দুর রহমান তো খুবই খুশি যে, এই আমরা তো সরকার গঠন করছি। ৩২ নম্বরের বাসায় বললেন, খুব খুশি। পিছন থেকে আমি বললাম মিলিটারি আসছে, এমন পিটানি দিবে যে, আর সরকার গঠন করা লাগবে না। এটা বলে চলে গেলাম। ওনাদের এই রকম একটা স্থূল চিন্তা নিয়েই তারা ছিলেন। অথবা কোনো এজেন্সি নিয়ে ছিলেন, এখন মাঝে মাঝে আমি চিন্তা করি, মনে হয় এগুলো বুঝি এজেন্সি নিয়েই ছিলেন। তাদের আচরণে পরবর্তীতে তো সেটাই মনে হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২২
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।