ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এসিড নিক্ষেপের ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে গফফার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১০ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২২
এসিড নিক্ষেপের ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে গফফার

ঢাকা: আবু জার গিফারী গাফফার (৩৫) কুষ্টিয়া ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে এলএলবি ও এলএলএম শেষ করেছেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

নিজের আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তার করে রাখতেন কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে। স্কুল কলেজের মেয়ে শিক্ষার্থীদের ইভটিজিং ও উত্যক্ত করতেন।

সম্প্রতি ২০১৯ সাল থেকে শৈলকূপায় এলাকায় এক স্কুল পড়ুয়া এক মেয়ে শিক্ষার্থীকে দেখে তার পছন্দ হয়। সেই সময় থেকে ওই শিক্ষার্থীকে প্রায় ইভটিজিং করতেন গাফফার। একপর্যায় শিক্ষার্থীর পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন সে। তবে শিক্ষার্থীর পরিবার তাতে রাজি হয়নি।

এতেই ঘটে বিপত্তি। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এসএসসি পাশ করে ঝিনাইদহে একটি কলেজে ভর্তি হয়। গফফারের ভয়ে বাড়ি থেকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বের হতে পারতেন না।

এরমধ্যে ৫ মার্চ বিকেলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার এক সহপাঠী প্রাইভেট শেষে রিক্সাযোগে বাসায় ফিরছিলেন। এমন সময় গাফফার তার বেশ কয়েকজন সহযোগী ঝিনাইদহ থানার শৈলকূপার একটি রাস্তা থেকে ঐ শিক্ষার্থীকে মাইক্রোবাস যোগে অপহরণ করে গফফার। এসময় ভুক্তভোগীকে এসিড নিক্ষেপ ও ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখান।

এই ঘটনায় পরদিন ৬ মার্চ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা (নম্বর-১০) দায়ের করেন।  

এরপর টানা ৩০ ঘণ্টার মধ্যে মঙ্গলবার (০৭ মার্চ) ভোরে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-৪ ও র‌্যাব-৬ এর যৌথ অভিযানে মানিকগঞ্জ সদর এলাকা থেকে অপহৃত শিক্ষার্থীকে উদ্ধারসহ মামলার প্রধান আসামি ও মূল পরিকল্পনাকারী আবু জার গিফারী গাফফার (৩৫), তার সহযোগী সাব্বির হোসেন (২২) ও হাফিজুর রহমানকে (৪৬) গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে তাদের কাছ থেকে ১ কৌটা এসিড সদৃশ্য বস্তু , ৩টি দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করে র‌্যাব।

মঙ্গলবার (০৭ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামিরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে অপহরণের বিষয়টি স্বীকার করেছে। গ্রেফতার আসামি আইন পেশায় নিয়োজিত হয়েও সে আইনকে কুলশিত করেছে।

ভুক্তভোগী প্রসঙ্গে খন্দকার আল মামুন বলেন, অপহৃত শিক্ষার্থী অত্যন্ত মেধাবী। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে টেলেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। পরবর্তীতে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন-৫ পায়। যখন তিনি যশোর বোর্ডের মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে। ২০১৯ সাল থেকে গ্রেফতার গাফফার মেয়েটিকে ইভটিজিং ও ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়রানি করত। মেয়েটি গাফফারের যন্ত্রণায় প্রাইভেট ও স্কুলে যেতে পারত না। একটা সময় মেয়েটির বাবা নিজে ও মেয়ের বান্ধবীদের সঙ্গে স্কুল-প্রাইভেটে যেতেন।

তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর আসামি গফফার জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ভুক্তভোগী এসএসসিতে খুব ভালো ফলাফল করায় গাফফার ধারণা করেন যে, সে (ভুক্তভোগী) তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। মূলত এই কারণেই সে মেয়েটিকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। ঘটনার দুইদিন আগে ঝিনাইদহ কোর্ট সংলগ্ন এলাকায় গাফফার তার সমমনাদের নিয়ে অপহরণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক ভুক্তভোগীকে প্রাইভেট পড়া থেকে বাসায় যাওয়ার পথে রাস্তা থেকে অপহরণ করে। অপহরণ পরবর্তী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য সে ভুক্তভোগীকে প্রথমে রাজবাড়ীতে তার এক নিকট আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে তার দু’জন সহযোগীকে পরিবর্তন করে নতুন দু’জন সহযোগীসহ ভুক্তভোগীকে ঢাকায় নিয়ে আসে। সেখানে আশ্রয় না পেয়ে মাইক্রোবাসযোগে চলে যায় সিলেটে।

জিজ্ঞাসাবাদে আসামি আরও জানায়, সিলেটে তাদের অবস্থান সম্পর্কে মেয়েটির পরিবার জেনে যাওয়ায় সেখান থেকে দ্রুত মেয়েটিকে নিয়ে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওনা করে গফফার। এরমধ্যে গাফফার মেয়েটিকে এসিড দিয়ে ঝলসে দেওয়ার হুমকি ও দেশিয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। যাতে কোনো ধরনের চিৎকার চেঁচামেচি না করে। এরপর মানিকগঞ্জ থেকে র‌্যাব ভুক্তভোগীকে উদ্ধার ও আসামিদের গ্রেফতার করে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার গাফফারের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহের বিভিন্ন থানায় নানা অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে।

মেয়েটিকে অপহরণ করে চারটি জেলায় ৩০ ঘণ্টা ঘোরানোর পরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন তাদেরকে ধরতে পারলো না? এমন প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার মঈন বলেন, অপহরণের পর মামলা কিংবা কোন অভিযোগ না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরবর্তীতে মামলার পর র‍্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে অভিযান চালিয়ে অপহৃত মেয়েটিকে উদ্ধার ও অপহরণ চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রফেতার করতে সক্ষম হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২২
এসজেএ/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।