ঢাকা, সোমবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৭ বছর ধরে ২ হাত বাঁধা বৃষ্টির!

আব্দুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৪ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০২২
৭ বছর ধরে ২ হাত বাঁধা বৃষ্টির! ঘরের খুঁটিতে বাঁধা বৃষ্টির দুই হাত।

নেত্রকোনা: এই বয়সে অন্য শিশুদের মতো প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া বা দুষ্টুমি আর কত খেলায় ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস সাতটি বছর ধরে দুই হাত বাঁধা মানসিক ভারসাম্যহীন শিশু জান্নাতুল বৃষ্টির।

অর্থ ও সু-চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে মেয়েটি।

হতভাগী বৃষ্টি নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌরসভার দশাল এলাকার দিনমজুর শাহজাহান মিয়ার মেয়ে।  তাকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে তার পরিবারটিও। অর্থ  ও সু-চিকিৎসা করাতে না পেরে এভাবে হাত বেঁধে রেখেছেন তার বাবা-মা।  

দিনে বাড়ির পাশে স্বজনের বারান্দায় আর রাতে নিজ ঘরের বাঁশের সঙ্গে দুই হাত বাঁধা অবস্থায় দিন-রাত কাটাছে সাত বছরের শিশু বৃষ্টির। শিশুটির চিকিৎসার জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারসহ এলাকাবাসী।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৬ জুন একজন ধাত্রীর মাধ্যমে বৃষ্টির জন্ম হয়। এরপর শিশুটির সাড়াশব্দ না থাকায় তাকে দুর্গাপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার দুইদিন পর শিশুটির সাড়াশব্দ আসে। এরপর এক বছর বয়স থেকেই শিশুটি অস্বাভাবিক আচরণ শুরু হয়। তাকে ছেড়ে দিলে নিজেই নিজের মাথায় আঘাত করা শুরু করে বা হাত কামড়াতে থাকে। যেদিকে খুশি চলে যেতে চায়। অন্যকে মারধর করে। পরে প্রতিবেশীদের কথা শুনে বৃষ্টিকে কবিরাজের কাছে নিয়ে যায় তার পরিবার। কিন্ত সেখানে গিয়েও কেনো লাভ হয়নি। এরপর থেকে শিশু বৃষ্টির দু’হাত বেঁধে রাখে তার বাবা-মা। রাতে সে ঘুমায় না, চিৎকার করে। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিলে তারা উন্নত চিকিৎসার করাতে বলে। দিনমজুর বাবার পক্ষে আজও পর্যন্ত উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। তাই পরিবার বাধ্য হয়ে তার দুই হাত বেঁধে রাখছে। কারণ তাকে ছেড়ে দিলে সে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে।

সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে বৃষ্টির নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড হয়েছে। কিন্তু জোটেনি অন্য কোনো সহায়তা।

বৃষ্টির মা আয়েশা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি এই মেয়েটাকে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। কোন দিন রাতে ঘুমাই আবার রাত মেয়ের জন্য জেগে থাকি। মা হিসেবে নিজের মেয়েকে এভাবে বেঁধে রাখতে কষ্ট হয়। যদি সমাজের বিত্তবানরা আমার মেয়েটার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে সে সুস্থ হয়ে যেতো। ’ 

বৃষ্টির বাবা দিনমজুর শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে মধ্যে বৃষ্টি বড়। ছোট একটি টিনের ঘরে থাকি। সারাদিন রাজমিস্ত্রি কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খাই। তাকে ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানো আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না । মেয়েটিকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছি। যদি সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা আমাদের সহযোগিতা করতেন তাহলে হয়তো মেয়েটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতো। ’

প্রতিবেশী এমদাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘মেয়েটিকে নিয়ে তার মা-বাবা খুব কষ্টে দিন পার করছেন। অভাবের সংসারে মেয়ের উন্নত চিকিৎসা করানো তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।  সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি প্রতি অনুরোধ করবো মেয়েটির যেনো উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে।  

দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. তানজিরুল ইসলাম রায়হান বাংলানিউজকে বলেন, শিশুটির বাসায় গিয়ে আমি তাকে দেখেছি। তার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের এখানে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সেটি দিয়ে এ ধরনের পরীক্ষা করানো সম্ভব না। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিউরোসায়েয়েন্সস ইনস্টিটিউট নিয়ে গেয়ে মস্তিষ্ক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে হয়তো প্রকৃত কারণটা জানা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।