ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

টাকার জন্য সন্তানদের মারধর, সেই ভিডিও পাঠাতেন প্রবাসী স্ত্রীর কাছে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২২
টাকার জন্য সন্তানদের মারধর, সেই ভিডিও পাঠাতেন প্রবাসী স্ত্রীর কাছে

নরসিংদী: নরসিংদীর রায়পুরায় প্রবাসী স্ত্রী স্বামীর কাছে টাকা পাঠাতে দেরি করায় দুই সন্তানের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালান পাষণ্ড পিতা আল আমিন (৩২)। এসময় শিশু দুটিকে ফাঁসিরও হুমকি দেয়া হয়।

সেই ঘটনার ধারণকৃত একাধিক ভিডিও ফুটেজ মো. ফাহিম নামে এক ফেসবুক আইডি থেকে ছাড়ার পর তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। এ ঘটনাটি উপজেলার চান্দেরকান্দি ইউনিয়নের শ্রীনিধি এলাকার।

এদিকে ভাইরাল ভিডিওটি গোয়েন্দা পুলিশের নজরে এলে বৃহস্পতিবার (০৩ মার্চ) সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে রায়পুরার শ্রীনিধি রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে দুই শিশু সন্তানসহ আল আমিনকে আটক করে। আটকের পর তাদের নরসিংদী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। সেখানে মুন্না ও মুন্নী নামে ওই শিশুকে নতুন পোশাক প্রদান করেন নরসিংদীর পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম।

অভিযুক্ত আল আমিন উপজেলার চান্দেরকান্দি ইউনিয়নের শ্রীনিধি বাজার এলাকার মৃত সাহবুদ্দিন মিয়ার ছেলে।

জানা যায়, আল আমিন সাত বছর আগে একই ইউনিয়নের ধাইরেরপাড় এলাকার মোজাম্মেল হকের মেয়ে সাকিনা বেগমকে ভালবেসে বিয়ে করেন। সাকিনার এটি ছিল তৃতীয় বিয়ে। দ্বিতীয় স্বামীর সংসারে জন্ম মুন্না নামে এক ছেলেকে নিয়ে আল আমিনকে বিয়ে করেন তিনি। পরে ওই দম্পতির মুন্নি নামে এক কন্যার জন্ম হয়। দুই সন্তানদের মধ্যে মুন্নার বয়স সাত ও মুন্নির বয়স পাঁচ বছর। ছয় মাস আগে স্বামী সন্তান রেখে গৃহকর্মী ভিসায় সৌদিতে পাড়ি জামান সাকিনা। এরপর থেকে ওই দুই সন্তান আল আমিনের সঙ্গেই থাকছিলেন। এদিকে আল আমিন নিয়মিত গাঁজা, ইয়াবাসহ নানা মাদক সেবন করেন। মাদকের টাকা না পাঠালেই দুই শিশুকে মারধর করে সেই ভিডিও নিজেই ধারণ করে পাঠান স্ত্রীকে। পরে ওই ভিডিওগুলো প্রবাসী সাকিনা তার মামা মো. ফাহিমের কাছে পাঠান। ফাহিম তার ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওগুলো আপলোড দেন। পরে মুহূর্তেই ভাইরাল হয় শিশু নির্যাতনের ভিডিও এবং নিন্দার ঝড় ওঠে। পরে ভাইরাল ভিডিওটি গোয়েন্দা পুলিশের নজরে এলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে রায়পুরার শ্রীনিধি রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে দুই শিশু সন্তানসহ আল আমিনকে আটক করে।

সাকিনা বেগম সাংবাদিকদের জানান, অভাবের তাড়নায় ও সন্তাদের উজ্জ্বল ভবিষতের কথা চিন্তা করে প্রবাসে এসেছি। প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে স্বামীর কাছে পাঠাই। এই মাসে টাকা পাঠাতে দেরি হওয়ায় সন্তানদের মারধর করেন তিনি। এ ঘটনায় স্বামীর শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।

চান্দেরকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন খন্দকার মিতুল বলেন, পরিবারটির সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ওই শিশুদের মা প্রবাসে থাকেন। তিনি নাকি নিয়মিত টাকা পাঠাতেন না। পরে টাকা আদায়ের জন্য ওই দুই শিশুর নির্যাতের ভিডিও স্ত্রীকে পাঠিয়ে ভয়ভীত দেখাতো আল আমিন। এটি খুবই নিন্দনীয় কাজ।
 
নরসিংদীর পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম বলেন, ভাইরাল ভিডিওটি আমাদের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাদের সন্ধান শুরু করি। পরে বাড়িতে গিয়ে তাদের না পেয়ে রেলস্টেশন এলাকা থেকে বাচ্চাসহ বাবাকে পাওয়া যায়। শিশু দুটির বাবা আল আমিন মাদকাসক্ত। সে স্ত্রীর সাথে কলহ ও মাদকের টাকার জন্য বাচ্চাদের নির্যাতন করেছে। শিশু দুটিকে প্রভেশন অফিসারের মাধ্যমে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর আল আমিনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।