ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্লাস্টিক সংগ্রহের প্রচারে নারায়ণগঞ্জে হাতে-হাত মিলিয়েছেন শত নারী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০১ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২২
প্লাস্টিক সংগ্রহের প্রচারে নারায়ণগঞ্জে হাতে-হাত মিলিয়েছেন শত নারী

ঢাকা: পৃথিবী ও পরিবেশের সুরক্ষায় প্লাস্টিক সংগ্রহ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে (এনসিসি) ১০০ বেশি নারীর অংশগ্রহণে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ‘টেকসই উন্নয়নে নারী এই স্লোগানকে সামনে রেখে এ ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়।

দিনব্যাপী এই ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য ছিল প্লাস্টিক সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা ও নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা। এই কর্মসূচির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল নগরীতে ব্যবহৃত প্লাস্টিক সংগ্রহ কার্যক্রম, সচেতনতামূলক আলোচনা, বাড়ি বাড়ি যাওয়া গিয়ে সচেতনতা তৈরি, প্লাস্টিক আবর্জনার স্তুপ পরিদর্শন, নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সম্মাননা প্রদান ইত্যাদি।

‘গ্লো অ্যান্ড লাভলী’র সহায়তায় মঙ্গলবার (২ মার্চ) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইউনিলিভার বাংলাদেশ, ইউএনডিপি বাংলাদেশ এবং ইকো সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন।

এদিন ১০০ বেশি নারী শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে দিনটি শুরু করেন। তারা ইউনিলিভারের নারী ম্যানেজার, ইউএনডিপির নারী ও পুরুষ স্টাফ, কমিউনিটি লিডার ও এনসিসির নারী পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করেন। এই নারীরা ১০টি দলে বিভক্ত হয়ে শহরের প্রধান শহরে পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বপালন করেন। এনসিসির প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে নারী কর্মীদের অবদান ফুটে উঠেছে প্রতীকী এই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে। এক ঘণ্টার পরিচ্ছন্নতা অভিযানের পর আলী আহমেদ চুনকা অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এনসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এনসিসির মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। আরো উপস্থিত ছিলেন ইউনিলিভার বাংলাদেশ এর করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপস অ্যান্ড কমিউনিকেশনের প্রধান শামীমা আক্তার, প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক সাকসী হান্ডা, ইউএনডিপি বাংলাদেশের লাইভলিহুডস ইমপ্রুভমেন্ট অফ আরবান পুওর কমিউনিটি প্রজেক্ট (এলআইইউপিসিপি) প্রকল্প ব্যবস্থাপক যুগেশ প্রধানাং।

কমিউনিটি লিডার ও নারী কাউন্সিলরদের আলোচনার মধ্য দিয়ে এ দিনের সেশন শুরু হয়। এনসিসিকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত করা এবং শহরের সবুজায়ন ও আরও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরিতে ইউনিলিভার এবং ইউএনডিপির এই সময়োপযোগী ক্যাম্পেইনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করায় মেয়রের প্রতি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এসময় শহরের পরিবেশ দূষণ এড়াতে প্লাস্টিক সংগ্রহে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের অবদানকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করেন অধিবেশনের আলোচকরা।

মেয়র সেলিনা হায়াৎ বলেন, আমরা সবাই ক্ষমতাশালী নারী এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের আরও সাহসী, আত্মবিশ্বাসী ও দূরদর্শী হওয়া প্রয়োজন। শহরের প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কারে এমন অনুপ্রেরণামূলক উদ্যোগে নারীদের এগিয়ে আসাকে স্বাগত জানাই। ইউনিলিভার ও ইউএনডিপির প্লাস্টিক সংগ্রহের এমন উদ্যোগ অনন্য এবং আমি বিশ্বাস করি এনসিসির জন্য প্লাস্টিক সংগ্রহের টেকসই এই প্রকল্প অনুসরণীয় হবে। যা শুধু উদাহরণ হয়েই থাকবে না একইসঙ্গে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মডেল হিসেবে অনুসরণ করতে আগ্রহী হবে নগর কর্তৃপক্ষ।

ইউনিলিভারের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপস অ্যান্ড কমিউনিকেশনের প্রধান শামীমা আক্তার বলেন, পৃথিবীর সুরক্ষায় আমাদের দায়বদ্ধতা সমূহের মধ্যে রয়েছে, আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ আমাদের কারণে উৎপন্ন হওয়া প্লাস্টিক বর্জ্যের চেয়ে বেশি পরিমাণ প্লাস্টিক সংগ্রহ করা। এনসিসি ও অন্যান্য শহরে সিঙ্গেল-ইউজ প্লাস্টিক বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে দেখা দেওয়ায় তা সংগ্রহের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ইউনিলিভার এই ব্যতিক্রমী প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এনসিসিতে প্লাস্টিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা একটি গতিশীল ভ্যালু চেইন ও সার্কুলারিটি তৈরি করতে চাই। প্লাস্টিক সংগ্রহ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে ও নারীদের সক্ষমতা কাজে লাগানোর জন্য আমরা আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে বেছে নিয়েছি কারণ আমরা সুন্দর আগামীর জন্য বৈচিত্র্যতায় বিশ্বাসী এবং প্লাস্টিক দূষণ রোধে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই।

ইউনিলিভার বাংলাদেশের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক সাকসী হান্ডা বলেন, গর্বের সঙ্গে জানাচ্ছি আমাদের প্রতিষ্ঠানে নারী ম্যানেজার ৪১ শতাংশ, যা দেশের সব খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ। ইউনিলিভার বিশ্বাস করে বৈচিত্র্যময় কর্মীরা অকল্পনীয়, অসম্ভব ও ভাবনার অতীত বিষয়কেও বাস্তবে রূপ দিতে পারেন। আমরা ভাবনা, লৈঙ্গিকতা, সক্ষমতা, বয়স, জাতিগত, সামাজিক-সাংস্কৃতি পরিমণ্ডলে বৈচিত্র্যতায় বিশ্বাস করি। ইউনিলিভার নারীদের পাওয়ার হাউজ হিসেবে পরিচিত এবং এখন সময় কমিউনিটিতে তা ফিরিয়ে দেয়া এবং আমাদের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো প্লাস্টিক সাসটেইনেবিলিটি মতো জটিল সময়ে প্রয়োগ করা। অনন্য সহযোগিতা, নির্দেশনা ও সহযোগিতার জন্য মেয়র মহোদয়কে ইউনিলিভার ধন্যবাদ জানাচ্ছে।

ইউএনডিপি বাংলাদেশের এলআইইউপিসিপি, প্রজেক্ট ম্যানেজার যুগেশ প্রধানাং বলেন, ইউনিলিভার ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে কাজ করছে, যেটি শুধু প্লাস্টিক বর্জ্য কমিয়ে আনা ও পু্নঃব্যবহার নিশ্চিত নয়, একইসঙ্গে টেকসই জীবনমান নিশ্চিত করবে, সহনশীলতা বাড়াবে ও প্লাস্টিক সংগ্রাহকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। আমরা নারায়ণগঞ্জে একটি সফল প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মডেল তৈরি করতে চাই, যেটি অন্যদের জন্য উদাহরণ তৈরি করবে।

ইউনিলিভারের একাগ্র ও ক্ষমতাসীন নারী কর্মীরা প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে লিফলেট বিতরণ করেন, যাতে কর্মীরা আরো বেশি প্লাস্টিক সংগ্রহ করতে পারেন। এই প্রকল্পটি ইউনিলিভারের প্লাস্টিক সংগ্রহের দায়বদ্ধতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সরব পদচারণা ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২২
এমআইএইচ/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।