ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘আমার স্বামীর জমিটুকু উদ্ধার করে দিন’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২২
‘আমার স্বামীর জমিটুকু উদ্ধার করে দিন’ বিধবা হাসিনা বানু

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা দেবীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুর ইসলামের বিরুদ্ধে হাসিনা বানু নামে এক বিধবা নারীর জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। বিধবা হাসিনা বানুর স্বামীর রেখে যাওয়া ২০ শতক জমি জবর দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (০১ মার্চ) দেবীপুর ইউনিয়নের রঙ্গিয়ানী বাজারে গেলে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে মাটিতে গড়াগড়ি করে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বিধবা হাসিনা বানু এমন অভিযোগ করেন।

বিধবা হাসিনা বলেন, আমার স্বামী পাগল ছিলেন। আতিয়া পাগলা নামে তাকে সবাই চেনে। তার কোনো স্বাভাবিক জ্ঞান ছিলনা। আমি আমার স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়নের রঙ্গিয়ানী বাজারে আমার শ্বশুরের মালিকানা জমিতে বসবাস করছি।  

গত বছর আমার স্বামী মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। আমি মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছি। আমার স্বামী মারা যাওয়ার এক মাস পর হঠাৎ চেয়ারম্যানের নির্দেশে জাহাঙ্গীর ও তার গুণ্ড-পাণ্ডারা এসে আমাকে এই জমি থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে। আমরা না যাওয়াতে সম্প্রতি দেড় দুই মাস আগে আবার তারা রাতের আঁধারে এসে আমাকে মাটিতে ফেলে লাথি মারা শুরু করে। আর আমার দুই ছেলেকে বেঁধে গলায় ছুরি ঠেকিয়ে দিয়ে বলে আজ রাতের মধ্যে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে। তারা দাবি করে এই জমি নাকি আমার স্বামী চেয়ারম্যানের কাছে বিক্রি করেছে। আমি এর কিছুই জানিনা। আমি খুব অসহায়। আমার চোখের সামনে আমার শেষ সম্বল স্বামীর জমিটুকু দখল করে ইটের প্রাচীর দিচ্ছে চেয়ারম্যান। সমাজের সবার পায়ে ধরে বলি আমার স্বামীর জমিটুকু উদ্ধার করে দিন।

বিধবার ছেলে হকিকুল ইসলাম বলেন, সেদিন রাত ছিল খুব ভয়ঙ্কর। আমাদের সবাইকে মারধর করে আমাদের উচ্ছেদ করে দিয়েছে সাবেক চেয়ারম্যানের লোকজন। আমাদের গলায় ছুরি ঠেকিয়ে দিয়ে আমার জমি দখল নিয়েছে তারা। চেয়ারম্যান যদি আমার বাবার কাছে জমি কিনেই থাকে তাহলে আমার বাবা মারা যাওয়ার আগে আসেনি কেন? তারপরেও চেয়ারম্যান শুধু ১২ শতক জমি ক্রয় দেখাচ্ছে কিন্তু তিনি ২০ শতক জমি জবর দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে। আমরা খুব অসহায়, আমাদের সহায়তা করুন। এর আগে, তারা আপোষ করার নামে আমাকে ধমক ও ভয় দেখিয়ে একটি আপোষ নামাতে সই করিয়ে নিয়েছে।

সেদিনের রাতের ঘটনার বর্ণনা করেন স্থানীয় দোকানদার আবু বক্কর সিদ্দীক বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে আতিয়া পাগলাসহ তার পরিবারকে এখানে বসবাস করতে দেখেছি। হঠাৎ রাতের অন্ধকারে তাদের মারধর করে জমি দখল করা হয়েছে। পরিবারটি খুব অসহায় প্রতিবাদ করার মানুষ নেই।

স্থানীয় সাবিরুল ইসলাম বলেন, কিভাবে চেয়ারম্যান জমির মালিকানা দাবি করছে আমি জানিনা। আতিয়া পাগলা যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন এসব কথা শোনা যায়নি। সে মারা যাওয়ার এক মাস পর থেকে তাদের এসব ঝামেলা। এটার নিষ্পত্তি হওয়া দরকার।

বিধবা মহিলার স্বামী আতিয়া পাগলার বন্ধু মোহম্মদ বাসের বলেন, এখানে যে স্থাপনাটি নির্মাণ হচ্ছে সেটি পুরোপুরি অবৈধ। কিন্তু সমাজে এসব প্রতিবাদ করার মানুষ নেই। সাবেক চেয়ারম্যান আবার আওয়ামী লীগ নেতা। তার প্রভাবে আমরা কোনো কিছু বলার সাহস পাইনা। প্রতিবাদ করে কি হবে? আমরা গরীব মানুষ।

অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম এ বিষয়ে কোনো কথা সাংবাদিকদের বলতে রাজি হননি। তিনি শুধু বলেছেন যা জানার সাবেক চেয়ারম্যান নূর ইসলামের কাছে জেনে নিন।

সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নূর ইসলাম বলেন, আমি ২০১০ সালে ওই বিধবা নারীর জমি ক্রয় করেছি। আমার কাছে কাগজ আছে। আতিয়া পাগলার বড় ছেলে নাসিরুল তখন উপস্থিত ছিলেন। রাতের অন্ধকারে মারধর করে জমি দখলের বিষয়টি তিনি এড়িযে যান এবং বলেন জমিতে একটা পুকুর ছিল আমি কেনার পর থেকে সেখানে মাছ চাষ করে আসছি।

এ বিষয়ে বিধবা হাসিনা বানুর ছেলে হকিকুল ইসলাম সদর থানায় একটি অভিযোগ পত্র দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থালে একাধিক অফিসারকে পাঠানো হয়েছে। পরিবারটিকে আদালতে বিচার চাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।