ঢাকা, বুধবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন ইউপি সদস্য 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২২
সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন ইউপি সদস্য  যুবলীগ নেতা আমির হোসেন জয় ও ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীল আলম

সাভার (ঢাকা): সাভারের আশুলিয়ায় ডিস ব্যবসার তার কাটাকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতা আমির হোসেন জয় ওরফে মুরগি আমিরের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালায় তার সর্মথক ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা। পরে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে জয়ের বাড়িতে হামলা করলে স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীল আলম ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীকে শান্ত ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

 

পৃথক এ ঘটনায় দুই পক্ষেরই প্রায় ২৫ জনের মত আহত হয়েছে। এদের মধ্যে এলাকাবাসী দুইজন আইসিউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এ ঘটনায় আমির হোসেন জয়ের পক্ষ থেকে একটি মামলা হলেও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে কোনো মামলা হয়নি। এলাকাবাসী থানায় মামলা করতে গেলে শুধু অভিযোগ নিয়েই তাদের ফেরত দেওয়া হয়। উল্টো ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম সমাধান করে শৃঙ্খলা ফেরাতে গেলে তাকে মামলার দ্বিতীয় আসামি করে আমির হোসেন জয়।  

জানা গেছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আশুলিয়ার শিমুলিয়ার গোহাইল বাড়ীর রনস্থল এলাকায় হঠাৎ করে নুরুল ইসলাম (নূরে খাঁ), আমির হোসেন জয়, সামান খাঁ, শামসুল খাঁ, আল-আমিন, মো. শামীম, তমছে ও আমজাদ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কোনো কারণ ছাড়ায় নুর হোসেন ও আলাউদ্দিনের ওপর হামলা করে। এলাকাবাসী তাদের আটকাতে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালায় এই সন্ত্রাসী দল। এতে প্রায় ১৫ জনের মত আহত হয়। পরে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে জয়ের বাড়িতে গেলে দুপক্ষের মধ্যে সংর্ঘষ হয়। এতে জয়ের বাবা ও মাসহ পরিবারের কয়েকজন আহত হয়।  

আরও জানা গেছে, সংর্ঘষের বিষয়টি স্থানীয় ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলমকে জানানো হলে তিনি একটি বিচার থেকে তার সঙ্গে থাকা সেই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতিকে নিয়ে বিষয়টির সমাধান করতে যান। পরে জাহাঙ্গীর আলমের কথায় এলাকাবাসী চলে যায়। তবে জয়ের পরিবার বিষয়টি নিয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন যেখানে ইউপি সদস্যের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।  

ঘটনার দুই দিন পর সোমরার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সেই এলাকায় ঘটনাটির বিস্তারিত ও পেছনের তথ্য জানতে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে যায় বাংলানিউজের প্রতিবেদক। এসময় কথা হয় শিমুলিয়া ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি আমির হোসেন জয় ও শিমুলিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের পরিবার নিয়ে। জানতে চেষ্টা করা হয় কেনো এলাকাবাসীর সঙ্গে এই সংর্ঘষ।  

স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে জানা গেছে, তাদের এলাকায় ডিসের ব্যবসা করে দুই ব্যক্তি একজন কাজল ও আরেকজন জয়ের চাচা সামান খাঁ। মূলত দুই দিন আগে সামান খাঁর ডিসের লাইনের তার কে বা কারা কেটে নিয়ে যায়। সেই অভিযোগে হঠাৎ জয়বাহিনী এলাকার সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করে। পরে এলাকার লোকজন বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বাড়িতে হামলা করে।  

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যুবলীগের পদ পাওয়ার পর থেকেই জয়ের পরিবার আমাদের এলাকায় ত্রাসের রাজ্য কায়েম করার চেষ্টা করে। এলাকায় কোনা বাড়ি করতে হলে তার পরিবারের লোকজনের দেওয়া দোকান থেকে কাঁচামাল কিনতে হয়। তা না কিনলে কাজ বন্ধ করে দেয়। এছাড়া অটোরিকশার চালকদের কাছ থেকে প্রতিদিন ও প্রতি মাসে চাঁদা নেয় তারা। গত নির্বাচনে জয় তাদের মনোনীত মেম্বারকে নির্বাচিত করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের এই ষড়যন্ত্র ভেদ করে জনগণের ভোটে জাহাঙ্গীর আলম ইউপি সদস্য হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জয়ের পরিবারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় জাহাঙ্গীর ও এলাকাবাসীর। শেষমেশ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জয় তাদের সন্ত্রাসবাহিনী নিয়ে এলাকাবাসীর ওপর হামলা চালায়। সেটার প্রতিবাদ করতে গেলে এলাকাবাসীর সঙ্গে সংর্ঘষ বেধে যায়।

২৬ ফেব্রুয়ারি ঘটনার দিন রনস্থল এলাকার দোকানে বসে ছিলেন আবু তালেব। তিনি মারামারির প্রথম অংশটুকু দেখেছেন। তার থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি দোকানেই বসে ছিলাম। হঠাৎ করে জয় ও তার চাচারাসহ ১১ জন লোক ভ্যানে বসে থাকা এক জনের মারধর করতে থাকে। তাকে আটকাতে আরও কয়েকজন এলে তাদেরও কুপিয়ে জখম করে। পরে তারা সবাই চলে যায়।  

এ বিষয়ে ভুক্তোভোগী ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কিছুদিন আগে কে বা কারা জয়ের চাচার ডিসের লাইনের তার কেটে দেয়। আমি কিংবা আমার পরিবারের কেউ এই ডিস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত না। কিন্তু নির্বাচনকালীন শত্রুতার জেরে আমার বড় ভাই ও ভাতিজাসহ আরও কয়েকজনক এসে হঠাৎ মারধর করছে তারা। আমারে মারধর করে আবার আমারে মামলার দুই নম্বর আসামি করছে। আমিও অভিযোগ দিতে গেছি কিন্তু পুলিশ নেয় নাই। এখন গ্রেফতারের ভয়ে আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ঘটনার দিন আমি আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নে একটি বিচারে ছিলাম। সেখানে আমার কাছে খবর আসে এলাকায় ঝামেলা হয়েছে। পরে আমি দ্রুত আমার সঙ্গে থাকা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। উল্টো তারা আমার নামেই মামলা দিয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক।  

ঘটনার দিন জাহাঙ্গীরের সাথে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুল্লাহ বলেন, ঘটনার সময় আমি ও জাহাঙ্গীর সাহেব বিচারে ছিলাম। খবর পেয়ে দুইজনই সেখানে যাই। গিয়ে দুইজনে মিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। পরে শুনি মেম্বার বিষয়টি সমাধান করতে গেলে তাকেই ফাঁসানো হয়েছে।  

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আমির হোসেন জয় বলেন, ঝামেলা কোনো ডিস ব্যবসা নিয়ে নয়। ওই এলাকার মানুষের সঙ্গে আমাদের আগে থেকেই সমস্যা। এটা নিয়ে অনেক কিছু হয়েছে আগে। না আমি সেখানে যায়নি। ওদের এলাকা থেকে আমাদের এলাকা দুই কিলোমিটার দুরে। ওরা সবাই মিলে আমার বাড়িতে এসে হামলা চালায়। আমার বাবাকে ও মামাকে মারধর করেন। তারা এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।  

শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাহারুল ইসলাম সুরুজ বাংলানিউজকে বলেন, এই পরিবারটি এলাকাটা নষ্ট করে দিল। আসলে শুধু ডিস ব্যবসা নিয়া ঝগড়া না, বহুত কিছু। ওই গ্রুপটা (জয়ের গ্রুপ) পুরা সন্ত্রাসী। অরা আওয়ামী লীগও না, বিএনপিও না। অগোর কোনো ধর্মকর্ম নাই। এরা সব লাঠি দল করে। সকাল ১০টায় জয়রা তাগো উল্টা পাল্টা মাইরা থুইয়া আইছে শুনছি। এ্যার আগে ডিসের তার কাটা নিয়া বিএনপির আব্দুল হাইয়ের নামে মামলা করছিল জয়রা। এক নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জাহাঙ্গীর তো কোনো ব্যবসাও করে না।  

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) আব্দুর রাশিদ বলেন, 'মারামারির ঘটনায় গতকাল ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৪ জনকে। আমির হোসেন জয় মামলার বাদী। '

যুবলীগ নেতা জয় আগে হামলা চালিয়ে ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীরের ভাইসহ কয়েকজনকে আহত করেছে এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ কেন গ্রহণ করা হয়নি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'আমি তাদের অভিযোগ পাই নাই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২২
এসএফ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।