ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘শহীদ’ স্বীকৃতি মেলেনি ৫০ বছরেও

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৭ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২২
‘শহীদ’ স্বীকৃতি মেলেনি ৫০ বছরেও এবিএম মোসলেহ উদ্দীন ও আব্দুল জব্বার

যশোর: মহান মুক্তিযুদ্ধে যশোর শহরে পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে নিহত দুই সরকারি কর্মকর্তার ‘শহীদ’ স্বীকৃতি মেলেনি স্বাধীনতার ৫০ বছরেও। ফলে সরকারিভাবে কবরটি সংরক্ষণের উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।

শহরের লোন অফিস পাড়ার ‘লাহারাজ কাচারি বাড়ি’ নামক সরকারি কোয়ার্টারে শহীদ হন। পাশেই তাদের সমাহিত করা হয়। অযত্ন, অবহেলায় কবরের চিহ্নটুকু এখনও আছে। শহীদ স্বীকৃতি ও সরকারিভাবে কবর সংরক্ষণের জন্য তাদের সন্তানরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি দপ্তরে ঘুরছেন। কিন্তু আজও তাদের সেই দাবি পূরণ হয়নি।

জানা যায়, যশোর শহরের লোন অফিস পাড়ায় তৎকালীন ‘লাহারাজ কাচারী বাড়ি’ নামক সরকারি বাসভবনে বসবাসরত অবস্থায় ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন আকোয়ার্ড স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা (বর্তমানে ভূমি মন্ত্রণালয়) এবিএম মোসলেহ উদ্দীন ও কানুনগো আব্দুল জব্বার। শহীদের স্বীকৃতি ও সরকারিভাবে কবর সংরক্ষণের দাবিতে ২৫ বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঘুরছেন তাদের সন্তানরা।

২০১৯ সালের অক্টোবরে এবিএম মোসলেহ উদ্দীন ও আব্দুল জব্বারের সন্তানরা তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দুই শহীদের স্বীকৃতি ও সরকারিভাবে কবর সংরক্ষণের দাবি জানান। এরপর ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর যশোরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে তাদের কবর সংরক্ষণের অনুমতি চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠান। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী প্রধান হারুন অর রশিদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে জেলা প্রশাসককে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে শহীদ ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ওই দুই জনের নাম অর্ন্তভুক্ত নেই। ওই দুইজন সরকারি কর্মকর্তার কবর সংরক্ষণের জন্য স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
এরপর আর দুই শহীদের কবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এদিকে, যশোর শহরের লোন অফিস পাড়ার তৎকালীন ‘লাহারাজ কাচারী বাড়ি’ নামক সরকারি বাসভবনের জায়গায় বর্তমানে অ্যাডভোকেট মুনজুর অর রশীদ পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। সেখানে ১৩ শতক জমির মধ্যে কবরের জন্য এক শতক জমি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সংরক্ষণের অভাবে কবরটি ভঙ্গুর অবস্থায় পড়ে আছে। এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মুনজুর অর রশীদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেকেই মারা যান। সরকার তাদের কবর পাকা করে দিয়েছে। তাদের সন্তানরা যখন কবর জিয়ারত করতে আসেন তখন বাড়ির গেট খুলে দেওয়া হয়। যখন ইচ্ছা তখন তারা এখানে এসে কবর জিয়ারত করবেন। এতে কেউ বিঘ্ন সৃষ্টি করবে না।

প্রতিবেশী ও প্রত্যক্ষদর্শী কালেক্টরেটের কর্মচারী মরহুম দিদার বক্সের মেয়ে রিজিয়া খাতুন বলেন, বাবার মুখে সেই দিনের লোমহর্ষক ঘটনা বহুবার শুনেছি। দীর্ঘদিন ধরে দুই শহীদের কবর অযত্ন, অবহেলায় রয়েছে। দ্রুত সংরক্ষণে সরকারি উদ্যোগ দরকার।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ দুই পিতার স্বীকৃতি ও কবরস্থান সংরক্ষণের দাবিতে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঘুরছেন মোসলেহ উদ্দীনের ছেলে এমদাদ মোসলেম ও আব্দুল জব্বারের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম স্বপন। এমদাদ মোসলেম বর্তমানে খুলনা ও জাহাঙ্গীর পরিবার নিয়ে কুমিল্লায় বসবাস করছেন।

এমদাদ ও জাহাঙ্গীর বলেন, দীর্ঘদিনেও তাদের দাবি পূরণ হয়নি। বাবার জন্য তাদের কষ্টের শেষ নেই। কুমিল্লা ও খুলনা থেকে এসে বাবাকে স্মরণ করেন তাদের সন্তান ও আত্মীয় স্বজনরা। স্থানীয় মসজিদে দোয়ার আয়োজন করেন। তবে এ শহীদদের কবর সরকারিভাবে সংরক্ষণ করতে মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করে যাবেন বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখব কোন প্রক্রিয়ায় কবর সংরক্ষণ ও সম্মান জানানো যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, ২ মার্চ, ২০২২
ইউজি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।