ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ইচ্ছা শক্তি থাকলে শারীরিক প্রতিবন্ধীরাও সম্পদে পরিণত হয়

শরিফুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২২
ইচ্ছা শক্তি থাকলে শারীরিক প্রতিবন্ধীরাও সম্পদে পরিণত হয় আব্দুল করিম সাত্তার

ঠাকুরগাঁও: ইচ্ছা শক্তি থাকলে একজন মানুষের পক্ষে যেকোনো কাজই করা সম্ভব, সে হোক প্রতিবন্ধী আর তৃতীয় লিঙ্গ। যদি ইচ্ছা শক্তি ও পরিবারের সহযোগিতা থাকে তাহলে স্বপ্নপূরণ অবশ্যই নিশ্চিত।

 

দুই বছর বয়সে পোলিও জনিত সমস্যার কারণে ডান পায়ে সমস্যা দেখা দেয় আব্দুল করিম সাত্তারের৷ জীবন চলার পথে শুরুর সময়টাতে বড় ধাক্কা পেতে হয় তাকে৷ হাঁটতে পারা যেন তার জীবনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে হলে একা যেতে পারতেন না পরিবারের সহযোগিতা নিতে হতো। তবে মনের ইচ্ছে শক্তি ছিল নিজের পায়ে দাঁড়ানোর।  

রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল করিম সাত্তার৷ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ৩১তম বিসিএসে (প্রশাসন) সাফল্য অর্জন করে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে জয়েন করেন। যেখানে শারীরিক অক্ষমতা ও প্রতিবন্ধী মানুষদের জীবনে পথ চলাটা কঠিন হয়ে যায়। সেখানে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তিনি হয়েছেন একটি উপজেলার প্রধান৷ 

আব্দুল করিম বলেন, আমার প্রথমে ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করার। তবে শুধু ডাক্তারি পেশায় নয় অন্যান্য পেশায়ও মানুষের সেবা করার সুযোগ থাকে। বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে এখানে অনেক মানুষের সেবা করার সুযোগ পাই।

জীবনের প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সমাজের বোঝা নয় বরং সম্পদ হিসেবে নিজেকে তৈরি করে বর্তমানে তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা৷

তিনি বলেন, মাত্র দুই বছর বয়সে পোলিও আক্রান্ত হলে আমার ডান পায়ে সমস্যা দেখা দেয়। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা নেই। কিন্তু কোনো আশানুরূপ ফলাফল আসেনি।

চিকিৎসক বলেছেন এভাবেই ফিজিওথেরাপি নিয়ে যতটুকু ভাল থাকা যায়। ছোটবেলায় পরিবারের সহযোগিতায় কোথাও যাওয়া হতো৷ পরে ধীরে ধীরে পায়ে হাত রেখে চলার চেষ্টা করেছি৷ অনেকবার পরে গিয়েছি হাঁটতে হাটঁতে। ছোটবেলায় যখন স্কুলে যেতাম মাঝে মাঝে রাস্তায় পড়ে যেতাম আমার বই খাতা পানিতে পড়ে ভিজে যেত তখন আমার খুব মন খারাপ হতো। অনেকে দেখে অনেক কথা বলেছে। কিন্তু আমি তাদের কথায় কান না দিয়ে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যেতাম। স্কুলের প্রতিটি শিক্ষক আমাকে উৎসাহ দিতেন। তারা অন্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে আমাকে বেশি যত্ন নিতেন৷ তারা চেয়েছিলেন আমি ভালো কিছু একটা করি৷ 
আমি হাঁটাচলা করতে পারতাম না। সেই কারণে পরিবারের সদস্যরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ায় আমাকে সহযোগিতা করত। আমার মা-বাবা ও ভাই-বোনদের সহযোগিতা না থাকলে হয়তো আমার এই সফলতা ও স্বপ্ন পূরণ হতো না। প্রতিবন্ধী বলে কখনও বলতো না যে তোর দ্বারা কিছু হবে না৷ তাদের এই সমর্থনে আজকে আমি এতদূর।  

সমাজের মানুষ এখনও প্রতিবন্ধী মানুষদের আলাদা চোখে দেখে। কিছু মানুষ মানসিকভাবে সমর্থন দিলেও অধিকাংশ মানুষ আলাদাভাবে দেখত। তারা চাইতো আমি অন্য শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষদের মত করে জীবিকা নির্বাহ করি। অন্যের সহযোগিতা নিয়ে বাঁচি। তবে যেহেতু আমার পরিবারের অনেক বড় সাপোর্ট ছিল সেহেতু আমি পিছপা হয়নি।  

সমাজে আমাদের অনেক শারীরিক প্রতিবন্ধী ভাই-বোন আছেন। যারা প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে নিজেকে সব কাজ থেকে গুটিয়ে নেয়৷ তারা নিজেকে সমাজের বোঝা মনে করেন। আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহ তায়ালা একজন মানুষকে সব সুখে দেন না। আবার এটাও মনে রাখতে হবে আপনার শারীরিক অক্ষমতা আছে কিন্তু আপনার কোনো না কোনো পাশে একটি বড় যোগ্যতাও আছে। যেটার মাধ্যমে আপনি আপনার জীবনকে এগিয়ে নিতে পারবেন বহুদূরে। আমি দেখেছি অনেক শারীরিক প্রতিবন্ধী ভাই-বোন সুন্দর করে গান করতে পারেন, কেউ ভাল আকঁতে পারেন৷ বিশ্বে সফল মানুষদের মধ্যেও শারীরিক অক্ষমতা সম্পন্ন মানুষেরা ছিল। যদি বলি বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের কথা তিনি আমাদের শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষদের দৃষ্টান্ত স্বরূপ৷

ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল করিম সাত্তার বলেন, আমার সর্বপ্রথম ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করার। তবে একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে এখন আরও বেশি খুশি আমি৷ এটি এমন একটি জায়গা যেখানে সব শ্রেণীপেশার মানুষের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ আছে৷ সমাজের অসহায়, দরিদ্র ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমি নিজেই একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষদের পাশে দাঁড়াতে পারছি৷ 

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।