ঢাকা, বুধবার, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৯ মে ২০২৪, ২০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ঋণ দেওয়ার প্রলোভনে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২
ঋণ দেওয়ার প্রলোভনে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ প্রতারক চক্রের তিন জনকে আটক করেছে র‌্যাব

ঢাকা: ভোলার স্থানীয় একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ফয়েজ উল্লাহ। পরে ১৯৯২ সালে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় আসেন তিনি।

মিরপুরের ১৪ নম্বরে শুরু করেন কনস্ট্রাকশনের কাজ। এরপর ২০০৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কাফরুলের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ফিল্ড অফিসার পদে চাকরি করেন তিনি।

ফয়েজ উল্লাহ ২০২১ সালে ‘শিবপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে এই সমিতির নাম বেআইনিভাবে পরিবর্তন করে ‘শিবপুর ক্ষুদ্র ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ নামে শুরু করেন প্রতারণা। ফুটপাতের বিক্রেতা, হকার, রিকশা ও ভ্যানচালক এমনকি ভিক্ষুকসহ শ্রমজীবীদের টার্গেট করে গত ৫ মাসে কোম্পানির ৩০০ সদস্যের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ৫০ লাখের বেশি টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রতারক ফয়েজ উল্লাহ।

এই ভুয়া সমিতির সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ নিজেই, সাধারণ সম্পাদক তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম। সমিতির সহ-সভাপতি ছিলেন তার বন্ধু সিরাজুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক তার শ্যালক আলাউদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ ছেলে আরিফ হোসেন এবং তার আরও এক বন্ধু মো. জামিল হোসেন ওয়াদুদ ছিলেন সদস্য।

শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে ভোর পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী থানাধীন মুক্তবাংলা শপিং কমপ্লেক্সে অভিযান চালিয়ে প্রতারক ফয়েজ উল্লাহসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪। গ্রেফতার অন্যরা হলেন—মুন্সীগঞ্জ জেলার আফরিন আক্তার (২৪) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোছা. তাসলিমা বেগম (৩৩)।

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শাহ আলী থানাধীন মুক্তবাংলা শপিং কমপ্লেক্সে অভিযান চালিয়ে শিবপুর ক্ষুদ্র ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহসহ মোট ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে সেখান থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত ফরম, ঋণ গ্রহীতার ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র, ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের জীবন বৃত্তান্ত, লিফলেট, সিলসহ বিভিন্ন কাগজপত্র এবং ফয়েজ উল্লাহর নামে কমিউনিটি ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির নানা সার্টিফিকেট, চেক বই, মনিটর, সিপিইউ উদ্ধার করা হয়।

অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, শিবপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি লিমিটেডের নাম পরিবর্তন করে তৈরি করা ভুয়া সমিতিতে ২০ জন সদস্য অন্তর্ভুক্তির কথা উল্লেখ থাকলেও বর্তমানে ৩০০ জন সদস্য রয়েছে। এছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানের কোনো রক্ষিত জামানত নেই।

তিনি বলেন, প্রতারণার কৌশল হিসেব সদস্য সংগ্রহ করা হতো। এই চক্র মাঠ পর্যায়ের কর্মী/সদস্যদের মাধ্যমে রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন বস্তি এলাকার প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, সেলুনের কর্মচারী, মনোহারি ও ফুটপাতের দোকানদার, গৃহকর্মী ও নিম্নআয়ের মানুষদের টার্গেট করে ঋণের লোভ দেখিয়ে সঞ্চয়ের নামে তাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ/ডিপিএস করতে উদ্বুদ্ধ করতো। পরে তারা ভুক্তভোগীদের প্রলুব্ধ ও বিভিন্ন তথ্যাদি সংগ্রহ করে নানান কৌশলে ভুলিয়ে প্রতারক চক্রের অফিস কার্যালয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতো। ‘শিবপুর ক্ষুদ্র ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ প্রতিদিন আনুমানিক ৩০০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে সঞ্চয় সংগ্রহ করে।

পরে শ্রমজীবী মানুষদের ভুল বুঝিয়ে ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্প প্রচার করে যেমন—মুদারাবা ডিপোজিট স্কিম, মুদারাবা কোটিপতি বিশেষ সঞ্চয়, মুদারাবা লাখপতি ডিপোজিট স্কিম, মুদারাবা মিলিওনিয়ার ডিপোজিট স্কিম, মুদারাবা পেনশন ডিপোজিট। প্রলোভন দেখিয়ে দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষ, প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুকদের কাছ থেকে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল এই প্রতারক চক্র।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রতারক ফয়েজ উল্লাহ ভুক্তভোগীদের বিভিন্নভাবে অল্প সময়ে ঋণ দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে শিবপুর ক্ষুদ্র ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে সঞ্চয়/বিনিয়োগ/ডিপিএস করতে আগ্রহী করতেন। ভুক্তভোগীদের বলা হতো ১০-১৫ দিন ঠিকমতো নির্দিষ্ট হারে সঞ্চয় দিলে তাদের ঋণ দেওয়া হবে, যা দিয়ে তারা সুন্দরভাবে ব্যবসা করতে পারবেন। ভুক্তভোগীদের দুই-একজনকে ঋণ দিলেও কেউ সঞ্চয় থেকে ঋণ পেতেন না।

এই কোম্পানির কিছু সদস্য দৈনিক ভিত্তিতে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে সঞ্চয়/ডিপিএসের টাকা সংগ্রহ করতেন। ভুক্তভোগীদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হতো, তারা যদি সময়মত সঞ্চয়/ডিপিএসের টাকা না পরিশোধ করেন তাহলে তাদের সঠিক সময়ে ঋণ দেওয়া হবে না। অথবা মেয়াদ শেষে তারা মুনাফা কম পাবেন এবং জরিমানাও করা হবে।

চক্রটি ফ্ল্যাট/জমি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েও প্রতারণা করে আসছিলো বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, প্রতারণার আর একটি কৌশল হিসেবে ভুক্তভোগীদের বোঝানো হতো যে, দৈনিক মাত্র ২০০/৩০০ টাকা করে জমা করলে একসময় ঢাকা শহরে তাদের একটি করে ফ্ল্যাট বা জমি দেওয়া হবে। এছাড়াও প্রতারক চক্রটি শিবপুর ক্ষুদ্র ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এবং ভুয়া ও অনুমোদনবিহীন মাইসার ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনকে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বলে মিথ্যা আশ্বাস দিতো।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২
এসজেএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।