ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে রাশেদ খান মেনন

দেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের পথনির্দেশক ভাষা আন্দোলন

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২
দেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের পথনির্দেশক ভাষা আন্দোলন রাশেদ খান মেনন

ঢাকা: স্বাধীনতা সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন দেশে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ এদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের পথ চলার দিক-নির্দেশক মহান ভাষা আন্দোলন বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি প্রবীণ বামপন্থি রাশেদ খান মেনন।  

কিশোর বয়সে প্রত্যক্ষ করা মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ এবং এদেশের রাজনীতিতে এই ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব সম্পর্কে রাশেদ খান মেনন বাংলানিউজের কাছে এ মন্তব্য করেন।

১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের পর পরই এদেশের রাজনীতিতে প্রবেশ ঘটে রাশেদ খান মেননের। ভাষা আন্দোলনে সরাসরি অংশ নিতে না পারলে কিশোর মেনন পারিবারিক এবং পারিপার্শ্বিক পরিমণ্ডলে সেই আন্দোলনের প্রত্যক্ষ করেছেন এবং পরবর্তীতে এই আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত ছাত্র সমাজের অধিকারভিত্তিক আন্দোলনে সংপৃক্ত হয়েছেন।  

রাশেদ খান মেনন বলেন, রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে ২১ ফেব্রুয়ারি যখন ছাত্র মিছিলে গুলি হয় ওই সময় আমি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। আমি থাকতাম যশোরে আমার মামার বাসায়, মামা ছিলেন যশোরের জেলা জজ। আমি যশোর জেলা স্কুলের ছাত্র ছিলাম। এই ঘটনাগুলো বিরাট চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। আমি পারিবার থেকেই এই ঘটনাগুলো জানতে পারি। আমার বড় ভাই সাদেক খান সেসময় কমিউনিস্ট পার্টির ঢাকা জেলার সম্পাদক ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির বড় ভূমিকা ছিল। তৎকালীন ছাত্র ফেডারেশনের মাধ্যমে তারা ভাষা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারির পর এক মাসের মধ্যে তিনি গ্রেফতার হন।

পুলিশের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে১০ জন, ১০ জন করে যে মিছিল বের করা হয়েছিল। সেই দ্বিতীয় ১০ জনের মিছিলের মধ্যে আমার আরেক ভাই আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ খান ছিলেন। তাদেরকে ট্রাকে তুলে নিয়ে ঢাকার বাইরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আমার আরেক ভাই এনায়েতুল্লাহ খান তখন কলেজের ছাত্র ছিলেন। ঢাকার বাসায় এসে তিন ভাইয়ের কাছে, পারিবারিক আলোচনায় ভাষা আন্দোলনের বিষয়গুলো শুনেছি এবং উপলব্ধি করার চেষ্টা করতাম। রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই স্লোগান দেওয়া শুনতাম, আমি বাসায় একা একা রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই স্লোগান দিয়েছি।

এদেশের রাজনীতিতে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, যশোরেরও ভাষা আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে দেখেছি, আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আমি দেখেছি ভাষা আন্দোলনের প্রভাব অন্যান্য আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছে, যেসব আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমি রাজনীতিতে যুক্ত হতে থাকি। ভাষা আন্দোলন নিয়ে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর-কোনো এক মাকে কবিতাটি আলোড়ন তৈরি করেছিল। যশোর থেকে আমি ময়মনসিংহে চলে যাই। সেখানে স্কুলের ছাত্র হিসেবে বইয়ের দাবিতে আন্দোলনের মিছিলে গিয়েছি। আনন্দমোহন কলেজের ছাত্ররা আমাদের কাছে আসতো, তাদের মাধ্যমে মিছিলে যাই। এভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে গড়ে উঠা আন্দোলনে অংশ নিতে থাকি। আসলে ভাষা আন্দোলনের পর এর প্রভাবে অন্যান্য ইস্যুতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বাহান্নর ২১ ফেব্রুয়ারির পরের বছর থেকেই প্রতিবছর ওই দিনে শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হতো। সে কর্মসূচিতে আমি যেতাম। ১৯৬১ সালে শহীদ দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বাধা দেওয়া হয়। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র, আমি ওই আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম।

ভাষা আন্দোলনকে এদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের পথ নির্দেশক মন্তব্য করে রাশেদ খান মেনন বলেন, আসলে ভাষা আন্দোলনই এদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের পথ চলার দিক-নির্দেশক। ভাষা আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছিলেন, ২১ ফেব্রুয়ারির পর পরই(ওই বছর ২৬ এপ্রিল) তাদের মধ্য থেকে উদ্যোগ নিয়ে অসাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর পর ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট, ৫৬’র স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন এসব আন্দোলনকেই প্রভাবিত করে ভাষা আন্দোলন। আসলে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের যে স্পিরিট তৈরি হয় সেখান থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব ছিল না।

প্রতিটি দিবসে পোস্টার, লিফলেট বের হতো। এর পর ৬৬’র ৬ দফা ও ১১ দফার আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনতার পরও বাংলাদেশে স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলোতেও ভাষা আন্দোলন ভাষা আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু শহীদ মিনারের শ্রদ্ধা নিবেদনের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে। এরশাদ ১৯৮৩ সালে ঘোষণা করেছিল শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো যাবে না, মিলাদ পড়তে হবে। এর পর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন বেগবান হয়ে উঠে। সব আন্দোলনই ভাষা আন্দোলনের সেই স্প্রিট দ্বারা প্রভাবিত।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২
এসকে/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।