ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

আসল লাইসেন্সের জালিয়াত চক্র!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২
আসল লাইসেন্সের জালিয়াত চক্র! ড্রাইভিং লাইসেন্স চক্রের গ্রেফতার ১০ সদস্য

ঢাকা: ভুয়া পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ বিভিন্ন জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কোনো রকম পরীক্ষা ছাড়াই বিআরটিএ থেকে আসল ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে দিত একটি দালাল চক্র। এ জন্য চক্রটির ১৪২টি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এমনটাই জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

সম্প্রতি বিআরটিএ কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে এই দালাল চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির ডিবি সদস্যরা।

বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) এ কে এম হাফিজ আক্তার।

এর আগে গত ১৪ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর দারুসসালাম ও দিয়াবাড়ি বিআরটিএ কার্যালয় এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার আসামিরা হলেন- মো. লিটন পাইক (৪০), সুজন পাইক (২৯), হাসান শেখ ওরফে আকচান (৪১),  মোহাম্মদ আলী ওরফে মিস্টার (৫১), আব্দুল খালেক (৩১), আব্দুল্লাহ রনি (২৩), সোহেল রানা (২৩), সোহাগ (২৩), নুরনবী (৩৮) এবং হুমাযুন কবির (২৮)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৫৯টি ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফাইল, মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল মান্নান স্বাক্ষরিত ও সিল-মোহরযুক্ত ৫৮টি, একই কার্যালয়ের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নাঈমা বেগম স্বাক্ষরিত ও সিল-মোহরযুক্ত ৮৩টি, কর্মকর্তা আল ফয়সাল স্থাক্ষরিত ও সিল-মোহরযুক্ত ৭টি, এনামুল হক ইমন স্বাক্ষরিত ও সিল-মোহরযুক্ত ৭ টি, ইকবাল আহমেদ স্বাক্ষরিত ও সিল-মোহরযুক্ত ৪টি, বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক বরাবর ডোপ টেস্টের সনদ পাওয়ার আবেদন ১৫টি, টেবিলের উপর ও নিচ হতে কালো রঙয়ের ২টি মনিটর, ২টি সিপিইউ, ২টি কিবোর্ড, ১টি কালার প্রিন্টার, লেমিলেটিং মেশিন ১টি, ভিজিএ কেবল ২টি, পাওয়ার ক্যাবল ২টি, আসামিদের ব্যবহৃত ২টি নোকিয়া, ২টি স্যামসাং ও ১টি নষ্ট ওয়ালটন মোবাইল ফোন, ৬ টি সিল জব্দ করা হয়।

অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, দেশে ১৪২টি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুল আছে এবং এদের অধিকাংশ এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। নিয়মকে অনিয়মে পরিণত করে এই দালাল চক্র। বিআরটিএ’র কিছু অসাধু কর্মকতার যোগসাজশে কোনো ট্রেনিং ছাড়াই অদক্ষ চালকদের ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স’ তৈরি করে দিত। ফলে অদক্ষ চালকরাও লাইসেন্স পাচ্ছেন, আর দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা।

ব্রিফিং করছেন অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার

আসামিদের কাছ থেকে জব্দ করা ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফাইলের পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনের বিপি নম্বর দেখে বুঝতে পারেন যে, বাংলাদেশ পুলিশের বিপি নম্বরের সঙ্গে কোনো সামঞ্জস্য নেই।

তিনি বলেন, আসামিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, জব্দকৃত ফাইলগুলোর মধ্যে থাকা বাংলদেশ পুলিশের বিভিন্ন জেলার বিশেষ শাখার (এসবি) ভেরিফিকেশন রিপোর্টগুলো অল্প সময়ে করে দেওয়ার জন্য বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো সার্কেল-০৩ এর উপরে উল্লেখিত কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে আবেদন ফাইলগুলো অফিসের বাইরে নিয়ে আসে। এরপর তারা মিলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশ্বাস সৃষ্টি করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সিল মোহরযুক্ত স্বাক্ষর করা পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট তৈরি করে গ্রাহকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়ে দেয়।

তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও স্বীকার করেছে, পলাতক আসামিরা দিয়াবাড়ী বিআরটিএ অফিস ও এর আশপাশ এলাকায় থাকেন। চক্রের পলাতক বাকি আসামিদের গ্রেফতার অভিযান চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
এসজেএ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।