ঢাকা, বুধবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গদখালীতে রূপ ছড়াচ্ছে নেদারল্যান্ডসের টিউলিপ

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২
গদখালীতে রূপ ছড়াচ্ছে নেদারল্যান্ডসের টিউলিপ বাগানে ফুটেছে সারিসারি টিউলিপ

যশোর:  সাধারণত শীতপ্রধান দেশে চাষ হয় টিউলিপ ফুল। বাংলাদেশের মত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে এর চাষ একপ্রকার অসম্ভব।

তবে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর ইসমাইল হোসেন। তার বাগানজুড়ে ফুটেছে রাজসিক সৌন্দর্যের ৭ প্রজাতির টিউলিপ ফুল। আর তা দেখতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।

ভারতের জম্মু কাশ্মীরে টিউলিপের বড় বড় বাগান আছে, যা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বিশ্ব বিখ্যাত। তবে নেদারল্যান্ডস এই ফুল চাষ ও রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে।

বাংলাদেশে প্রথম গাজীপুরের কৃষক দেলোয়ারের বাগানে ফুটেছিল টিউলিপ। এবার বাণিজ্যিকভাবে এই রপ্তানিযোগ্য ফুল চাষে আশার আলো দেখছেন গদখালীর ইসমাইল হোসেন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ঝিকরগাছা কৃষি অফিসের সহায়তায় নেদারল্যান্ডস থেকে পাঁচ হাজার টিউলিপ গাছের বাল্ব (বীজ হিসেবে ব্যবহৃত রূপান্তরিত কাণ্ড) আনা হয়। গত ৬ জানুয়ারি পাঁচ শতক জমিতে বেড করে ছয় ইঞ্চি দূরত্বে রোপণ করি সেগুলো। প্রতিবেডে ফুলগুলো একটি শেডের নিচে চাষ হচ্ছে যা একটি বিশেষ ধরনের পলিথিন (শেডনেট) দিয়ে ঢাকা। নিবিড় পরিচর্যায় মাত্র ১২দিনে গত ১৮ জানুয়ারি প্রথম ফুলের কলি দেখা যায়। এখন বাগানে সাত রকমের টিউলিপফুল শোভা পাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ধারণা করা হতো গ্রীষ্মকালীন দেশে টিউলিপ চাষ অসম্ভব। পরীক্ষামূলকভাবে গদখালীতে এই ফুল চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ইসমাইল হোসেন অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন। এবার বাণিজ্যিকভাবে চাষের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হাসান পলাশ বলেন, নেদারল্যান্ডস টিউলিপফুল রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। শীতের দেশের ফুল হওয়ায় বাংলাদেশে এটার চাষ যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। শত প্রতিকূলতার পরও ইসমাইল উদ্যোগ নিয়ে টিউলিপ ফুটিয়েছেন। এটাকে এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষের দিকে নেওয়ার জন্য কৃষিবিভাগ সহায়তা করবে।

দামি এই টিউলিপ ফুল চাষে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। ইসমাইল হোসেন জানান, পাঁচ হাজার টিউলিপ ফুলের বাল্ব আমদানি করতে খরচ হয়েছে তিন লাখ টাকা, যার পুরোটাই বহন করেছে কৃষি বিভাগ। এছাড়া ফুলগাছ পরিচর্যায় আরও বিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। এখনও বাণিজ্যিকভাবে ফুলবিক্রি শুরু হয়নি। তবে দর্শনার্থীদের কাছে প্রতি পিস ফুল ১২০ টাকায় বিক্রি করছেন। আগামী ভালোবাসা দিবসে ফুলগুলো বেশি দামে বিক্রির আশা করছেন তিনি।

ফুল ফুটলেও টিউলিপ গাছের বাল্ব সংরক্ষণে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। এটা টিউলিপ চাষের বড় একটা সীমাবদ্ধতা। তবে ইসমাইল হোসেন জানান, যশোরে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় টিউলিপ গাছের বাল্ব সংরক্ষণ করতে পারবে বলে জানিয়েছে।

এই ফুলচাষি বলেন, এর আগে তিনিই প্রথম গদখালীতে জারবেরা ফুলের চাষ শুরু করেছিলেন। সব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে জারবেরা এখন মানুষের পছন্দের একটি ফুল হিসেবে পরিচিত হওয়ায় চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সব সমস্যা দূর করে টিউলিপ ফুলও বাণিজ্যিকভাবে চাষ হবে এবং রপ্তানি সম্ভব হবে।

সরেজমিনে টিউলিপ বাগানে গিয়ে দেখা যায়, নানা প্রজাতির শত শত টিউলিপ সারি সারি ফুটে আছে। কয়েক দিন ধরেই একের পর এক ফুটতে শুরু করেছে এই ফুল। বেগুনি, হলুদ, লাল, সাদাসহ ৭ রঙের ফুল ফুটেছে তার বাগানে। বিকেল হলেই ফুলগুলো তার সৌন্দর্য্য লুকিয়ে ফেলে, ভোর হতেই আবার দেখা মেলে টিউলিপের বাহারি রূপের আলো।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
ইউজি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।