ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ঘরের চাবি-জমির দলিল পেলেন ‘সেই’ আছপিয়ার মা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২২
ঘরের চাবি-জমির দলিল পেলেন ‘সেই’ আছপিয়ার মা আছপিয়ার মায়ের হাতে জমির দলিল তুলে দিচ্ছেন পংকজ নাথ এমপি ও ডিসি মো. জসীম উদ্দীন হায়দার

বরিশাল: বরিশালের হিজলা উপজেলার ‘সেই ভূমিহীন’ আছপিয়ার পরিবারকে সরকারি জমিতে নবনির্মিত ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে মেধাবী কলেজছাত্রী আছপিয়া ইসলাম কাজল ও তার পরিবারকে হিজলা উপজেলাতেই মুজিববর্ষের ২ শতাংশ ভূমি ও ঘর দেওয়া হয়েছে।

এ লক্ষ্যে ভাষার মাসের প্রথম দিন মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে হিজলা উপজেলার বড়জালিয়া ইউনিয়নের খুন্ন গোবিন্দপুর এলাকায় এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় জমির দলিল ও নির্মিত ঘরের চাবি আছপিয়ার মা ঝর্না বেগমের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেন বরিশাল-৪ আসনের এমপি পংকজ নাথ ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন হায়দার।

এসময়ে হিজলা উপজেলা চেয়ারম্যান হিজলা বেলায়েত হোসেন ঢালি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বকুল চন্দ্র কবিরাজ,  সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. বরিউল ইসলামসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। তবে এসময় পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ডাক পেয়ে রংপুরে ছয় মাসের প্রশিক্ষণে থাকায় আছপিয়া উপস্থিত থাকতে পারেননি।

ঘরের চাবি (প্রতীকী) বুঝে নিচ্ছেন আছপিয়ার মা

এদিকে মেয়ের পুলিশের চাকরি ফিরে পাবার পর সরকারিভাবে ঘর ও জমি পেয়ে আনন্দিত আছপিয়ার মা ঝর্না বেগম। এজন্য তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী, প্রশাসন ও গণমাধ্যমের প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান।

উল্লেখ্য বরিশালের হিজলা উপজেলার খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত সফিকুল ইসলামের মেয়ে আছপিয়া আক্তার কাজল ওতার পরিবার গত ১৫ বছর ধরে অন্যের জমিতে আশ্রিত হিসেবে থাকতেন। ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করে আছপিয়া। পরিবারে তার মা, তিন বোন ও এক ভাই রয়েছে। ভাই পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তার আয়েই চলে আছপিয়াদের সংসার।

গত বছর বরিশাল জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের আবেদন করেন আছপিয়া। গত বছরের ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষা এবং ২৪ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন আছপিয়া।

এরপর ২৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে চিকিৎসক তার প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে, এতেও উত্তীণ হন তিনি। সবশেষে ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। সেখানেও উতরে যান আছপিয়া।

কিন্তু চূড়ান্ত নিয়োগের আগে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আছপিয়া এবং তার পরিবারকে ‘ভূমিহীন’ উল্লেখ করে গত ৮ ডিসেম্বর জেলা পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন হিজলা থানার উপ-পরিদর্শক মো. আব্বাস। ফলে স্থায়ী ঠিকানা না থাকা এবং ভূমিহীন হওয়ায় আছপিয়ার চাকরি হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।

নবনির্মিত বাড়ি উদ্বোধন করেন পংকজ নাথ এমপি ও ডিসি মো. জসীম উদ্দীন হায়দার

বিষয়টি গণমাধ্যমের দৃষ্টিতে আসলে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। যা প্রধানমন্ত্রীর নজরেও আসে। এর পরপরই ভূমিহীন আছপিয়ার পরিবারকে পছন্দের জায়গায় জমি এবং মুজিব বর্ষের ঘর দেওয়ার নির্দেশনা আসে জেলা প্রশাসনের কাছে।

পরবর্তীতে বরিশালের ডিসি জসীম উদ্দীন হায়দারের নির্দেশে হিজলার ইউএনও বকুল চন্দ্র কবিরের তত্ত্বাবধানে আছপিয়ার পরিবারকে উপজেলার বরজালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম খুন্না গৌবিন্দপুর গ্রামে তাদের পছন্দ করা খাস জমিতে সরকারি খরচে ঘর তুলে দেওয়া হয়। জমিসহ সেই ঘর মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয় আছপিয়ার মা ঝরনা বেগমের হাতে।
ইউএনও বকুল চন্দ্র কবিরাজ জানান, আছপিয়া ইসলাম কাজল বর্তমানে রংপুরে পুলিশ কনস্টেবলের ছয় মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণে রয়েছেন। ছুটি নিয়ে আসতে না পারায় তার মা ঝর্না বেগমের কাছে ঘরের জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে জমির দলিল আছপিয়া এবং তার মা ঝর্না বেগমের নামে করা হয়েছে।

এদিকে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বিভাগীয় প্রশাসনের উদ্যোগে প্রতিটি উপজেলায় প্রশাসনের বাস্তবায়নে একটি করে অসচ্ছল ভূমি ও গৃহহীন বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য গৃহের চাবি হস্তান্তর করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ এমপি ও জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
এমএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।