ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

একসঙ্গে ২ তরুণীকে ঘরে ডেকেছিলেন ভণ্ড কবিরাজ!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২২
একসঙ্গে ২ তরুণীকে ঘরে ডেকেছিলেন ভণ্ড কবিরাজ! প্রতীকী ছবি

রাজশাহী: ধর্ষণের ভিডিও ধারণের পর হুমকি, শেষে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ায় এক ভণ্ড কবিরাজকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনাল। জরিমানা করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা।

অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।  

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) বেলা সোয়া ৩টার দিকে রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. জিয়াউর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় অভিযুক্ত আসামি পলাতক ছিলেন।

ওই কবিরাজের নাম আম-আমিন ওরফে আকিল সরদার ওরফে আকিল কবিরাজ (৬০)। তিনি নাটোর জেলার বরাইগ্রাম উপজেলার চাঁন্দাই গ্রামের আব্দুল বারী ওরফে ঝোলন সরদারের ছেলে। আর এই মামলাটিও নাটোরের বরাইগ্রাম থানার।  

কবিরাজির নামে তিনি গ্রামের নারীদের বিভিন্নভাবে যৌন নির্যাতন ও হয়রানি করে আসছিলেন। তবে সবশেষ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় পৃথক মামলা হয়। এরপর থেকেই তিনি পলাতক।  

বুধবার ৫৭ ধারার মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। ধর্ষণের ঘটনায় নাটোরের নারী ও শিশু আদালতে অভিযুক্ত কবিরাজের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা বিচারাধীন।

রায় ঘোষণার পর রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ইসমত আরা বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ঘটনাটি ২০১৫ সালের। বিষয়টি পরে প্রকাশ পাওয়ায় ভুক্তভোগী দুই তরুণীর মধ্যে একজনের বাবা ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাদী হয়ে নাটোরের বরাইগ্রাম থানায় ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবং এই ঘটনার ছবি ও ভিডিও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানোয় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে এই মামলা করেন।

মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, তার মেয়ের সঙ্গে স্থানীয় এক তরুণের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। এতে তার মেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এই সুযোগে এলাকার ভণ্ড কবিরাজ তার মেয়েকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে বশে নেয়। তার কাছে কবিরাজি চিকিৎসা করলে আবারও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন বলে প্ররোচিত করেন। এ সময় তসলিমা খাতুন নামের স্থানীয় এক প্রতিবেশী নারীও জানান, এই কবিরাজ ঠিকই বলছেন। কবিরাজের কথামতো চিকিৎসা করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।  

একপর্যায়ে তার মেয়েকে গোপনে বাড়িতে ডেকে নিয়ে কবিরাজি চিকিৎসার নামে ধর্ষণ করেন এবং গোপনে মোবাইলে তার সেই ভিডিওধারণ করে রেখে দেন। এরপর থেকে মাঝেমধ্যেই ওই কবিরাজ ভিডিও ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার মেয়ের সঙ্গে জোর করে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে আসছিল। কিন্তু প্রতারিত ও যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার পরও ভিডিও ফাঁস হওয়ার ভয়ে তার মেয়ে মুখ খোলেনি। এরপর তার মেয়ের এক বান্ধবীও কবিরাজের লালসার শিকার হয়।

পরে ওই ভণ্ড কবিরাজ দুই তরুণীকেই একসঙ্গে তার ঘরে ডাকেন। কিন্তু অস্বীকৃতি জানানোয় কবিরাজ তার মেয়ে ও অপর তরুণীর সেই গোপন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এরপরই পরিবারের সদস্যরা এই ঘটনা জানতে পারেন। তখন দুই তরুণীর মধ্যে একজনের বাবা বাদী হয়ে আকিল সরদারের বিরুদ্ধে বরাইগ্রাম থানায় এই মামলা দায়ের করেন।

অ্যাডভোকেট ইসমত আরা বলেন, এ মামলায় তসলিমা খাতুনসহ দুজনই আসামি ছিলেন। তবে তদন্ত শেষে পুলিশ একজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন। পরে মামলাটি নাটোর থেকে নিস্পত্তির জন্য রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে মামলার বাদী ও দুজন ভুক্তভোগীসহ মোট ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এরপর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২২
এসএস/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।