ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি-জামায়াতের ৮ লবিস্ট’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২২
‘যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি-জামায়াতের ৮ লবিস্ট’

ঢাকা: জামায়াত-বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রে ৮টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ এবং বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা না দেওয়ার জন্য এই লবিস্ট ফার্মগুলো কাজ করে বলেও মন্ত্রী জানান।

বুধবার(২৬ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য জানান। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।

এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি এবং সরকার কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেছে কি না এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংসদে বিবৃতি দাবি করেন। এর প্রেক্ষিতে এ তথ্য তুলে ধরেছেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ সময় তিনি বলেন, সরকার কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেনি। সরকার পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছিল। জামায়াত-বিএনপি ৮টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে যুদ্ধাপরাধীরে বিচার বন্ধ করতে, বাংলাদেশকে সহযোগিতা বন্ধ করতে। আর দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার বন্ধ করতে বিজিআর নিয়োগ দেয় সরকার।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করা সে দেশের আইনে একটি বৈধ প্রক্রিয়া। ভারত, পাকিস্তান, কাতার সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে থাকে। কিন্তু লবিস্ট নিয়োগের উদ্দেশ্য কী সেটা হল মুখ্য। বিএনপি-জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৮টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে। ২০১৪ সালে  জামায়াত একটি ফার্ম নিয়োগ করে যুদ্ধাপারাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য। এজন্য তারা দেড় লাখ ডলার দেয়। বিচার বন্ধে তারা আরেকটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। আর যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য পিস অ্যান্ড জাস্টিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৩২ হাজার ডলার দিয়ে নিয়োগ করে। বিএনপি ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২৭ লাখ ডলার প্রতি বছর প্রতিমাসে রিটেইনার ফি ১ লাখ ২০ হাজার ডলার ব্যয় করেছে। এই তথ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। বিএনপি ২০১৭ সাল পর্যন্ত চারটি এবং ২০১৯ সালে একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিটচার ঠেকাতে জামায়াত-বিএনপি তিনটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুঃখের বিষয় হচ্ছে লবিস্টরা এমন সব বক্তব্য তুলে ধরেছেন যেগুলো দেশের মানুষ জানলে ধিক্কার দেবে। লবিস্ট চিঠি দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশে সহায্য সহায়তা বন্ধ করে দিতে বলেছে। উন্নয়ন যাতে ব্যাহত হয় তার জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বলছে। মাঠে ময়দানে যারা বিএনপির কর্মী আছেন, তারাও কেউ চাইবেন না দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাক। দলের কিছু নেতৃস্থানীয় মানুষ তাদের অগোচরে এমন কাজ করেছেন। বিএনপি সদস্যরাও নিশ্চয় চান না দেশ রসাতলে যাক। তাদের নেতারা কীভাবে এভাবে লেখতে পারেন।

আবদুল মোমেন বলেন,  সরকার লবিস্ট নিয়োগ  করেনি।   পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছে। একটা হচ্ছে সিনেট, স্টেট ডিপার্টমেন্টে গিয়ে লবি করে তদ্বির করে, সরকার সে ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেনি। সরকার যেটা করেছে অপপ্রচার, মিথ্যা তথ্য যেগুলো ছড়ানো হয় তার বিপরীতে সত্য তথ্যগুলো জানানোর জন্য। বিজিআর নামের একটি প্রতিষ্ঠান ২০১৪-১৫ সালে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেসময় যুদ্ধাপারাধীদের বিচার বন্ধে বানোয়াট তথ্যের বিরুদ্ধে যাতে লিখতে না পারে, বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা বন্ধের জন্য বিজিআরকে নিয়োগ দেওয়া হয়। দেশের জন্য, দেশের জনগণের জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য এবং বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধের জন্য, অপপ্রচারের বদলে সত্য কথা বলার জন্য বাংলাদেশ সরকার জনগণের মঙ্গলের জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা প্রয়োজন সেটা নেবে। তার একটি নমুনা হচ্ছে বিজিআর। তারা অসত্য তথ্য দিচ্ছেন, তখন বিজিআরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বিএনপির কিছু কিছু লোক জাতিসংঘের মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশের সংসদকে অবৈধ ঘোষণা করার জন্য। এ ধরনের কাজ যারা করে তাদের প্রতি ধিক্কার। বিএনপি যে এতগুলো ফার্মে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে এত টাকা ব্যয় করেছে তারা কি নিজ দলের আয়-ব্যয়ের হিসাবে দেখিয়েছেন? দলের সব নেতার সঙ্গে আলোচনা করে কি এই কাজগুলো হয়েছে?

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার ও বিএনপির মধ্যে মতামতের ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু তাই বলে দেশের অনিষ্ট করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় ও তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে কোথায় যান, কী করেন সে খোঁজ নেওয়ার জন্য এফবিআইয়ের প্রতি অ্যাপ্রোচ করে সিজার নামে বিএনপির এক নেতার ছেলে জয়কে অপহরণের ষড়যন্ত্র করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে সিজার ও তার সহযোগীদের সাজাও হয়েছে। বিএনপি নেতারা দেশের বিরুদ্ধে যেটা করেছে, আমার বিশ্বাস বিএনপির মাঠের নেতাকর্মীরা এটা সমর্থন করে না, তারা চায় না দেশে অনিষ্ট হোক।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, ২৬ জানুয়ারি, ২০২২
এসকে/এমএমজেড 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।