ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাস ডাকাতির অভিযোগ করতে কোথায় যাবে এই স্টাফরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২২
বাস ডাকাতির অভিযোগ করতে কোথায় যাবে এই স্টাফরা

সাভার (ঢাকা): উত্তরাঞ্চল বগুড়া থেকে ছেড়ে আসা রাজধানীর গাবতলীগামী সোনার তরী পরিবহন নামের একটি দূরপাল্লার চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত বা উদ্ধার তৎপরতা করবে তো দূরের কথা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আহত বাসের তিন স্টাফ বিভিন্ন থানায় ঘুরেও কোনো থানায় অভিযোগ বা মামলা নথিভুক্ত করতে পারেনি।

তাদের প্রশ্ন এ অবস্থায় অভিযোগ দিতে কোথায় যাবে তারা?

বাস স্টাফরা জানিয়েছেন, শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) তাদের বাসে গভীর রাতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে সাভারের গেন্ডা অঞ্চলের ভেতর ডাকাতির কার্যক্রম চালায় ৭ ডাকাত সদস্য। বিষয়টি নিয়ে শনিবার (১৫ জানুয়ারি) ভোর ৫টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত মির্জাপুর থানা, সাভার হাইওয়ে থানা ও সাভার থানায় গিয়েও কোনো অভিযোগ বা মামলা করাতে পারেননি। মির্জাপুর থানায় গেলে বলছে সাভার থানা, আবার সাভার থানায় গেলে বলছে মির্জাপুর থানায় অভিযোগ দিতে। অভিযোগ দিতে সাভার হাইওয়ে থানার সামনেই বাসটি নিয়ে অবস্থান করছেন তারা।  

শনিবার রাত ১১টার দিকে সাভার মডেল থানায় বসে থাকা বগুড়া থেকে ছেড়ে আসা সোনার তরী পরিবহনের বাসের সুপারভাইজার ও চালক এসব তথ্য ও অভিযোগ জানায় বাংলানিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে।

তাদের অভিযোগ, সেদিন রাতে বাসের প্রায় ১৫জন যাত্রীসহ বাসের তাদের তিন স্টাফের হাত-পা বেঁধে মারধরসহ অস্ত্রের মুখে সবকিছু লুটে নিয়েছে ডাকাতরা। উদ্ধার তৎপরতাসহ তদন্ত করা তো দূরের কথা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আহত বাসের তিন স্টাফ মির্জাপুর থানা ও সাভার হাইওয়ে থানা ঘুরে সাভার মডেল থানায় বসে থাকলেও তাদের অভিযোগ নেয়নি পুলিশ।  

আহত বাসের স্টাফরা হলেন- সোনার তরী বাসের চালক বগুড়া জেলার ভাটগ্রামের মো. পাভেল (৪৯), সুপারভাইজার একই জেলার সদর থানার শ্রীপুরের মৃত হজরত আলীর ছেলে শহীদুল আলম শহীদ (৪৫) ও হেলপার। ডাকাতির স্বীকার হওয়া সোনার তরী পরিবহনের ১৫০৫ নম্বর বাস।

ডাকাতদের মারধরে আহত বাসের চালক মো. পাভেল অসুস্থ অবস্থায় বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় বগুড়া ঠনঠনিয়া পোস্ট টার্মিনাল থেকে ৩৫জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার গাবতলীর উদ্দেশ্যে রওনা দেই। অন্য সিটগুলো ফাঁকা থাকায় আমাদের মতো লোকাল গাড়িগুলোতে রাস্তায় বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা যাত্রী ওঠাই। আবার নামলে আবার ওঠাই এরকম। পরে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গাতে সাত জন যাত্রী তুলি। একটানে গাড়ি নিয়ে গাজীপুরের চন্দ্রায় কিছু লোক নামাইছি। এরপর রাত ১১টার দিকে সাভারের গেন্ডায় দুইজন যাত্রী নামায় দিয়ে গেটটা লাগিয়ে যখন গাড়ি রওনা দিচ্ছিলো।

এ সময় ড্রাইভারের পেছনের সিটে একজন ও বোনাটে বসে থাকা দুজন হঠাৎ করেই উঠে ড্রাইভারকে টেনে বাসের ভেতর ফেলে দিয়েছে। পরে পেছনের সিটে বসে থাকা ব্যক্তি ড্রাইভারের সিটে বসে গাড়ি চালানো শুরু করে। এদিকে আমার ড্রাইভারকে ডাকাতদের দুজন মারধর শুরু করেছে। তখন ভেতরে থাকা আরও দুজন ডাকাত আমার হাত-পা, মুখ বেঁধে ফেলছে। এক মিনিটের মধ্যেই আমাদের তিনজন স্টাফকে বেঁধে ফেলে ওরা। পরে একে একে প্রায় ১৫ জন যাত্রীকে চাপাতি, পিস্তল, চাকু দেখিয়ে বেঁধে রাখে। সাভারের গেন্ডা থেকে রাত সোয়া ১১টার দিকে গাড়ি ঘুরিয়ে আবার টাঙ্গাইলের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো ডাকাতরা। ততক্ষণে সব যাত্রীর টাকা-পয়সা, মোবাইল নিয়ে নিয়েছে। পরে ভোর ৪টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে আরেকটা গাড়ির সঙ্গে আমাদের গাড়িটা অ্যাক্সিডেন্ট করে। এ সময় ডাকাতরা চলে যায়। আমরা বাসের ভেতরেই থাকি।

তিনি আরও বলেন, হেলপার গাড়ি চালিয়ে মির্জাপুর থানায় গিয়ে অভিযোগ দিতে চাইলে নেয় না তারা। সকালে মির্জাপুর থানায় যাওয়ার পর তারা বলছে মামলা সাভার থানায় হবে। শনিবার প্রথমে সাভার হাইওয়ে থানায় গিয়েছিলাম। সেখান থেকেও সাভার থানার কথা বলেছে। সারাদিন সাভার থানায় বসে থাকার পর বিস্তারিত শুনে এখন রাতে বলেছে মামলা এখানে নেবে না, মির্জাপুর হবে। সাভার থানার তদন্ত ওসির রুমে রাত ১১টা পর্যন্ত আমরা ছিলাম।

বাসের সুপারভাইজার শহীদুল আলম শহীদ সেদিন রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, যখন অ্যাক্সিডেন্ট করে তখন ভোর সাড়ে ৪টার মতো বাজে। আমরা তখন মির্জাপুরের গোড়াই এলাকায়। এর আগেই বাসের ক্যাশ ১৩ হাজার টাকা ও আমাদের মোবাইল নিয়ে নিছে ডাকাতরা। যাত্রীদের প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো নিছে। গোড়াই এলাকাতেই ডাকাতরা বাস ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।  
এই ডাকাতির মামলা বা অভিযোগ কোথায় হবে এমন প্রশ্ন নিয়ে যোগাযোগ করা হয় সাভার মডেল থানা, সাভার হাইওয়ে থানা ও মির্জাপুর থানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এই তিন থানার কর্মকর্তারা বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে একে অপরের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন।

মির্জাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গিয়াস উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, সাভার থেকে ডাকাতি শুরু। ঘটনাস্থল একবারে পরিষ্কার ওখানে। মামলাতো ওখানেই হবে। সাভার থানা থেকে যদি বলে থাকে এখানে (মির্জাপুর) মামলা হবে তাহলে মিথ্যা, ভিত্তিহীন কথা বলছে।

এদিকে ভুক্তভোগী বাসের স্টাফরা রাত ১১টা নাগাদ সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এক মিনিট পর কথা বলছি। এরপর তাকে কয়েকবার ফোন বা মেসেজ করেও পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে সাভার হাইওয়ে থানার পরিদর্শক (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে তিনি এখনো কিছুই জানেন না।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২২
এসএফ/এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।