ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সোনাকান্দা-সৈয়দপুর ব্রিজ নিয়ে স্থানীয়দের দুশ্চিন্তা কেন?

সামশুল ইসলাম সনেট, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২২
সোনাকান্দা-সৈয়দপুর ব্রিজ নিয়ে স্থানীয়দের দুশ্চিন্তা কেন?

কেরানীগঞ্জ: ঢাকাকে মুন্সিগঞ্জের সঙ্গে সংযুক্ত করতে ধলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে আরও একটি ব্রিজ। ৯১২.৩২ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০.৪ মিটার প্রশস্ত ব্রিজটির এক পাশে ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার রুহিতপুর ইউনিয়নের নতুন সোনাকান্দা গ্রাম এবং অপর প্রান্তে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার সৈয়দপুর গ্রাম।

১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই বছর সময়সীমায় ব্রিজটি নির্মাণ করবে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘মীর আক্তার হোসেন লিমিটেড’। ২০টি পিলারে ২১টি স্প্যান এবং দুইটি এবাটমেন্ট ছাড়াও ব্রিজের দুই পাশে রয়েছে ১২শ’ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক, যার ৫০০ মিটার কেরানীগঞ্জ এবং ৭০০ মিটার সিরাজদিখান অংশে। একটি ২ ব্যান্ড আন্ডারপাস এবং এক ব্যান্ডের চারটি কালভার্টও এর আওতাধীন।  

প্রায় ৬ মাস ধরে চলা ব্রিজসহ অবকাঠামোর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। ব্রিজের কেরানীগঞ্জ অংশে এখনো দৃশ্যমান কোনো কাজ না হলেও সিরাজদিখান অংশে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। ব্রিজের পাইলের কাজ হয়েছে ২২৮টির মধ্যে ১৫৪টি। ২০টি পিলারের মধ্যে দাঁড়িয়ে গেছে ছয়টি, দুইটি এবাটমেন্টের মধ্যে দাঁড়িয়ে গেছে একটি। কাজের অগ্রগতি আনুমানিক প্রায় ৩০ শতাংশের বেশি বলে জানিয়েছে প্রোজেক্ট ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হামিদ।

২৩.৮৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্পটিতে সিরাজদিখানে ২৩ কিলোমিটার এবং কেরানীগঞ্জে পড়েছে দশমিক ৮৯ কিলোমিটার। যা বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৪০৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ৬ দশমিক ৮২ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণের কথা থাকলেও অধিগ্রহণের কোনো অগ্রগতি না দেখে হতাশ স্থানীয় বাড়ি ও জমি মালিকরা।

নতুন সোনাকান্দা গ্রামের ভুক্তভোগী আবুল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, প্রবাসের আয়ের সবটুকু দিয়ে কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ি বানিয়েছি, ব্রিজের লোকজন এসে মাঝে মধ্যেই জায়গা মেপে যায় কিন্তু কোনো নোটিশ বা চিঠি দেয় না, আমার আমাদের ঘরবাড়ি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। হতদরিদ্র বাবুল হোসেনও আছেন দুচিন্তায়, পাবেতো পার ন্যায্য অধিকার? 

সৈয়দপুর গ্রামের লিনা বেগম বাংলানিউজকে জানান, আমার বাড়ির ওপর দিয়ে ব্রিজ যাবে, বছরখানেক আগে একটা চিঠি পাইছিলাম, এরপর থেকে আর কোনো খবর নাই। ব্রিজের কাজ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমাদের সঙ্গে দেনা-পাওনা নিয়ে কোনো কথা হচ্ছেনা। আমরা দ্রুত এর একটা বিহিত চাই।

উল্লেখ, ব্রিজটি নির্মিণ হলে কেরানীগঞ্জ, হেমায়েতপুর (সাভার), গাবতলী, মোহাম্মদপুরসহ উত্তরবঙ্গের সঙ্গে বিক্রমপুরের সিরাজদিখান, শ্রীনগর, পাশের ফরিদপুর, শরিয়তপুর তথা দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ সৃষ্টি হবে। ঢাকা শহরের যানজটকে পাশ কাটিয়ে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে উত্তরবঙ্গকে দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে মিলিত করবে ব্রিজটি। এছাড়াও ব্রিজটি ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক এবং জিনজিরা কেরানীগঞ্জ-নবাবগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে। বিক্রমপুরের সিরাজদিখান ও শ্রীনগর উপজেলাসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের গুরুত্বপূর্ণ নিত্য প্রয়োজনীয় কৃষিজ্ঞাতপণ্য প্রতিনিয়ত ঢাকায় আসতে পারবে। ব্রিজটিকে স্থানীয়, শ্রমিক ও কর্মকর্তারা জাহাঙ্গীর খান ব্রিজ হিসেবেই পরিচয় দেন।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, প্রকল্পের প্রায় ২৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ যাবে ইনশাআল্লাহ। আর জমি অধিগ্রহণের কাজ মুন্সিগঞ্জ অংশে ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে যৌথ জরিপ শুরু হবে। আর কেরানীগঞ্জ অংশের অধিগ্রহণও দ্রুত সময়ে শুরু হবে। এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।