ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভাষা সৈনিক দবিরুল এখন ইতিহাস

ফিরোজ আমিন সরকার, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১২
ভাষা সৈনিক দবিরুল এখন ইতিহাস

ঠাকুরগাঁও : ৫২’র ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে আইয়ুব সরকারের নির্যাতনে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণকারী ছাত্রলীগের কেদ্রীয় কমিটির সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ঠাকুরগাঁওয়ের ভাষা সৈনিক মরহুম অ্যাডভোকেট দবিরুল ইসলাম এখন শুধুই ইতিহাস।

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির অভাবে ইতিহাসের স্মৃতি থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

ভাষা সাংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী ত্যাগী এই সৈনিকের অবদান নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে স্বীকৃতির পাশাপাশি পাঠ্য বইয়ে তার জীবন-দর্শন অন্তর্ভূক্ত করার দাবি উঠেছে তার পরিবার ও এলাকাসীর পক্ষ থেকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যাদের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন সেদিন বেগবান হয়েছিল ছাত্রলীগের কেদ্রীয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি (১৯৪৯-১৯৫৩) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আইন বিভাগের ছাত্র, সাবেক এমএলএ, পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি (যুক্তফ্রন্ট) ও ভাষা সৈনিক মরহুম দবিরুল ইসলাম তাদেরই একজন। ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে আইয়ুব সরকারের নির্যাতনের শিকার হন তিনি।

জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে বালিয়াড়াঙ্গি উপজেলার পাড়িয়া গ্রাম। এখানে ঘুমিয়ে আছেন ভাষা সৈনিক মরহুম দবিরুল ইসলাম।

পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাকে ৫২`র ভাষা আন্দোলনের সময় এই গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে দিনাজপুর জেলা কারাগারে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। জেল থেকে বেরিয়ে ৫৪`র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়ী হন। কিন্তু কারাগারে নির্যাতনের কারণে অল্প বয়সে ১৯৬১ সালে মারা যান তিনি।

এদিকে অযতেœ অবহেলায় পড়ে আছে ঠাকুরগাঁও শহরের কালিবাড়িস্থ সাধারণ পাঠাগার চত্বরে তার স্মৃতিস্তম্ভটি। ওই স্থানটি এখন গোচারণ ভূমি আর সৌচাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জাতি ভুলতে বসেছে তার আবদানের কথা।

কীর্তিমান এ রাজনীতিবীদের জীবন সম্পর্কে আরেক ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ফজলুল করিম বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে দবিরুল ইসলামের সঙ্গে তিনি কারাবন্দী হন। দিনাজপুর কারাগারে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। এতে তার হার্টের একটি ভাল্ব নষ্ট হয়ে যায়। যার কারণে ধুকে ধুকে মারা যান তিনি। ’
 
ভাষা সৈনিকের ছেলে বুলবুল আহম্মেদ আক্ষেপ করে বলেন, ‘ষাট বছর পরেও জাতীয়ভাবে ভাষা সৈনিক বাবাকে (দবিরুল ইসলাম) মূল্যায়ন করা হয়নি। সরকারি উদ্যোগে তার স্মৃতি সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যা কিছু করা হয়েছে তার সব কিছুই পারিবারিক প্রচেষ্টায়। ভাষা সৈনিক এর পরিবারের সদস্যরা চান তার স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হোক এবং তার জীবনী পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। যাতে নতুন প্রজন্ম ভাষা আন্দোলন এবং এসব ঘটনা জানতে পারে। ’
 
দবিরুলের স্ত্রী আবেদা ইসলাম জানান, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার স্বামীর ভালো সম্পর্ক ছিল। এখন পর্যন্ত তার স্বামীকে জাতীয়ভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি।

তিনি বর্তমান সরকারের কাছে কিছুই চান না। শুধু তার স্বামীর রাষ্ট্রীয় মূল্যায়ন চান।

লোহাগাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলার রহমান জানান, দবিরুল ইসলামের জীবন দর্শন, ভাষার জন্য অবদানের কথা নতুন প্রজন্মকে জানাতে তার জীবনী পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভূক্ত করা হলে নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি মরেও বেঁচে থাকবেন।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক শহিদুজ্জামান জানান, এ বছর দু’জন ভাষা সৈনিককে সম্মাননা দেয়া হবে। তাদের মধ্যে মরহুম দবিরুল ইসলাম একজন। এছাড়া ভাষা সৈনিক দবিরুল ইসলামের স্মৃতিস্তম্ভ আধুনিকীকরণ করার উদ্যোগ নেয়া হবে।

তার জীবনী পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভূক্তির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখবেন বলে বাংলানিউজকে জানান তিনি।

ভাষা সৈনিক মরহুম দবিরুল ইসলামের রাজনৈতিক দর্শন, জীবন সংগ্রাম জাতীয় পাঠ্য পুস্তকে অন্তর্ভূক্তিকরণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে জানাতে সরকার উদ্যোগ নেবে এ দাবি ঠাকুরগাঁওবাসীরও।

বাংলাদেশ সময় : ০৯৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ