ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায়ে হেরফের

সুমন কুমার রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২১
বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায়ে হেরফের

টাঙ্গাইল: বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় নিয়ে চরম অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালকেরা।  

তারা বলছেন, সেতু কর্তৃপক্ষ সরকারি নিয়মে নয়, বরং নিজেদের নিয়মেই টোল আদায় করছে।

কারো কাছ থেকে বেশি, আবার কারো কাছ থেকে কম টোল নেওয়া হচ্ছে।

সব যানবাহন পারাপারের জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুতে গত ১৮ নভেম্বর রাত ১২টার পর থেকে বাড়তি টোল আদায় করার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এ কারণে ওই রাত থেকেই সব যানবাহন থেকে আগের টোলের চেয়ে বাড়তি টোল আদায় শুরু করেছে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ রয়েছে, প্রজ্ঞাপনে জারি করা নির্ধারিত টোলের চেয়েও বাড়তি টোল দিতে হচ্ছে বেশিরভাগ ট্রাকচালক ও মালিকদের। এতে করে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। আবার কিছু ট্রাক থেকে নেওয়া হচ্ছে পূর্বের টোলের চেয়েও কম টোল। এ নিয়ে ওই ট্রাকের মালিক-চালকরাও খুশি হচ্ছেন। তারা বলছেন, সরকার তাদের টোল কমিয়ে দিয়েছে। এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, বিআরটির স্থাপন করা সফটওয়্যারের কারণে টোল আদায়ে কম বেশি হচ্ছে।

সোমবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় গিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ এবং যানবাহনের চালকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর মোটরসাইকেল ৩০ টাকা, হালকা যানবাহন (কার, জিপ ইত্যাদি) ৪০০ টাকা, ছোট বাস (২৯ আসন বা তার কম) ৫৫০ টাকা, বড় বাস (৩০ আসন বা তার বেশি) ৮০০ টাকা, ছোট ট্রাক (পাঁচ টনের কম) ৭৫০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (পাঁচ থেকে আট টন) ১০০০ টাকা, বড় ট্রাক (আট টনের বেশি) ১২৫০ নির্ধারণ করা হয়।

পরে ২০১১ সালে প্রথম দফায় এ সেতুতে টোল আদায় বৃদ্ধি করা হয়। তাতে ১০ টাকা বাড়িয়ে মোটরসাইকেল ৪০ টাকা, হালকা যানবাহন ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৫০০ টাকা, ছোট বাস ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা, বড় বাস ১০০ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ৯০০ টাকা, ছোট ট্রাক  ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ১০০ টাকা বাড়িয়ে ১১০০ টাকা এবং বড় ট্রাক থেকে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে টোল নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৪০০ টাকা।

কিন্তু বর্তমানে চলতি বছরের ২ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় টোল বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি করে সেতু কর্তৃপক্ষ। সেখানে ১০ টাকা বাড়িয়ে মোটরসাইকেল ৫০ টাকা, হালকা যানবাহন ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা, হালকা যানবাহন (মাইক্রো, পিকআপ এক টনের কম) ৬০০ টাকা, ছোট বাস ৭৫০ টাকা, বড় বাস ১০০০ টাকা, ছোট ট্রাক ১০০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ১২৫০ টাকা এবং বড় ট্রাক (আট টন থেকে ১১ টন পর্যন্ত) ১৬০০ টাক, ট্রাক (তিন এক্সেল) ২০০০ টাকা, ট্রেইলার (চার এক্সেল পর্যন্ত) ৩০০০ টাকা ও ট্রেইলার (চার এক্সেলের অধিক) ৩০০০+ প্রতি এক্সেল ১০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ট্রেন চলাচলের জন্য বাৎসরিক এক কোটি টাকা টোল নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও তা ১৮ নভেম্বর রাত ১২টার পর থেকে কার্যকর শুরু হয়।

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর এলাকার সোহাগ রানা নামের মাহিন্দ্র পিকআপ ভ্যানের চালক জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বঙ্গবন্ধু সেতু পার হচ্ছেন। তার ছোট ট্রাকটি (সিরাজগঞ্জ ন-১১-০১৬৬) এক হাজার ৪৯০ কেজি (দেড় টনের কম)। এজন্য তার আগে টোল দিতে হতো ৫০০ টাকা। বর্তমানে ১০০ টাকা বাড়িয়ে তার গাড়ির টোল ৬০০ টাকা করা হলেও বর্তমানে দেড় টনের কম ট্রাকগুলোতে দ্বিগুণ টোল আদায় করা হচ্ছে। এ কারণে তাকে বর্তমানে এক হাজার টাকা করে টোল দিয়ে সেতু পার হতে হয়।

ঢাকা মেট্রো-ন-১৯-৪৭২৮ (দেড় টনের কম) ট্রাকের চালক আয়নাল হোসেন জানান, আগে তিনি ৫০০ টাকায় বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়েছেন কিন্তু বর্তমানে ১০০ টাকা টোল বৃদ্ধি করলেও বর্তমানে তাদের টোল দ্বিগুণ দিতে হচ্ছে। এ কারণে ব্যবসার খাতিরে তাকে বাধ্য হয়ে এক হাজার টাকা টোল দিয়েই সেতু পার হতে হচ্ছে।

এদিকে গত ৭ মে দুপুর ১২টা ৪৯ মিনিটে (টোলের রশিদ মোতাবেক-হালকা যানবাহন) ঢাকা মেট্রো-ন-১৭-০৫৪৮ (দেড় টন) ট্রাকটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়। সে সময় ওই ট্রাকের চালক সেতুতে টোল দেন ৮৫০ টাকা। কিন্তু টোল আদায় বৃদ্ধির প্রঙ্গাপনে তিনি জানতে পারেন, সেতু পার হতে তাকে ১০০০ টাকা টোল দিতে হবে। কিন্তু প্রজ্ঞাপন জারির পর তিনি সেতু পার হওয়ার সময় টোল দেওয়ার জন্য এক হাজার টাকার একটি নোট দিলেও তাকে টোলের রশিদের সঙ্গে ৪০০ টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি মনে করেছেন দেড় টন ট্রাকের টোল মনে হয় কমিয়ে দিয়েছে অথবা ভুল করে ৬০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। গত ২৮ নভেম্বর রাত ৯টা ৫৮ মিনিটে ঢাকা মেট্রো-ন-১৭-০৫৪৮ (দেড় টন) একই ট্রাকটি নিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হন। সে সময়ও তার কাছ থেকে ৬০০ টাকা টোল নেওয়া হয়। তবে তার ওই রশিদে লেখা ছিল মাইক্রোবাস/পিকআপ।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বাংলানিউকে জানান, সফটওয়্যারে যেভাবে আসে, সেভাবেই টোল আদায় করা হয়। আর এ সমস্যাটা মূলত বিআরটির কারণে হচ্ছে। কোনো গাড়ি বড় দেখালে সেটি হয়তো কাগজপত্রে কম দেখানো হয়েছে। আবার ছোট গাড়ি কাগজপত্রে বড় দেখানো হয়েছে। এ কারণেই টোল আদায়ে কম বেশি হচ্ছে। এতে তাদের কোনো হাত নেই বলেই জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২১
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।