ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চট্টগ্রামের সঙ্গেই থাকতে চায় ফেনীবাসী

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২১
চট্টগ্রামের সঙ্গেই থাকতে চায় ফেনীবাসী

ফেনী: দেশে আরও দুটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর ফেনীবাসীর মধ্যে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বিবেচনাধীন নতুন বিভাগ মেঘনার (কুমিল্লা) সঙ্গে থাকার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন ফেনীর সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

তাদের একটাই দাবি- ‘নতুন কোনো বিভাগে নয়, চট্টগ্রামেই থাকতে চাই’।

এদিকে ‘চট্টগ্রামে ছিলাম, আছি থাকবো’-এ শ্লোগানকে সামনে রেখে এরই মধ্যে একটি নাগরিক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। দাবি বাস্তবায়নের জন্য সেই কমিটি আন্দোলনের ঘোষণাও দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গণস্বাক্ষর, প্রচারপত্র বিলি, মানববন্ধনসহ অবস্থান কর্মসূচি।

জীবনাচার, ব্যাবসা-বাণিজ্য ও শিল্প-সংস্কৃতির আদান-প্রদানসহ চট্টগ্রামের সঙ্গে নানাভাবে জড়িয়ে আছে ফেনীবাসী। দীর্ঘদিনের এই বন্ধন ছিঁড়ে এ জেলার মানুষ নতুন বিভাগ মেঘনার (কুমিল্লা) সঙ্গে যুক্ত হতে নারাজ। ফেনীর মানুষ বলছেন নতুন যে নামেই বিভাগ হোক তাদের আপত্তি নেই। তবে তারা বর্তমানে যেভাবে আছেন, সেভাবেই চট্টগ্রাম বিভাগে থাকতে চান।

এ বিষয়ে কথা হয় ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন মেঘনা নামে একটি বিভাগ গঠন করা হবে। আমি মনে করি কুমিল্লা নয়, মেঘনা নামে যে সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন এটি যথার্থ হয়েছে। তবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফেনীবাসীর আবেদন, নবগঠিত বিভাগ নয়, আমরা চট্টগ্রামের সঙ্গেই থাকতে চাই।

নিজাম হাজারী আরও বলেন, ‘আমি ফেনীর নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপ করেছি, তারা প্রস্তাবিত মেঘনা বিভাগের সঙ্গে থাকতে চান না। প্রধানমন্ত্রীকে বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আমরা চট্টগ্রাম বিভাগে ছিলাম, আছি এবং থাকতে চাই। চট্টগ্রামের সঙ্গে ব্যাবসা, বাণিজ্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলাসহ বিভিন্নভাবে ফেনীর আত্মিক সম্পর্ক।

জেলার বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ সর্বোপরি চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক তাদের দীর্ঘ দিনের ব্যবসা। অপরদিকে কুমিল্লার সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি হয়নি।

ফেনী চেম্বার অব কমার্স সভাপতি আইনুল কবির শামীম বলেন, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের একটা বোঝাপড়া রয়েছে। এ জেলার অধিকাংশ মানুষ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামমুখী। সে সুবাধে চট্টগ্রাম বিভাগের সঙ্গে থাকতেই এখানকার ব্যাবসায়ীরা স্বস্তি বোধ করেন।

এদিকে জেলার সোনাগাজীর উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষরা মনে করছেন নতুন বিভাগে গেলে তারা দেশের বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু শিল্প জোনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। এ শিল্পজোনে সোনাগাজীর হাজার হাজার একর জমি থাকলেও তারা এর সুবিধা পাবেন না। সে কারণে তারা চট্টগ্রামের সঙ্গেই থাকতে চান।
এ বিষয়ে কথা হয় সোনাগাজীর পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ইকোনোমিক জোনের জন্য সোনাগাজী থেকে ৩০ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ হয়েছে, এখানে ১৫ থেকে ১৬ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। নতুন বিভাগে গেলে আমরা বঙ্গবন্ধু শিল্পজোনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।

ফেনী জেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব বলেন, চট্টগ্রামের সঙ্গে ফেনীর সম্পর্ক এক দিনের নয়। মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক চট্টগ্রামের সঙ্গে ফেনীর অনেক গৌরবগাঁথা জড়িয়ে আছে। আছে অনেক স্মৃতি, এসব কারণে এ জেলার মানুষ চট্টগ্রামকে নিজেদের শহর মনে করে থাকে।

ফেনী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও ‘আমরা ফেনীবাসীর’ যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নুর হোসেন বলেন, চট্টগ্রামের সঙ্গে বহুকাল আগ থেকে জড়িয়ে আছে ফেনীবাসী। দলমত নির্বিশেষে সব পেশাজীবী মহল একমত পোষণ করেছেন চট্টগ্রামে থাকার বিষয়ে।

সাংস্কৃতিক কর্মীরা বলছেন দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের সঙ্গে তাদের একটা মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে। সাংস্কৃতিক নানা বিষয়ে চট্টগ্রামের সঙ্গে ফেনীর মিল রয়েছে। অপরদিকে কুমিল্লার সঙ্গে এ বিষয়ে ফেনীর বিস্তর ফারাক। এ যৌক্তিকতায় তারা নতুন বিভাগে নয়, চট্টগ্রামের সঙ্গেই থাকতে চায়।

নাট্য সংগঠক নাসির উদ্দিন সাইমুম বলেন, চট্টগ্রামের সঙ্গে তাদের সাংস্কৃতিক আদান-প্রধান দীর্ঘদিনের। এ মেলবন্ধন কোনভাবেই যেন নষ্ট না হয়। বিভাগ প্রশ্নে চট্টগ্রামের সঙ্গে থাকাই শ্রেয় হবে।

ফেনীর শিক্ষার্থীরা বলছেন স্কুল ও কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় এলে তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নই দেখে। দীর্ঘদিন ধরে এমনটাই হয়ে আসছে।

ফেনী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, এ জেলার শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রামমুখী। উচ্চ শিক্ষায় তারা ঢাকার পরই চট্টগ্রামে আগ্রহী। সে বিবেচনায় নতুন বিভাগে না গিয়ে চট্টগ্রামে থাকাই ভাল হবে।

খেলা-ধুলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন কোনভাবেই তারা অন্য বিভাগে যাওয়ার বিষয়ে একমত নয়। চট্টগ্রামের সঙ্গে তাদের যে দীর্ঘদিনের বোঝাপড়া তা নতুন কোনো বিভাগের সঙ্গে সম্ভব নয়। ক্রীড়া সংগঠনক শরীফুল ইসলাম অপু বলেন, লম্বা সময় ধরে আমরা চট্টগ্রামের সঙ্গে কাজ করেছি। চট্টগ্রামের সঙ্গে আমাদের দারুণ যোগাযোগ।   বিভাগ পরিবর্তন হলে এটির ব্যত্যয় ঘটবে।

চট্টগ্রামের সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা বাণিজ্যসহ নানা সম্পর্ক রয়েছে। মানচিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় ফেনীর সঙ্গে চট্টগ্রামের প্রায় ৬০ কিলোমিটার সীমান্ত। অপরদিকে কুমিল্লার সঙ্গে তা মাত্র ১৫ কিলোমিটার। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দেলনের নেত্রী বীর কন্যা প্রতীলতা, সূর্য সেনের স্মৃতি বিজড়িত চট্টগ্রামের সঙ্গে ফেনীর মানুষের দীর্ঘদিনের আত্মিক সম্পর্ক। সে কারণেই এ জেলার মানুষের প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন ফেনীকে চট্টগ্রাম বিভাগের সঙ্গে রাখার বিষয়টি উনি যেন পুনর্বিবেচনা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২১
এসএইচডি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।