ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রাজশাহী নগরীর অধিকাংশ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২১
রাজশাহী নগরীর অধিকাংশ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ!

রাজশাহী: রাজশাহী মহানগরীতে এখন বহুতল ভবনের সংখ্যা দুইশর বেশি। এর মধ্যে ১০ তলা এবং এর অধিক তলা বিশিষ্ট ভবনের সংখ্যা অর্ধশতের বেশি।

 

সময়ের সঙ্গে হু হু করে আবাসিক ও বাণিজ্যিক বহুতল ভবনের সংখ্যা বাড়লেও বেশিরভাগ ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা হয়নি।

একটি ভবনের সঙ্গে আরেকটি ভবন প্রায় লেগে আছে। আবার এসব স্থাপনার অধিকাংশই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও আকস্মিক দুর্যোগে বেরিয়ে যাওয়ার বিকল্প কোনো পথ নেই।

এমনকি ভবন নির্মাণের পর ফায়ার সার্ভিসের বসবাসের উপযোগী ছাড়পত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও ভবন মালিকরা এর তোয়াক্কা করেন না। রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করলেও এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) জানায়, রাজশাহী মহানগরীতে ২০০৯ সাল থেকে বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর আগে মহানগরীতে ১০ তলা ভবন বলতে ছিল কেবল সিঅ্যান্ডবি মোড়ে জীবন বীমার ভবনটি। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ১০ তলা ভবন এখন ৫০টির বেশি। নগর ভবন থেকে শুরু করে আশপাশে আরও চারটি এবং সাহেববাজার এলাকায় ১০টি, আলুপট্টির মোড়, লক্ষ্মীপুর মোড়, সাগরপাড়া, উপশহর, বর্ণালীর মোড়, আমবাগান, তেরোখাদিয়া, সিপাইপাড়া, কাজীহাটা ও পদ্মা আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে এসব ভবন।  

১০ তলার নিচে এবং পাঁচ তলার ঊর্ধ্বে ভবনের সংখ্যা কয়েকশ। ২০১৩ সালে মহানগরীতে ৬০০ ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে পাঁচ তলা পর্যন্ত ৫৬৫টি এবং ছয়ের অধিক তলা ভবনের অনুমোদন ছিল ৩৫টির। ২০১৪ সালে অনুমোদন দেওয়া হয় ৫০২টির।  

এর মধ্যে ৪৮৬টি পাঁচতলা পর্যন্ত এবং ছয়ের অধিক তলার ভবন ৩৫টি। এরপর ২০১৫ সাল থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত আরও ৩৫৪টি ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।  

এর মধ্যে ৩৩৬টি পাঁচ তলা পর্যন্ত এবং ছয়ের অধিক তলার ভবন অনুমোদন ছিল ৩৩টি। এর পরের ৫ বছরে আরও অন্তত দেড় হাজার ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়।

রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্ধারণে পুরো মহানগরীকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে ২০১৯ সালে নানামুখী জরিপ চালায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। জরিপে উঠে আসে যে, মহানগরীতে কয়েকশর বেশি বহুতল ভবন থাকলেও তার অধিকাংশ ভবনে নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। রাজশাহীতে ১০-১২ বছর আগে যেসব বহুতল ভবন তৈরি হয়েছে, সেগুলো অগ্নিনিরাপত্তার কোনো তোয়াক্কা করেনি।  

তাই এসব ভবনে যেকোনো মুহূর্তে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। গত চার-পাঁচ বছরে যেসব ভবন তৈরি হয়েছে, সেগুলোর হাতেগোনা কয়েকটি ভবনেই কেবল অগ্নিনিরাপত্তা আইন মানা হয়েছে।  

বাকিগুলোর অবস্থা যেমন-তেমন। অথচ ফায়ার সার্ভিসের নিয়ম অনুযায়ী অনাপত্তিপত্র পাওয়ার শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে ভবনে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, অগ্নিনির্বাপণ কাজের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল, হিট ডিটেক্টর, স্মোক ডিডেক্টর, ছাদের ওপর পানির ট্যাংক, ভূগর্ভস্থ পানির ট্যাংক, সাধারণ সিঁড়িপথের পাশাপাশি জরুরি নির্গমন পথ থাকতে হবে।

রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন, ভবন নির্মাণের পরে তিন মাসের মধ্যে ভবনে দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সব প্রকার প্রস্তুতি আছে কি না, সেই মর্মে একটি সার্টিফিকেট নিতে হয়। কিন্তু বিধিমালা না মানা ও মালিকদের অবহেলায় সেই সার্টিফিকেট নিতে অনেক সময় লেগে যায় চার-পাঁচ বছর। আবার অনেক ভবনের মালিক তোয়াক্কা করে না এই ছাড়পত্র নেওয়ার। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে তারা রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ), সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব ভবনের বিষয়ে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদর দপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কয়েকটি মাপকাঠিতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করি। তার মধ্যে দুর্বল ভবন, ভেঙে পরার সম্ভবনা ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও আকস্মিক দুর্যোগে বেরিয়ে যাওয়ার বিকল্প পথ না থাকাসহ কয়েকটি মাপকাঠিতে রাজশাহীর অধিকাংশ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। বেশিরভাগ বহুতল ভবনেই নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নেই। ফলে ভবন চিহ্নিত করার পর আর আমাদের সেভাবে করণীয় কিছু থাকে না।

রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানত জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ করে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে প্রশাসনকে জানিয়েছে। এ বিষয়ে তারা ব্যবস্থা নেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২১
এসএস/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।