ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘হেঁটে যাই বিদ্যালয়, দেহ মন সুস্থ রয়’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২১
‘হেঁটে যাই বিদ্যালয়, দেহ মন সুস্থ রয়’

ঢাকা: বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমণের ২৫ শতাংশের কারণ যান্ত্রিক যান। প্রতিদিন বিদ্যালয়ে একটি বড় সংখ্যক ট্রিপ হয়।

এ ট্রিপগুলো যদি হেঁটে বা সাইকেলে হয়, তাহলে উল্লেখযোগ্য হারে কার্বন নির্গমণ কমিয়ে আনা ও জলবায়ু বিপর্যয় রোধে অবদান রাখা সম্ভব।

বিদ্যালয়ে হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর অক্টোবর মাসকে ‘একটিভ অ্যান্ড সেফ রুট টু স্কুল’ মাস হিসেবে পালন করা হয়। বিদ্যালয়ে হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াতের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যেও ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব।

বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশের কারণ অসংক্রামক রোগ এবং শারীরিক কার্যক্রমের অভাবে এর ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। বিদ্যালয়ে হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াত খুব সহজেই শারীরিক কার্যক্রমের অভাব পূরণ করতে পারে। সেই সাথে বন্ধুদের সাথে সামাজিকীকরণ এবং আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে জানার সুযোগ বৃদ্ধি পায়, ফলে মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। পাশাপাশি কোভিড সংক্রমণের আশঙ্কাও কমে যায়।

শিক্ষার্থীকে হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াতে উৎসাহিত করে তোলার ক্ষেত্রে হাঁটা ও সাইকেলে যাতায়াতের পরিবেশ উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।

সোমবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে করোনা ও অসংক্রামক রোগ হ্রাসে বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ চাই শীর্ষক সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

কর্মসূচিতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাহাজ্জোত হোসেন বলেন, এই বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াত করে। কিন্তু হাঁটার উপযোগী পরিবেশ না থাকায় তাদের নানাবিধ সমস্যা এমনকি দুর্ঘটনারও সম্মুখীন হতে হয়। আমরা হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াতের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্বজুড়ে অক্টোবর মাসটি ‘একটিভ অ্যান্ড সেফ রুট টু স্কুল’ মাস হিসেবে পালিত হয়। ঢাকা শহরে হেঁটে যাতায়াতের নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও অধিকাংশ মানুষই হেঁটে যাতায়াত করে। শিক্ষার্থীদের জন্য যদি নিরাপদে হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ নিশ্চিত করা হয় তাহলে শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রতিটি বয়সের মানুষের হেঁটে যাতায়াত নিরাপদ হবে।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা প্রয়োজন। স্বল্প দূরত্বে হেঁটে যাতায়াতের অভ্যাস গড়ে তোলা হলে একদিকে যেমন যাতায়াত চাহিদা পূরণ হবে তেমনি বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ যেমন- হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ইত্যাদি প্রতিরোধ সম্ভব হবে। উন্মুক্ত স্থানে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের আশঙ্কা কমে যায়। ফলে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।

আয়োজনে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে হেঁটের যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, অযথা হর্ন না বাজানো, পর্যাপ্ত ফুটপাত তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ, সমতলে রাস্তা পারাপারে জেব্রা ক্রসিং, পথচারী পারাপার সাইন, পাবলিক টয়লেট, অবৈধ পার্কিং বন্ধ এবং পথচারীদের জন্য বসার ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবি তুলে ধরে।

এ সময় তারা ‘স্বল্প দূরত্বে হেঁটে যাও, চিকিৎসার খরচ বাঁচাও’, ‘হেঁটে যাই বিদ্যালয়, দেহ মন সুস্থ রয়’ প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে।

সভাপতির বক্তব্যে রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেছা বলেন, নগরে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ-পার্ক না থাকায় শিশুদের প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রম হয় না। প্রতিদিন স্কুলে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে শিশুদের প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রমের চাহিদা পূরণ সম্ভব। এজন্য শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিয়মিত হেঁটে যাতায়াতে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের জন্য নিরাপদে হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক মো. কবীরুল ইসলামের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের কর্মকর্তা এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২১
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।