ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অত্যাধুনিক রাইস সাইলো

খাদ্য সংরক্ষণে আসবে আমূল পরিবর্তন

মেহেদী নূর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২১
খাদ্য সংরক্ষণে আসবে আমূল পরিবর্তন স্টিলের তৈরি অত্যাধুনিক রাইস সাইলো -বাংলানিউজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: স্টিল রাইস সাইলো, আধুনিক পদ্ধতিতে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের এক নতুন অধ্যায়। এই সাইলোর বিশেষত্ব হল এটি অধিক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং সংক্রিয় পদ্ধতিতে কিট নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তাপমাত্রা ও আদ্রতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

ফলে খাদ্যশস্যর গুণগত মান তিন বছর পর্যন্ত অক্ষুন্ন থাকবে।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার সারাদেশে নির্মাণ করছে ৮টি বিশ্ব মানের স্টিল রাইস সাইলো। এর মধ্যে একটি নির্মিত হচ্ছে দেশের পূর্বাঞ্চলের ধান ও চালের বড় মোকাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে।

করোনার কারণে প্রকল্পের কাজ কিছুটা ধীরগতি হলেও বর্তমানে এগিয়ে চলছে অত্যাধুনিক ও আন্তজার্তিক মানের এ স্টিল রাইস সাইলো নির্মাণ কাজ। এরই মধ্যে প্রায় ৭৪ ভাগ শেষ হয়েছে ৩০টি বিন সম্পন্ন সাইলো প্রকল্পের কাজটি । ১ লক্ষ পাঁচ হাজার মেট্রিকটন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই সাইলো নির্মাণের ফলে খাদ্য শস্য সংরক্ষণে আমূল পরিবর্তন আসবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৫৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে আশুগঞ্জে মেঘনার তীরে স্টিল রাইস সাইলো নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এ কাজের জন্য ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল তমা কন্সট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড-ফ্রেমি জয়েন্ট ভেঞ্চারের সঙ্গে চুক্তি হয়।

প্রথম পর্যায়ে বাউন্ডারি নির্মাণ শেষে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে প্রকল্পের ২য় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা সঙ্কটের কারণে তা নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। তাই  প্রকল্পের নির্মাণ কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত করা হয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিশাল এলাকা জুড়ে চলছে সাইলো নির্মাণের কাজ। জমি থেকে ২৮ মিটার উচ্চতার ৩০টি বিন ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যে ২৯ বিনের কাজ পুরোপুরি শেষ হলেও একটি বিনের কাজ শেষ পর্যায়ে। বিনগুলোতে এখন চলছে সংক্রিয় পদ্ধিতে খাদ্যের তাপমাত্রা ও আদ্রতা নিয়ন্ত্রণ ও কিটনাশক পদ্ধতির কাজ।

তমা কন্সট্রাকশনের সিনিয়র প্রকৌশলী স্নেহাশীষ রায় বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি বিনের ধারণ ক্ষমতা সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিকটন। ৩০টি বিনের মধ্যে ২৯ বিনের লিফটিং কাজ শেষ। আরও একটি বাকি আছে। এছাড়াও সাইলো সংশ্লিষ্ট অপারেশনাল কক্ষ নির্মাণের কাজও চলছে। করোনার কারনে মালামাল সিপমেন্ট না থাকায় প্রকল্পের কাজ কিছুটা পিছিয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায আশা করছি ২০২২ সালের নির্ধারিত সময়েই প্রকল্পের নির্মাণের কাজ শেষ হবে।

আশুগঞ্জ চাতাল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল সিকদার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের গুদামের ধারণ ক্ষমতা আড়াই হাজার মেট্রিকটন। এ বছর বরাদ্দকৃত চাল পেয়েছি ছাব্বিশ হাজার মেট্রিকটন। ফলে চালগুলি সরকারকে দিতে গেলে আমাদের গুদামকে ১২ বার খালি করতে হয়। ফলে নির্ধারিত সময়ে মালগুলো দিতে পারি না। সাইলোটি চালু হলে সরাসরি চাল সাইলোতে চলে যাবে। আগামী বোরো মৌসুমে উৎপাদিত চাল চুক্তি অনুযায়ী সরকারকে দিতে পারব।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সুবীর নাথ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামে প্রতিবছর ৪০ বছর হাজার মেট্রিকটন খাদ্যশস্য সংরক্ষিত হয়। তবে ধারণ ক্ষমতা কম হওয়ায় খাদ্য শস্য প্রতিনিয়ত ডেসপাসের মাধ্যমে চট্টগ্রামের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামে সংরক্ষণ করা হয়। এতে পরিবহন খরচ বৃদ্ধিসহ সংগ্রহ কার্যক্রমে দুভোর্গ পোহাতে হত। সাইলোর কার্যক্রম শুরু হলে খাদ্যশস্য সংগ্রহে সরকারি ক্রয় অভিযানে আরও গতিশীলতা বাড়ার পাশাপাশি প্রতিবছর সরকারের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা পরিবহন ব্যয় সাশ্রয় হবে।

প্রকল্পের সম্বনয়ক বিমুল ভূইয়া বাংলানিউজকে বলেন, আগামী বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করে অপারেশনাল কাজ শুরু হবে। এই সাইলোতে আধুনিক পদ্ধতিতে খাদ্য শস্য সংরক্ষণ করা হবে এবং নাইট্রোজনের মাধ্যমে খাদ্যশস্যর মান বজায় রাখা হবে। সাধারণ গুদাম গুলোতে ছয় মাস খাদ্যশস্য সংরক্ষণ রাখা গেলেও আধুনিক এ পদ্ধতিতে তিন বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে।

জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর সরকার যে ক্রয় অভিযান চালায় তার একটি বড় অংশ পরিচালিত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এবং আশুগঞ্জ এই চাহিদা মেটানো হয়। ফলে এই সাইলোটিতে আধুনিক উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ করা যাবে। আগামী বছর থেকেই সাইলোর কার্যক্রম শুরু হবে বলে খাদ্য বিভাগ জানিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২১
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।