ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ব্যক্তির অপরাধে সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২১
ব্যক্তির অপরাধে সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না

চাঁদপুর: আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, মদিনার সনদে বলা হয়েছে সব গোত্র ও সম্প্রদায়ের লোক শান্তিপূর্ণভাবে সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে। তাদের মধ্যে যদি কেউ আক্রান্ত হয়, তাহলে তাকে সবাই মিলে প্রতিহত করবে।

সবাই তাদের স্বাধীনতা ভোগ করবে।

কোনো সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তি যদি অপরাধ করে, সেটি তার ব্যক্তিগত অপরাধ হবে। ওই ব্যক্তির অপরাধের জন্য কোনো সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না। আল্লাহর রাসূল (সা.) এসব কথাগুলো মানব জাতির উদ্দেশ্যে বলেছেন।

মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে চাঁদপুর সদর উপজেলা অডিটোরিয়ামে জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত সম্প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা এ দেশ পেয়েছি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা সব ধর্মের লোকজনের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে কি চেয়েছি, একটি অসম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন একটি বাংলাদেশ। যেখানে প্রতিটি মানুষ তার সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বসবাস করবে। তার কারণ কি? কেন আমরা অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চেয়েছি। পাকিস্তান যে কাঠামোর মধ্যে তৈরি হয়েছিল, সে কাঠামোর মধ্যে বাঙালি বার বার নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছে ধর্মের দোহাই দিয়ে। সেজন্যই আমরা চেয়েছি বাংলার আবহমানকালের যে ইতিহাস, সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে পাশাপাশি বাস করবার যে ইতিহাস। সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলো। তারপর আবার শুরু হলো সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থান। আমরা দেখলাম স্বাধীনতাবিরোধীরা সমাজে ও রাষ্ট্রে কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো। কিভাবে তারা ক্ষমতার উচ্চ শিখর পর্যন্ত আরোহন করলো। আমরা যদি দেখি আমাদের ’৭১,’৭৫, ২০০১, ২০০৪, ২০১৩ ও ২০১৪ এর যারা ঘাতক, তারা কি এক এবং অভিন্ন নয়। তাদের সবই এই নাশকতা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, স্বাধীনতা ও দেশবিরোধী এবং দেশের অস্থিতিশীলকারী অপচেষ্টাকারী। এরা সব এক এবং অভিন্ন। আজকে যখন আঘাত এসেছে, তখন আমরা কেন বলছি এগুলো সেই অপশক্তিরই কাজ। সব অপরাধী তার একটি নমুনা রেখে যায়। বিগত সবগুলো ঘটনাতে আমরা অপরাধে সেসব চিহ্নগুলো দেখি। সে অপশক্তি আজও কিন্তু সক্রিয়।

তিনি আরও বলেন, একটা সময় আমরা আমাদের সম্মান ও মর্যাদা হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমরা একটি সন্ত্রাস, দুর্নীতি, নির্যাতন ও নিপীড়নের জনপদে পরিণত হয়েছিলাম। সে দেশটি আবার বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে এবং মানুষকে সম্মান ও মর্যাদা দিচ্ছে। এসব উন্নতি দেখে  ’৭১ ও ’৭৫ এর ঘাতকরা সুখী নয়। তারা আমাদের এই মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন এবং অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে চায়। সেজন্য এ চক্রটি অত্যন্ত তৎপর। তারা আজকের সময়টা কেন বেছে নিয়েছে। আজকে ২০২১ সাল। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ সাধারণ নির্বাচন। একটি নির্বাচিত সরকার যখন দুই থেকে আড়াই বছর পার করে দেয়। তারপর শুরু হয়ে যায় পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি। তারা সেই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশকে অস্থিতিশীল এবং অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে সরকারের সম্মানকে ক্ষুণ্ন করে।

মন্ত্রী বলেন, আমরা দেখছি তারা এখন নানান রকম দাবি তুলছে। যে দাবির কোনো ভিত্তি নেই। তারা আবার বলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মৃত, জনগণ ও সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত প্রত্যাখ্যান করেছে। অর্থাৎ তারা জনমনে একটি বিভ্রান্তি তৈরি করতে চায় এবং সেই বিভ্রান্তির মধ্যে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়।  
কাজেই আমাদের সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তারা বলছে দেশে গণতন্ত্র নেই। তাহলে যে দলটি জনবিচ্ছিন্ন। তারা কিভাবে আমাদের গণমাধ্যমে কথা বলার জন্য এত সময় পায়। তারা আমাদের সরকারি দলের নেতাদের চাইতে বেশি সময় টিভিতে কথা বলে।

দীপু মনি বলেন, নির্যাতন ও নিপীড়নকারীদের দল আজকে গণতন্ত্রের কথা বলে। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করেছে। তারা জাতির পিতা এবং আমাদের নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেছে। সমস্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। তারা স্বাধীনতাকে ভুলুণ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাবার চেষ্টা করেছে। এতকিছুর মধ্যেও তারা আরেকটি কাজ করেছে। অর্থাৎ ৭১ এর পরাজিত শক্তি রাজাকার, আলবদর, আল শামছ ও যুদ্ধাপরাধীদের সমাজে পুনর্বাসিত করেছে এবং একই সঙ্গে একটি কাজ দীর্ঘদিন ধরে করেছে, এখনো করছে। সেটি হলো তারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির মধ্যে বার বার অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে।  

আজ আমাদের আওয়ামী পরিবারের বহু সংগঠনে, বহু জায়গায় কথা ওঠে কারো পরিচয় নিয়ে। আমরা দেখি এই অনুপ্রবেশকারীদের। এই অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে হবে। কারণ এই অনুপ্রবেশকারীরা ভেতরে থেকে সিঁদ কাটে। ভেতরে থেকে এরা আমাদের বন্ধনকে ছিন্ন ও সম্প্রীতিকে নষ্ট করে। এদের বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন-চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ওসমান গণি পাটওয়ারী, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এম এ ওয়াদুদ।

সাংবাদিক এম আর ইসলাম বাবুর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কবির আহমেদ ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান।

ধর্মীয় ব্যাক্তিদের মধ্যে বক্তব্য দেন মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা হাসান, মসজিদের ইমাম মাওলানা আল-আমিন, সনাতন ধর্মের পক্ষে সুভাষ চন্দ্র রায়, অজয় কুমার ভৌমিক, অ্যাডভোকেট রনজিত রায় চৌধুরী ও খ্রিস্টান ধর্মের পক্ষে মনিন্দ্র বর্মন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।