ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গ্রামীণ নারী দিবস

সাপিয়ার সংসার চলে মাছ ধরে!

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২১
সাপিয়ার সংসার চলে মাছ ধরে!

পাথরঘাটা, (বরগুনা): অল্প বয়সে বিয়ে হয় সাপিয়ার বেগমের। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় সন্তান না হওয়ার অপরাধে তাকে বাবার বাড়িতে ফেলে রেখে যায় স্বামী।

পরে দ্বিতীয় বিয়ে না করেই ৪১ বছর ধরে অন্যের বাড়িতে একটি কুঁড়েঘরে থাকেন সাপিয়া। পেটের দায়ে খালে-বিলে নিজে জাল দিয়ে মাছ শিকার করেন। মাঝেমধ্যে দিন মজুরি করে যা উপার্জন করেন তা দিয়েই কোনো ধরনের দিন কাটে সাপিয়ার।

বলছি এক অসহায় নারী সাপিয়ার কথা। স্বামী ফেলে রেখে যাওয়ার পরে ৪১ বছরেও বিয়ে করেননি তিনি। ছবিটি দেখে হয়তো অনেকেই ভাবনায় পরে যাবেন; ভাববার বিষয়ও। একজন বৃদ্ধ নারী কেমন করে এভাবে জাল মেরে মাছ ধরতে পারে? ইচ্ছা আর শক্তি সমন্বয় ঘটলে যে দারিদ্র্য জয় করা যায় সেটি প্রমাণ করে দিয়েছেন প্রান্তিক নারী সাপিয়া বেগম।  

অন্য নারীর মতো নিজের ইচ্ছা আর শক্তি দিয়ে সফলতার চূড়ায় না পৌঁছলেও নিজের কাছে নিজেই মনে করছেন সফল। নিজেই চালাচ্ছেন সংসার। এই বৃদ্ধ বয়সেও একজন নারী জাল দিয়ে মাছ ধরছেন এমন জলন্ত উদাহরণ বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার প্রান্তিক জনপদের নারী সাপিয়া বেগম। এমন কাজ করে এলাকার মানুষের কাছে অতি আপনজন হয়েছেন তিনি।

উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানী গ্রামে বসবাস করছেন সাপিয়া বেগম। তার সঙ্গে কথা বলতেই কেঁদে উঠলেন। ১৯৬৯ সালের আগস্ট মাসে পটুয়াখালীর গলাচিপার আউলিয়ারপুর এলাকার জালাল আহম্মেদ তালুকদারের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের ১০ বছর পরও তার গর্ভে কোন সন্তান না আসায় বাবার বাড়িতে ফেলে রেখে যায় স্বামী। এরপরই নেমে আসে সাপিয়ার জীবনের দুর্বিষহ অবস্থা।

সাপিয়া বেগম বলেন, বিয়ের ১০ বছর পর আমাকে ফেলে রেখে যায় স্বামী। বাবার কোনো জমি না থাকায় একমাত্র বোনের কাছ থেকে ১ কেজি চাল ১১টাকায় বিক্রি করে তা দিয়ে খুলনায় গিয়ে পানের দোকান দেই। ১২ বছর সেখানে একজনের বাড়িতে থাকি। কয়েক বছর পানের দোকান দিয়ে কিছু টাকা জমিয়ে তা দিয়ে খুলনায় ১৩ শতাংশ জমি কিনে মাছের চাষ করি। সেখানে এক মাছ চোরকে ধরে থাপ্পড় মারার অপরাধে আমাকে তাড়িয়ে দেয়। পরে পাথরঘাটার তালুকের চরদুয়ানীর শাহজাহান তালুকদারের বাড়িতে আশ্রয় নেই। তারাই আমাকে তাদের বসতবাড়ির মধ্যে থাকতে দেয়। সেখানেই একটি কুঁড়েঘরে থাকি। এ বাড়ির পাশে খালে-বিলে জাল দিয়ে মাছ ধরি, যা পাই তা বিক্রি করে নিজের কোনোভাবে পেট চালাই। তাছাড়া সিজনে ধান, মুগডাল তুলি এবং অন্যের বাড়িতেও কাজ করি।

তিনি বলেন, আমাকে ফেলে রেখে যাওয়ার পর কয়েকবার স্বামীর কাছে স্ত্রীর দাবি নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু রাখেননি। আমি অনেকবার অনুরোধ করেছি, অন্তত ঘরের কাজের জন্য হলেও আমাকে রেখে দিতে কিন্তু তাও তার বিবেকে নাড়া দেয়নি। কোনো ধরনের দিন চলছে আমার। যে বাড়িতে থাকছি তারা আমাকে সব সময় খোঁজ-খবর নিচ্ছে। ঘরে কোন খাবার না থাকলে তারা খাবার দেয়, কাপড়-চোপড়ও দেয়। কিন্তু বিধবা বা বয়স্ক ভাতা পাই না।

মোসা চম্পা বেগম বলেন, আমাদের বাড়ির মধ্যে এক টুকরো জায়গা দিয়েছি। সেখানে ঘর করে থাকছেন তিনি। আমরা সব সময়ই তার দেখাশুনা করছি। তিনি অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ এবং মাছ শিকার করে। আমরা তাকে এসব কাজ করতে বারণ করলেও তিনি কারো অনুগ্রহ নিয়ে থাকতে চান না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, তাকে সরকারের পক্ষ থেকে বাড়ি অথবা দোকান করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো। আর বয়স্ক ভাতা বা বিধবা ভাতা না পেলে তাও দেওয়ার চেষ্টা করবো।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২১
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।