ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

স্কুলছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করে টিকটক ভিডিও

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
স্কুলছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করে টিকটক ভিডিও

পাথরঘাটা (বরগুনা): বরগুনার পাথরঘাটায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে (১৪) শ্লীলতাহানির ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে ‘টিকটক ভিডিও’ তৈরি করে তারই সহপাঠী নাইম (১৫) নামে এক যুবক। পরে নাইম ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।

বিষয়টি নিয়ে ওই স্কুলছাত্রীর মা থানায় মামলা দিতে গেলে মামলা না নেওয়ায় আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছে ওই ছাত্রী ও তার মা রুমা বেগম।

বখাটে নাঈম উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাজির খাল গ্রামের সৌদি প্রবাসী সগির খানের ছেলে ও আনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। সগীর খানের স্ত্রী ছেলে নাঈমকে নিয়ে পৌর শহরে ভাড়া বাসায় থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাঈম বখাটে এবং উশৃঙ্খল প্রকৃতির ছেলে। বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে ইভটিজিংসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে পাথরঘাটা কেএম মডেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই বহিষ্কারের পরে তিনি আনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

ওই স্কুলছাত্রী বাংলানিউজকে বলেন, নাঈম দীর্ঘদিন ধরে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতো। এছাড়াও বিভিন্ন সময় পথে সে উত্ত্যক্ত করতো। এর জের ধরে গত বুধবার স্কুল ছুটির পর ক্লাস থেকে বের হওয়ার আগেই নাইম আমার স্কুলব্যাগ নিয়ে বাইরে চলে যায়। আমিও ব্যাগের জন্য নাইমের কাছে গেলে সে আমাকে জড়িয়ে ধরে শ্লীলতাহানি করে। তখন পাশ থেকে গোপনে আমারই আরেক সহপাঠী সবুজ ভিডিও করে। যা পরবর্তীকালে নাঈম সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। প্রথমে বিষয়টি লজ্জায় কাউকে জানায়নি। কিন্তু শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আমার এক প্রতিবেশী ভিডিওটি আমাকে দেখালে বিষয়টি আমার মাকে জানাই।

ওই স্কুলছাত্রীর মা বলেন, নাঈম আমার মেয়েকে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করতো। এ নিয়ে এক বছর আগে নাঈমের মামা ইউসুফের কাছে বিচার দিলেও কোনো সমাধান পাইনি। এরপর গত দুইদিন আগে আমার মেয়েকে নিয়ে একটি আপত্তিকর ভিডিও সে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছে। ভিডিওটি দেখার পর আমার মেয়েকে মারধরও করি। এরপর বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানালে তিনি বিচার করবেন বলে আমাদের সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন।

প্রধান শিক্ষক নাঈমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় শুক্রবার রাত ৯টার দিকে পাথরঘাটা থানার গিয়ে বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশারকে জানাই এবং মামলা করার কথা বলি। কিন্তু ওসি দীর্ঘক্ষণ আমাদের বসিয়ে রেখে তার একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে পরে আসতে বলে। তখন আমি তাকে মামলা না নিলে একটি জিডি নেওয়ার কথা বললে তিনি বলে দেন, ‘ওই ছেলেকে দেখলে তাকে যেন ফোন দেই, এই বলে পাঠিয়ে দেন। ’

এ বিষয়ে আনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল জব্বার হোসেন জানান, স্কুল ছুটির পরে স্কুল গেটের বাইরে এ ধরনের একটি অপ্রীতিকর ঘটনার কথা শুনেছি। এ বিষয়ে নাইমের পরিবারকে অবহিত করলে তারা নাইমকে হাজির করতে পারেনি। সে কারণে আমরা বিষয়টি নিয়ে সমাধানে যেতে পারিনি।

এ ব্যাপারে নাঈমের মায়ের মোবাইল ফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আপনার কিছু জানার থাকলে সামনে আসেন কথা বলবো বলে ফোন কেটে দেন। কিছুক্ষণ পরে আবার ফোন দিয়ে বলে, বিষয়টি পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন ও ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষন সমাধান করে দেবে।

পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার সাংবাদিকদের জানান, রাতে স্কুলছাত্রী ও তার মা থানায় এসে বিষয়টি জানিয়ে গেছেন। তারা মামলা করার জন্য আসেননি বরং মৌখিক অভিযোগ করতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন। তারা লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।