ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ইভ্যালির বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছিল বিসিসি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
ইভ্যালির বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছিল বিসিসি

ঢাকা: ক্রেতা ঠকানোর অভিযোগ তুলে এক বছর আগে ইভ্যালির ধামাকা অফারের বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছিল বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (বিসিসি)।

পাশাপাশি কমিশনে ডাকা হয়েছিল ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেলকে।

পরবর্তীতে এ ধরনের অফার দেওয়া হয়নি। বিষয়টি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলেও এ বিষয়ে কোনো সংবাদ হয়নি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন কমিশনের চেয়ারপার্সন মো. মফিজুল ইসলাম। তখন সংবাদ প্রকাশ  হলে এতো মানুষ ঠকতো না বলে দাবি করেছেন তিনি।

বিসিসি সূত্র জানায়, ইভ্যালির ওয়েবসাইটে ‘ঈদ ধামাকা’ নামে একটি অফার গত ১২ আগস্ট, ২০২০ তারিখে প্রকাশ হয়। তাতে বিভিন্ন পণ্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্যাশব্যাক অফার রয়েছে যার পরিমাণ ৮০ শতাংশ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত। বিষয়টি নজরে আসায় স্বপ্রণোদিত হয়ে তা বাজারে প্রতিযোগিতার ওপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করছে কিনা সে সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের জন্য বিসিসির উপ-পরিচালক (ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি ও গবেষণা) আনোয়ার-উল-হালিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর ২০২০ সালের নভেম্বরে ইভ্যালির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

ইভ্যালির যে ‘ঈদ ধামাকা অফার’ নিয়ে বিসিসির স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলার সূত্রপাত, সেই অফারের শর্তাবলী অংশের ৪ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে ‘ঈদ ধামাকা ক্যাম্পেইনে পার্শিয়াল পেমেন্ট অ্যালাউড না, ফুল পেমেন্ট করতে হবে। ক্যাশব্যাক ইভ্যালি ব্যালেন্সে যোগ হবে পেমেন্ট করার ৩ দিন পর। যা পরবর্তীতে ইভ্যালিতে যে কোনো রেগুলার শপ থেকে কেনাকাটায় ব্যবহার করা যাবে । সেক্ষেত্রে পণ্যের  ৬০ শতাংশ ব্যালান্স থেকে এবং ৪০ শতাংশ নতুন পেমেন্ট করতে হবে। ’ ওই শর্তের কারণে ৮০% -১৫০% ক্যাশব্যাক অফারে যে ক্রেতা আকৃষ্ট হয়ে ইভ্যালি থেকে পণ্য ক্রয় করবেন, তাকে ক্যাশব্যাক সুবিধা নিতে হলে আরেকটি পণ্য সেই পণ্যের মূল্যের ৪০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করে নিতে হবে। ইভ্যালি ওই অফা একবারই অনলাইনে দিয়েছিল, যার স্থায়িত্ব ছিল স্বল্প সময়। পরবর্তীতে আর এ ধরনের অফার দেওয়া হয়নি।


আইনজীবীর মাধ্যমে ইভ্যালি জানায়,  ১০০ শতাংশ ক্যাশব্যাক সুবিধা চালুর লক্ষ্যে তাদের টেকনিক্যাল টিম কাজ করছে এবং ২৪-০২-২০২১ তারিখ থেকে তাদের সফটওয়্যার উন্নয়নের কাজ শেষ হবে। তখন থেকে গ্রাহক ১০০ % ক্যাশব্যাক ব্যালেন্স সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন। বর্তমানে তাদের আওতায় প্রায় ৪০ হাজার পণ্য আছে, এর মধ্যে ৫-৭ হাজার পণ্যের ওপর ক্যাশব্যাক সুবিধা চালু আছে। ১০০ শতাংশ ক্যাশব্যাক সুবিধা চালু না থাকলেও প্রতিটি পণ্যের ওপর ১৫-২০ % ক্যাশব্যাক সুবিধা গ্রাহক ব্যবহার করছে।

বর্তমানে ইভ্যালির  গ্রাহক সংখ্যা আনুমানিক ৪০ লাখ। প্রযুক্তিযুক্ত অফার বাতিল করতে হলে সফটওয়্যারের ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ ডিজাইন পরিবর্তন করতে হবে। যা প্রক্রিয়াধীন আছে। ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এটা বাতিল করা হবে বলে কমিশনকে জানায় ইভ্যালি।

কমিশনের চেয়ারপার্সন মো. মফিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ইভ্যালির ঈদ ধামাকা অফারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম। এটা পরে বন্ধও করা হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এটা সেভাবে প্রচার হয়নি। আমরা আদালত, তাই এটা প্রচার বা সংবাদ সম্মেলন করতে পারি না। বিষয়টি প্রচার হলে এতো মানুষ ফান্দে পড়তো না। ’

তিনি আরও বলেন, ইভ্যালির ঈদ ধামাকা অফারে ৪০ শতাংশ নিউ পেমেন্ট করার শর্ত দিয়ে ক্রেতাকে দ্বিতীয় পণ্য বা ধারাবাহিকভাবে পণ্য কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। অধিকন্তু, ক্রেতাকে অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ অর্থ নগদ ব্যয় করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে ক্রেতা ক্যাশব্যাকের সুবিধা নিতে পণ্য ক্রয়ে বাধ্য হবে। সুতরাং এক্ষেত্রে ক্রেতাকে উৎসাহিত না করে শর্তের বেড়াজালে পণ্য কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। সাধারণত একজন ক্রেতা কোনো পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পছন্দ বা বাছাই করে । কিন্তু ইভ্যালির অফারের জালে আটকে পরা ক্রেতা যে পণ্য ক্রয় করতে যাবে সেটি ইভ্যালির মাধ্যমে কিনতে চাইবে। যেটি পণ্যের গুণগত মান বা বিক্রয়োত্তর সেবা বা অন্য কোনো কারণে নয়, মূলত ক্যাশব্যাক অফারের সুবিধা নেওয়ার জন্য। এক্ষেত্রে ক্রেতার পছন্দের অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে। পরবর্তী পণ্য কেনার ক্ষেত্রে মূল্যের যৌক্তিকতা যাচাইয়ের অধিকার বিনষ্ট হচ্ছে, পণ্যের গুণগত মান যাচাইয়ের অধিকার থেকে ক্রেতারা বঞ্চিত হচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
এমআইএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।