ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফরিদপুরে কদর বেড়েছে পাটকাঠির

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
ফরিদপুরে কদর বেড়েছে পাটকাঠির

ঢাকা: সোনালি আঁশের জন্য খ্যাত ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা। আর এই পাটের কোনো কিছুই এখন আর ফেলনা নয়।

আগে জ্বালানি, ঘরের বেড়া ও ছাউনি তৈরিতে পাটকাঠির ব্যবহার থাকলেও এখন বিশ্ববাজারে পাটকাঠির ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। সোনালি আঁশের পাশাপাশি রুপালি কাঠিতে নতুন সম্ভাবনা দেখছে এ এলাকার চাষিরা।

তাইতো ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় কদর বেড়েছে পাটকাঠির। এছাড়াও এ উপজেলায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে পাটের। পাট ধুয়ে শুকিয়ে সোনালি আঁশ এখন ঘরে তুলছেন কৃষকরা।

তবে শুধু আঁশ নয়, পাটকাঠিতেও কৃষকরা দেখছেন আশার আলো। সোনালি আঁশের সঙ্গে কদর বেড়েছে পাটকাঠিরও। এ উপজেলায় বাড়ির আঙিনা, পাকা সড়ক, মাঠ-ঘাট যেখানে চোখ যায় সেখানেই চোখে পড়ে পাটকাঠি শুকানো ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। পাটের বাম্পার ফলনের ফলে কৃষকের মুখে হাসি ও আনন্দ এক সঙ্গে মিশে গেছে।

ফরিদপুরের নয় উপজেলার মধ্যে আলফাডাঙ্গায় পাটের আবাদ বেশ হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাটকাঠি আগের মতো অবহেলায় ফেলে না রেখে যত্ন করে শুকিয়ে মাচা তৈরি করে রাখছেন চাষিরা।

স্থানীয়রা জানান, পাটকাঠির ব্যবহার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছিল শুধু জ্বালানি হিসেবে। আর কিছু ভালো মানের পাটকাঠি পানের বরজে আর ঘরের বেড়া তৈরিতে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন আর মূল্যহীনভাবে পড়ে থাকে না পাটকাঠি।



বিশ্ববাজারে পাটকাঠির চাহিদা বাড়ায় আঁশের পাশাপাশি পাটকাঠির দামও ভালো পাওয়া যায়। অনেক কৃষক পাটের দাম খুব একটা ভালো না পেলেও পাটকাঠির দাম দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

উপজেলার আলফাডাঙ্গার মিঠাপুর গ্রামের পাট চাষি বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘গত কয়েক বছর আগেও পাটকাঠির তেমন চাহিদা ছিল না। কিন্তু এখন বেশ চাহিদা। দূর-দুরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পাটকাঠি কিনছেন, ভালো দামও দিচ্ছেন।

নাওয়াপাড়া গ্রামের পাট চাষি মুরাদ হোসেন জানান, পাটকাঠি এক সময় শুধু রান্না-বান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া ও ছাউনির কাজে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন এ পাটকাঠি দেশের পানের বরজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে কার্বন ফ্যাক্টরির কারণে পাটকাঠির চাহিদা ও মূল্য বেড়েছে।

দেলোয়ার হোসেন নামে আরেক ব্যক্তি জানান, বিভিন্ন দেশে পাটকাঠির ছাই কার্বন পেপার, কম্পিউটার প্রিন্টার ও ফটোকপি মেশিনের কালি, আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপকরণ, মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনী পণ্য, এয়ারকুলার, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও ক্ষেতের সার উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত পাটকাঠির চাহিদা দেশের পাশাপাশি বাড়ছে বিশ্ব বাজারেও।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপন প্রসাদ সাহা জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ছয় হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। শুরুর দিকে বৃষ্টি না হওয়ায় কিছুটা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছিলেন কৃষকরা। তবে পরে ঝুঁকি কাটিয়ে উঠেছেন তারা। সবমিলিয়ে এবার পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ পাটকাঠিও পাওয়া যাবে। পাটের আঁশের পাশাপাশি পাটকাঠিরও কদর, চাহিদা ও দাম ভালো।

আলফাডাঙ্গার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদ এলাহী বাংলানিউজকে বলেন, গুণে ও মানে ফরিদপুরের পাট দেশ সেরা। এ কারণে জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য হিসেবে পাটকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। ফরিদপুর জেলার স্লোগান হলো-‘সোনালি আঁশে ভরপুর, ভালোবাসি ফরিদপুর’। পাটের সোনালি আঁশের পাশাপাশি পাটকাঠিরও বেশ চাহিদা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।