ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৫ হাজার চুরির ঘটনায় জড়িত সিলেটি সাঈদ, ২৪ মামলার আসামি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১
৫ হাজার চুরির ঘটনায় জড়িত সিলেটি সাঈদ, ২৪ মামলার আসামি

ঢাকা: আট মাস কারাভোগ শেষে জেল থেকে সম্প্রতি বেরিয়েই ফের একই কারবারে যুক্ত হন গার্মেন্টস পণ্য চোরাই চক্রের মূলহোতা মো. সাহেদ ওরফে সিলেটি সাঈদ। বিদেশে রফতানির গার্মেন্টস পণ্য চুরি করে বিক্রি করে দিত এই চক্র।

গার্মেন্টস পণ্য চুরির কাজে সিলেটি সাহেদের রয়েছে শত শত ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান। তার পরিকল্পনা ও যোগসাজশে ৫ হাজারেরও বেশি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ২৪টি মামলাও রয়েছে।

গার্মেন্টস পণ্য চুরির অর্থে দেশ-বিদেশে গড়ে তুলেছেন বাড়ি-গাড়িসহ অঢেল সম্পদ। সিলেটের মৌলভীবাজারে রয়েছে তার বিশাল অট্টালিকা। সিলেটি সাঈদের এক স্ত্রী সন্তানসহ লন্ডনে থাকেন। সেখানেও রয়েছে তার অঢেল সম্পদ। চুরির অর্থেই প্রায় ৫ শতাধিক ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপের মালিক হয়েছেন এই চক্রের মূলহোতা সিলেটি সাঈদ।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর নেটওয়ার্ক ক্লোথিং লিমিটেড নামে একটি গার্মেন্টসের ১৭ হাজার ১৫২ পিস তৈরি পোশাক বিদেশে রফতানির উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে নেওয়ার পথে চুরির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা হয়।

বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর রাত পর্যন্ত রাজধানীর উত্তরা এবং কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানা এলাকা থেকে গার্মেন্টস পণ্য চুরি চক্রের মূলহোতা সিলেটি সাঈদসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের একটি টিম।

গ্রেফতার চক্রের অন্যরা হলেন—রাজ্জাক, ইউসুফ, মাইনুল, আলামিন, দুলাল হোসেন ও খায়রুল। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪ হাজার ৭০৫ পিস পোশাকসহ দুটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করা হয়।

সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবত এজেন্সি, চালক ও শ্রমিকদের যোগসাজশে গার্মেন্টস পণ্য চুরি করছে সংঘবদ্ধ চোরাই চক্র। সম্প্রতি সংঘটিত চুরির ঘটনায় চোরাই মালামাল ও ২টি কাভার্ডভ্যান উদ্ধার এবং গার্মেন্টস পণ্য চোরাই চক্রের মূলহোতাসহ ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

হাফিজ আক্তার বলেন, গত ১১ মে জয়ন্তী নিট ওয়্যার লিমিটেডের তৈরি পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ২৮ হাজার ৮২০ পিস পণ্য শিপমেন্ট করতে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে পাঠায়। বিদেশে মালামাল পৌঁছানোর পর জানা যায়, ওই শিপমেন্টে ১১ হাজার পণ্য কম ছিল। এজন্য বিদেশি বায়ার প্রতিষ্ঠানটিকে ২৮ হাজার ৯০৮ ডলার জরিমানা করে। এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।

ওই ঘটনায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা দায়ের করে গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ। এ প্রেক্ষিতে ইমরান মোবারক ও ইব্রাহিম নামে তিনজনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।

অন্যদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর নেটওয়ার্ক ক্লোথিং লিমিটেড নামের গার্মেন্টস ১৪৩১ কার্টনে মোট ১৭ হাজার ১৫২ পিস পোশাক বিদেশে রফতানির উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যায়। মালামাল শিপমেন্টের সময় গণনায় ৫০০০ পিস পোশাক কম পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা রুজু হয়।

তেজগাঁও জোনাল টিম তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে উত্তরা এলাকায় চোরাই গার্মেন্টস মালামাল ও ১টি কাভার্ডভ্যানসহ রাজ্জাক, ইউসুফ, খায়রুল ও মাইনুলকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারদের দেওয়া তথ্যমতে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানার নিমসার এলাকা থেকে চোরাই গার্মেন্টস মালামাল ও ১টি কাভার্ডভ্যানসহ আল-আমিন ও দুলালকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং তাদের দেওয়া তথ্যমতে পুরো চক্রের মূলহোতা মো. সাহেদকে গ্রেফতার করা হয়।

৫ হাজার চুরির সঙ্গে জড়িত সিলেটি সাঈদ
গ্রেফতার সিলেটি সাঈদের বিরুদ্ধে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ২৪টি মামলা রয়েছে। চট্টগ্রামে তিনি ৬টি মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন। চোর চক্রের সহযোগীদের সহায়তায় তিনি বিভিন্ন সময় ৪ থেকে ৫ হাজার চুরির ঘটনায় হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য।

অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, সিলেটি সাঈদের এক স্ত্রী সন্তানসহ লন্ডনে থাকেন। সাঈদের মালিকানাধীন বিশাল অট্টালিকা রয়েছে মৌলভীবাজারে। তার রয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ। এসব যানবাহন তিনি ভাড়ায় ব্যবহার করতেন গার্মেন্টস পণ্য শিপমেন্টের কাজে। গার্মেন্টস পণ্য পরিবহনে যুক্ত তার ট্রাক, কাভার্ডভ্যান এবং এজেন্সি, চালক ও শ্রমিকদের সহায়তায় সংঘবদ্ধ চোরাই চক্র নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।

চোরাই গার্মেন্টস পণ্য কোথায় বিক্রি করতেন ও কারা কিনতেন জানতে চাইলে হাফিজ আক্তার বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্তে বেশ কয়েকজনের নাম জেনেছি। তদন্তের স্বার্থে বলছি না। দেশের ছোট ছোট কিছু বাইং হাউজে যাচ্ছে সেসব চোরাই গার্মেন্টস পণ্য। আর ওই সব ছোট বাইং হাউজগুলো বিদেশি ছোট ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দেয়। দেশের বিভিন্ন মার্কেটেও যাচ্ছে সেসব চোরাই গার্মেন্টস পণ্য।

এত মামলা নিয়ে কীভাবে সিলেটি সাঈদ গার্মেন্ট পণ্য চোরাই চক্র নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন জানতে চাইলে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছেন। সবশেষ একটি মামলায় তিনি আট মাস কারাভোগ করেন। তবে জেল থেকে বেরিয়েই ফের জড়িয়ে পড়েন গার্মেন্টস পণ্য চোরাই কারবারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১
এসজেএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।