ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সুপ্রিয়র তৈরি ভাস্কর্য নজর কাড়ছে সবার

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
সুপ্রিয়র তৈরি ভাস্কর্য নজর কাড়ছে সবার

খাগড়াছড়ি: কোন প্রশিক্ষণ নেই। তারপরও গৌতম বুদ্ধ, পশুপাখি, নৌকার চিত্র অবিকল কাঠে খোদাই করে ফুটিয়ে তোলেন।

ছবি দেখে গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি করেন ত্রিমাত্রিক ভাস্কর্য।  চারুকলার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তার। কখনো কাউকে এসব তৈরি করতেও দেখেননি। নিজে নিজেই শিখেছেন এসব।
বলছি মহালছড়ির মধ্য আদামের সুপ্রিয় চাকমার কথা। মহালছড়ি উপজেলা থেকে ১২ কিলোমিটর দূরে মুবাছড়ি ইউনিয়নে মধ্য আদাম এলাকায় টিনের ছাউনি আর বেড়ার দুই কক্ষ বিশিষ্ট ঘরে বসবাস তার। স্ত্রী জ্ঞান বালা চাকমা আর এক সন্তানকে নিয়ে তার সংসার।

সরেজমিনে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ঘরের আঙিনায় চটের বস্তা বিছিয়ে হাতুড়ি নিয়ে গাছের গুঁড়ি খোদাই করছেন। এ সময় তিনি সেগুন গাছের গুঁড়ি দিয়ে বনরুই আর ময়ূর তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন। বাড়ির উঠানে একটি টেবিলের ওপর দেখা গেল, কাঠের তৈরি অনেক ধরনের ভাস্কর্য। সেগুলোর মধ্যে ছিল- নৌকা, শাপলা ফুল, গৌতম বুদ্ধ, মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা, মানচিত্র, বানর, পেঁচা, হরিণসহ নানা ধরনের ভাস্কর্য।

কী করে ভাস্কর্য তৈরি করা শিখলেন জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অভাবের কারণে পড়াশোন করতে পারিনি। ছোটবেলা থেকে তাঁতের পোশাক, হাত পাখা তৈরি করতাম। তিন বছর আগে আমার তৈরি একটি হাতপাখা দেখে বন বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞারত ভিক্ষু আকাশ প্রদীপ জ্বালানোর জন্য একটি গাছের গুঁড়ি দিয়ে হাঁস তৈরি করার জন্য অনুরোধ করেন। এরপর পনের দিনের মধ্যে একটি হাঁস তৈরি করে দেই। হাঁসটি দেখে সবাই প্রশংসা করতে থাকেন। পরে কাঁঠাল গাছ দিয়ে একটি গৌতম বুদ্ধের ভাস্কর্য তৈরি করি। এটি তিন হাজার টাকা দিয়ে একজন কিনে নেন। এরপর থেকে ছবি দেখে বিভিন্ন ভাস্কর্য তৈরি করছি।

সুপ্রিয় চাকমা বলেন, বসত ভিটে ছাড়া নিজের কোন জায়গা জমি নেই। বর্গা জমি চাষ করে এবং প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছি। একমাত্র ছেলে পড়ালেখা করছে অষ্টম শ্রেণিতে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে ভারী কাজ ও করতে পারি না।
তিনি বলেন, বিভিন্ন ভাস্কর্যের বিভিন্ন দাম। তবে আমি কখনো দামাদামি করিনা। ভাস্কর্য দেখে কেউ পছন্দ করলে তাদের ইচ্ছে মতো দাম দিয়ে যান। কোনো কোনো ভাস্কর্যে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়েছি।

সাধারণ কাঠ মিস্ত্রিরা যে ধরনের ছেনি-বাটালি আর হাতুড়ি দিয়ে কাজ করেন, তিনিও সে সব যন্ত্র ব্যবহার করে কাঠ খোদাই করেন। সহায়তা পেলে ভাস্কর্য তৈরির আধুনিক যন্ত্রপাতি কিনবেন এবং মহালছড়ি বাজার কিংবা সিঙ্গিনালা বাজারে একটা দোকান দেবেন তিনি।

সুপ্রিয় চাকমার স্ত্রী জ্ঞান বালা চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমার স্বামীর কাজ দেখে অনেকে এসে ভাস্কর্য নিয়ে যান। বাজারে গিয়ে কখনো বিক্রি করতে হয়নি। একটু সহযোগিতা পেলে আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারবে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রিপন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, কোন প্রশিক্ষণ ছাড়া সুপ্রিয় চাকমা ভাস্কর্য তৈরি করেন। বিষয়টি সবাই জানার পর দোকান বা অন্য কোথাও গিয়ে এসব বিক্রি করতে হয়না। ঘরে এসেই কিনে নিয়ে যান। উনার যদি আরও কিছু সরঞ্জাম থাকতো তাহলে বহুদূর এগিয়ে যেতে পারতেন।

স্থানীয়রা মনে করেন সুপ্রিয় চাকমা সরকারি সহযোগিতা পেলে হয়ে ওঠবেন একজন স্বনামধন্য কারু শিল্পী। এছাড়া বিত্তশালীরা তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসুক এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
এডি/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।