ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অধ্যক্ষ ও ছাত্রলীগ নেতা একে অপরকে গুলি করার হুমকি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২১
অধ্যক্ষ ও ছাত্রলীগ নেতা একে অপরকে গুলি করার হুমকি অধ্যক্ষ মোসাদ্দেক হোসেন ও ছাত্রলীগ নেতা দ্বীন ইসলাম

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজের অধ্যক্ষকে গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছিল দ্বীন ইসলাম নামে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। তিনি নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সহ- সম্পাদক।

এবার ওই ছাত্রলীগ নেতা অভিযোগ করলেন, তাকেও গুলি করে মেরে পুকুরে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন ওই কলেজের অধ্যক্ষ মোসাদ্দেক হোসেন। বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) দিনগত রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন দ্বীন ইসলাম।  

এর আগে ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে বুধবার (২৫ আগস্ট) রাতে থানায় জিডি করেন অধ্যক্ষ মোসাদ্দেক হোসেন। যাতে তিনি উল্লেখ করেন, তাকেও গুলি করে হত্যার হুমকি দেন ছাত্রলীগ নেতা দ্বীন ইসলাম।
 
জিডিতে ছাত্রলীগ নেতা উল্লেখ করেন, ‘বুধবার দুপুরে গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজের শিক্ষার্থী তানভীন ইসলামের সঙ্গে আমার সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকায় দেখা হয়। তখন তানভীন ইসলাম কান্না করছিল। আমি কান্নার বিষয় জানতে চাইলে সে আমাকে জানায়, এইচএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করতে পারছে না। সে এ বছর পরীক্ষা দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন অধ্যক্ষ। কিন্তু ওই শিক্ষার্থীর কলেজের বেতন, ল্যাবরেটরি ফিসহ যাবতীয় ফি পরিশোধ করা আছে। সে নিয়মানুযায়ী সব অ্যাসাইমেন্ট জমা দিয়েছে। ’ 

‘তানভীন আমার পূর্বপরিচিত এবং সে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। আমি তার কথা শুনে মানবিক দিক বিবেচনা করে মোসাদ্দেক স্যারকে প্রথমে ফোন দেই, কথা বলতে চাই। পরে স্যার আমাকে কলেজে আসতে বলেন। প্রথমে আমি স্যারের অনুমতি নিয়ে অফিসে প্রবেশ করি। স্যার আমাকে বসতে বলেন, আমার পরিচয় জানতে চান। তারপর আমি আমার স্থানীয়, পারিবারিক ও রাজনৈতিক পরিচয় স্যারকে জানাই। আমি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। তিনি আমার পরিচয় শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে অকথ্যভাষায় গালি-গালাজ করতে থাকেন। তারপরও আমি স্যারকে বারবার অনুরোধ করি, যাতে তিনি তানভীনকে এইচএসসির ফরম ফিলাপ করতে দেন। তখন তিনি আমাকে বলেন, এ কলেজ আমার নিয়মে চলে। এটা তোলারাম কলেজ না। ছাত্রলীগ সভাপতি এসে আমার সঙ্গে বসে থাকে। তুই আসছিস আমার সঙ্গে কথা বলতে। এখনই আমার রুম থেকে বের হয়ে যা। ’

ছাত্রলীগ নেতা দ্বীন ইসলাম জিডিতে আরও উল্লেখ করেন, ‘তখন আমি স্যারকে বিনয়ের সঙ্গে বলি, আপনি আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করতে পারেন না। তিনি আমার ওপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে রুমে অবস্থানরত অন্যান্য শিক্ষকসহ ছাত্রদল নেতা মো. শাকিল ও বহিরাগত যারা তার আশপাশে বসা ছিল তাদের বাইরে নিয়ে গিয়ে আমাকে মারার জন্য বলেন এবং গালাগালি করতে থাকেন, এ বলে তুই কার অনুমতি নিয়া কলেজে আসছিস। তখন তাদের মধ্যে আমি যাদের চিনতে পেরেছি তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলেন ছাত্রদল নেতা মো. শাকিল, কলেজের শিক্ষক নিলয়, আবু তাহের তারা আমার হাত ধরে ফেলেন এবং আমাকে প্রহার করতে উদ্ধত হন। এক পর্যায়ে আমি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি- এখানেতো আমার দোষ নেই, আপনারা এমন করছেন কেন? কিন্তু তখনও মোসাদ্দেক স্যার বললেন, ওরে মার, ওরে বুঝাইয়া দে আমি কে? তারপর আমি কোনোমতে মোসাদ্দেক স্যারের রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আমার রাস্তা আটকে দেন এবং আমার পেছনে আসতে থাকেন। পরে শাকিলকে বলেন, আমি যেন কোনোমতে সিঁড়ি দিয়ে নামতে না পারি এবং আমাকে গুলি করে মেরে পুকুরে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন। তখন আমি কোনো উপায় না পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রিপন স্যারকে ফোন দেই এবং আমাকে উদ্ধার করতে বলি। ফোন দিতে দেখে তখন তারা অফিসে ঢুকে যান। এ সুযোগে আমি কোনো রকমে নিজের জীবন বাঁচিয়ে বের হয়ে চলে আসি। ’

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘যে শিক্ষার্থীর জন্য ছাত্রলীগ নেতা কলেজে আসছে, তার বাবা দু’বার অঙ্গীকারনামা দিয়েছেন। তাছাড়া ওই ছাত্র ইউটিউব থেকে কপিপেস্ট করে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েছে। তারপর তার বাবার সঙ্গে আমার কথা হয়। তার বাবা লজ্জিতবোধ করেন। তার কিছুক্ষণ পরে দ্বীন ইসলাম নামে একজন আমাকে ফোন দেয়। তখন সে আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। আমি তখন নারায়ণগঞ্জে যাব আমার অফিশিয়াল একটি কাজের জন্য। তারপরও আমি তার জন্য অপেক্ষা করলাম এবং ১০ মিনিট পর তাকে আবারও কল করলাম। সে আমাকে বলে, মাত্র কল দিলাম, বসেন আমি আসতেছি। তারপর সে জানতে চাইল, কী সিদ্ধান্ত নিলেন? আমি বললাম, তার বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। আপনি তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি ছাত্রের কী হন? তারপর তিনি বললেন, ও আমার ছেলেপেলে, আমার সঙ্গে ঘুরে। তারপর তিনি আমাকে বললেন, সিদ্ধান্ত আমাকে জানাতে হবে। এ বলে আমাকে গালিগালাজ শুরু করে দেন। তারপর তিনি আমাকে মারতে আসেন। আমাকে শ্যুট (গুলি) করে মেরে ফেলার হুমকি দেন। ’

অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘আমার কাছে সিসিটিভির ফুটেজ আছে। সেটা দেখলে সব বোঝা যাবে। কলেজের প্রিন্সিপাল কখনো এ ধরনের হুমকি দেয় না। ’ 

সাধারণ ডায়েরির বিষয়টি নিশ্চিত করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তৌহিদুজ্জামান জানান, বিষয়টির তদন্ত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২১
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad