ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হিল্লা বিয়ের নামে দম্পতিকে ‘একঘরে’, ৯ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২১
হিল্লা বিয়ের নামে দম্পতিকে ‘একঘরে’, ৯ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় হিল্লা বিয়েকে কেন্দ্র করে দিনমজুর আয়নাল হক ও জামিরন বেগম দম্পতিকে ‘একঘরে’ করে রাখার ঘটনায় পুলিশের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফতোয়া প্রদানকারী ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

দেবীগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারক এম এম মাহবুব ইসলাম গ্রেফতারি পরোয়ানাটি গত রোববার (২২ আগস্ট) জারি করলেও তা মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে প্রকাশ পায়।

এর আগে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার (১১ আগস্ট) পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান স্বপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টি আমলে নিয়ে দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এবং রোববারের (২২ আগস্ট) মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন।

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দেবীগঞ্জ থানা পুলিশ উপজেলার সুন্দরদীঘি ইউনিয়নের সলিমনগর এলাকায় সরেজমিনে তদন্ত করে গত রোববার আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, দেবীগঞ্জে সলিমনগর এলাকায় মৌখিক তালাকের জেরে এক দিনমজুর দম্পতিকে সমাজপতিদের একঘরে রাখার ঘটনাটি বিভিন্ন অনলাইন সংবাদমাধ্যম ও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিগোচর হয়। সার্বিক বিবেচনায় অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ১৯১ (১) সি ধারায় বিষয়টি আমলে নেন। বিষয়টি তদন্ত করে গত রোববার ওই আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দেবীগঞ্জ থানার ওসিকে আদেশ দেন।

পরে পুলিশের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে আয়নাল ও জামিরন দম্পতিকে হিল্লা বিয়েতে বাধ্য করতে প্রায় চার মাস ধরে ‘একঘরে’ করে রাখার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রতীয়মান হয়। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে আদালত সমাজপতি শাহজাহান আলী, মুফতি আনোয়ার হোসেন, নাসির উদ্দীন, আমির চাঁন, শহীদ, ছোরমান আলী, জুলহক, মোস্তফা ও রাসেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আমিনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ফতোয়া দেওয়ার বিষয়ে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও যারা মনগড়া ফতোয়া দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন, তাদের জন্য এ ধরনের পরোয়ানা দিয়ে আদালত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফতোয়া দিয়ে মানুষকে সমাজচ্যুত করা এবং বিভ্রান্ত সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের পরোয়ানা যুগোপযোগী বলে আমি মনে করি।

দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। তবে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানাটি এখনো হাতে পাইনি। পরোয়ানা হাতে পেলেই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, দিনমজুর আয়নাল ও জামিরনের ৩৫ বছরের সংসার। তাদের চার সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে বিয়ে দিয়েছেন। চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল ওই দম্পতির মধ্যে পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়। এ সময় রাগের মাথায় স্ত্রীকে তিন তালাকের ঘোষণা দেন আয়নাল। বিষয়টি স্থানীয় গ্রাম্য মাতবরদের কানে পৌঁছাতেই শুরু হয় বিপত্তি। মাতবরেরা জামিরনকে হিল্লা বিয়ে দিতে বলেন। এতে রাজি না হওয়ায় ওই দম্পতিকে প্রায় চার মাস ‘একঘরে’ করে রাখেন মাতবরেরা।

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ