ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

লোহার শিকলে বন্দি কিশোরী, এক বছর পর মুক্ত 

মো. রাজীব সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২১
লোহার শিকলে বন্দি কিশোরী, এক বছর পর মুক্ত 

গাজীপুর: মৌসুমী আক্তার। বয়স ১৪ বছর।

মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় প্রায় এক বছর ধরে পায়ে শিকল বেঁধে বন্দি রাখা হয়েছিল তাকে। দীর্ঘ এক বছর পর মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) বন্দিদশা থেকে তার মুক্তি মিলেছে।  

ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর গ্রামে। মৌসুমী ওই এলাকার আব্দুল খালেকের মেয়ে। সে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিল।  

এলাকাবাসী ও তার পরিবার জানায়, প্রায় তিন বছর আগে মৌসুমী মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। পরে তার বাবা আব্দুল খালেক তার চিকিৎসা করান। তখন মৌসুমী কিছুটা সুস্থ হয়েছিল। পরে টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায় তার। মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে এদিক-সেদিক চলে যেত। বাড়ি থেকে মাঝে মধ্যে নিখোঁজ হয়ে যেত সে। পরে তাকে অনেক খোঁজাখুজি করে আনা হতো। এরপর নিরুপায় হয়ে তার পরিবার গত এক বছর ধরে লোহার শিকলে বেঁধে রাখে তাকে।  

গত কয়েকদিন আগে স্থানীয় লোকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মৌসুমীর শিকলে বাঁধা অবস্থায় একটি ভিডিও শেয়ার করে। ভিডিওটি ভাইরাল হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজের নজরে আসে। পরে তিনি মঙ্গলবার তাৎক্ষণিক মৌসুমীর চিকিৎসার দায়িত্ব নেন এবং তার বাড়িতে লোক পাঠান। এরপর শিকল থেকে মুক্ত করা হয় তাকে।  

মৌসুমীর বাবা আব্দুল খালেক তিন বছর আগে চাকরি করত। তার এ অবস্থা হওয়ায় চাকরি ছাড়তে হয় আবদুল খালেককে। চাকরি ছেড়ে দিয়ে মেয়ের দেখভাল করতে থাকেন তিনি। প্রায় সাত বছর আগে মৌসুমীর মা পারিবারিক কলহের জেরে বাড়ি থেকে চলে যান।  

ভিডিওতে দেখা গেছে, মানসিক ভারসাম্যহীন মৌসুমীকে পায়ে লোহার শিকল দিয়ে বারান্দায় খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। কখনো সে দাঁড়িয়ে থাকছে, কখনো বসে সময় কাটাচ্ছে। চিৎকার-চেঁচামেচি হাসি-কান্নার মধ্যেই ছিল মৌসুমী। এভাবে বন্দি থেকে নিঃসঙ্গ অবস্থায় জীবন-যাপন করছিল সে। অবশেষে ভিডিওটির কারণেই মুক্তি পেল এ কিশোরী।  

মৌসুমীর চাচা মো. আক্তার হোসেন জানান, প্রায় তিন বছর আগে মৌসুমী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর তার অসুস্থতা আরও বাড়তে থাকে। এক বছর আগে সে এদিক-সেদিক চলে যেত। তাকে অনেক কষ্টে খুঁজে আনা হতো। পরে বাধ্য হয়ে এক বছর ধরে তাকে পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয়েছিল। মঙ্গলবার এমপি ইকবাল হোসেন সবুজ সাহেবের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসা করানো হচ্ছে। চিকিৎসক তাকে ইনজেকশন দিয়েছে। এতদিন সে চিৎকার-চেঁচামেচি করতো, রাতে ঘুম আসতো না। ইনজেকশন দেওয়ার পর থেকে তার মধ্যে একটু পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।  

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা প্রণয় ভূষণ দাস জানান, গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জুবায়ের আহমেদের তত্ত্বাবধায়নে মৌসুমীর চিকিৎসা করানো হচ্ছে। তাকে ওষুধ দেওয়া হয়েছে। একদিনে তার পরিবর্তন দেখা গেছে। তাকে বাসায় রেখেই চিকিৎসা করানো হচ্ছে। আশা করছি, সে সুস্থ হয়ে আগের জীবনে ফিরে যেতে পারবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০২১
আরএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।