ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পাবনায় টিকা না দিয়ে খালি সিরিঞ্জ পুশের অভিযোগ!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২১
পাবনায় টিকা না দিয়ে খালি সিরিঞ্জ পুশের অভিযোগ! ভুক্তভোগী মেডিক্যাল শিক্ষার্থীর বাবা অ্যাডভোকেট আব্দুল হান্নান। ছবি: ফেসবুক থেকে

পাবনা: এবার পাবনাতে করোনা টিকা না দিয়ে এক মেডিক্যাল শিক্ষার্থীর শরীরে খালি সিরিঞ্জ পুশের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি জানাজানির পর বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

তবে এ ঘটনার কিছুই জানেন না বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্যবিভাগ।  

 বুধবার (৪ আগস্ট) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার এই ভিডিও বক্তব্য ছড়িয়ে দেন।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী সাবা মারিয়াম অন্তিকার বাবা পাবনায় স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক অ্যাডভোকেট আব্দুল হান্নান ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে গণমাধ্যম কর্মীদের বিষয়টি অবগত করেন।  

তিনি বলেন, আমার মেয়ের ঢাকা কমিউনিটি মেডিক্যল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের এমবিবিএস শেষ বর্ষের একজন শিক্ষার্থী। করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়ার জন্য ২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতালের নির্ধারিত টিকা কেন্দ্রে গিয়ে সকালে নিয়ম মাফিক লাইনে দাঁড়ায়। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাকে টিকা দেওয়ার জন্য নির্ধারিত স্থানে বসানো হয়। এরপর সিরিঞ্জে অ্যাম্পুল থেকে ভ্যাকসিন না তুলে খালি সিরিঞ্জ তার শরীরে পুশ করেন। এর পরে আমার মেয়ে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরত সেবিকা বলেন, সিরিঞ্জ তো খালি আপনি খালি সিরিঞ্জ পুশ করলেন কেন। তখন তিনি তার ভুল স্বীকার করে পুনরায় টিকা প্রদান করেন। আমার মেয়েকে খালি সূচ ফোটানোর জন্য তার শরীর থেকে রক্ত বের হয়েছে।

আব্দুল হান্নান আরো বলেন, ‘আমার মেয়ে অত্যান্ত নম্র ও শান্ত স্বভাবের। টিকা কেন্দ্র থেকে সে আমাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিষয়টি অবগত করে। বলে-বাবা আমাকে আজ টিকা না দিয়েই শরীরে খালি সিরিঞ্জ পুশ করেছিলো। আমি বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রতিবাদ করলে সে ভুল স্বীকার করে পরে আমাকে টিকা দিয়েছে।  

তিনি বলেন, আমার মেয়ে বিষয়টি বুঝতে পেরেছে কিন্তু অনেক সাধারণ মানুষ তো কিছুই বুঝবে না। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবি করছি। একইসঙ্গে তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাচ্ছি যারা এই কাজটি করেছে।  

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর টপ প্রায়োরিটি প্রোগ্রাম ‘সবার জন্য ভ্যাকসিন’ প্রদান। কিন্তু এই অসচেতন দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য এই ভালো কাজের সুনাম নষ্ট হবে। সরকারকে বিতর্কে ফেলবে। এ ঘটনার পরে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আমি আইনের আশ্রয় নিবো।

তবে এ ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী সাবা মারিয়াম অন্তিকার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।  
টিকা কেন্দ্রে কোন নার্স দায়িত্বে ছিলেন এ তথ্য জানতে হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ছুটিতে আছি। ভারপ্রাপ্ত আরএমও জাহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা. জাহিদকে মোবাইল ফোনে ( ০১৭৫১-৮২১৫৭২) সাংবাদিকরা একাধিকবার কল করলে তিনি রিসিভ করেননি।  

এ বিষয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. কে এম আবু জাফর বলেন, ঘটনার দিন দুপুর ৩টা পর্যন্ত আমি অফিস করেছি হাসপাতালেই ছিলাম। এই ধরনের কোনো ঘটনার কথা আমার কাছে আসেনি বা আমাকে কেউ অবগত করেনি। আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে এবং বিষয়টি প্রমাণিত হলে অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঘটনার বিষয়ে পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, ঘটনাটি আপনাদের গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে শুনেছি এবং ফেসবুকে একজন অভিযোগ করেছে সেটি দেখেছি। বিষয়টি নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। আগামীকাল এ ঘটনার তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এর আগে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে টিকা পুশ না করে সিরিঞ্জ ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।   

বাংলাদেশ সময়: ০২০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।