ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রূপগঞ্জের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৪ পরিবার বুঝে পেল স্বজনদের মরদেহ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২১
রূপগঞ্জের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৪ পরিবার বুঝে পেল স্বজনদের মরদেহ ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তান, আত্মীয়-স্বজন সবাই প্রখর দৃষ্টিতে গুনছে অপেক্ষার প্রহর। দীর্ঘ প্রায় এক মাস আগে প্রাণের যে স্বজনকে তারা হারিয়েছেন, শেষ বারের মতোও যার মুখটা দেখা হয়নি ভালোভাবে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত সেসব স্বজনদের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

তাইতো এই অপেক্ষা।

স্বাভাবিক দৃষ্টিতে মরদেহ দেখে চেনা যায় না। তবুও এক শ্বাশুড়ি মা তার বৌমার জন্যে আহাজারি করে সেদিন বলেছিলেন- 'দাঁত আছে না দাঁত, দাঁত দেখলেই আমি আমার মায়েরে চিনবো!' কিন্তু তাও সম্ভব হয়নি। তাইতো তিনিসহ ৪৮ পরিবারের সদস্যরা নমুনা দিয়েছিলেন মরদেহ শনাক্তের জন্য। তারপর এক দীর্ঘ অপেক্ষা।

অবশেষে সেই অপেক্ষা শেষ হয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে শুকিয়ে যাওয়া চোখ থেকে আবারো জল ঝরেছে। দীর্ঘ সময় পর বুধবার (৪ আগস্ট) মৃত ব্যক্তিদের স্বজনারা বুঝে পেয়েছেন তাদের প্রিয় মানুষগুলোর মরদেহ।

বুধবার (১৪ আগস্ট) দুপুর ২টার সময় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে রূপগঞ্জের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এসময় ৪৮টি মরদেহের মধ্যে ২৪টি মরদেহ হস্তান্তর করা হয় স্বজনদের কাছে।

এ বিয়ষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, আমরা ৪৮টি মরদেহের মধ্যে ৪৫টি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করেছি। বাকি ৩টি মরদেহের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলমান রয়েছে। আর এই ৪৮টির মধ্যে আজ ২৪টি মরদেহ তাদের আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। আগামী শনিবার বাকি ২১টি এবং পরবর্তীতে বাকি ৩টি মরদেহের শনাক্তকরণ শেষে হস্তান্তর করা হবে।

তিনি জানান, আমাদের ইচ্ছে ছিল আমরা সবগুলো মরদেহ একসঙ্গে হস্তান্তর করবো। কিন্তু এদের অনেকেই ঢাকার বাইরে আছেন। ফলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ঢাকায় আনার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগায় একটু দেরি হচ্ছে।

এছাড়া কারখানার বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে রূপগঞ্জের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলেও এসময় জানান সিআইডির অতিরিক্ত এই ডিআইজি ইমাম হোসেন।

মরদেহ হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের ফরেনসিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রোমানা আক্তার। তিনি বলেন, তিনটি মরদেহের ডিএনএ শনাক্তকরণ এখনো বাকি রয়েছে। আশা করছি অল্প কিছুদিনের মধ্যে সেগুলো সম্পন্ন হবে।

এসময় নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে মৃত ব্যক্তিদের সৎকার ও অন্যান্য কাজের জন্য তাদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে সাহায্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সাহায্যও দেওয়া হয়েছে।

দুপুরে মরদেহ হস্তান্তরের সময় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে দেখা যায়, প্রায় সবসময়ই স্বাভাবিক ভাবেই যেখানে ভারী হয়ে থাকে এখানকার পরিবেশ, সেখানে মধ্য দুপুরে তপ্ত রোদের মধ্যে স্বজনদের আহাজারি সেই পরিবেশকে করে তোলে আরও বেদনাময়। বিশেষ করে মরদেহ বুঝে পাওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের কান্নার আহাজারি আর অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দে ভারি হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।

এর আগে গত ৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সেজান জুস কারাখানার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ৪৮ ঘণ্টা পর আগুন নেভাতে সক্ষম হন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পরের দিন শুক্রবার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানার ভেতরে থেকে ৪৮টি পোড়া মরদেহ স্থানীয় প্রশাসন ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২১
এইচএমএস/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।