ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৬ মাসে ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ‌‘জ্বিনের বাদশা’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২১
৬ মাসে ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ‌‘জ্বিনের বাদশা’

ঢাকা: কথিত জ্বিনের বাদশা পরিচয়ে সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস। এরপর ফাঁদে ফেলে পরিস্থিতি বুঝে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।

এ জ্বিনের বাদশার সঙ্গে কথা বলে দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তির আশায় শুধু একজন নারী খুইয়েছেন প্রায় ২২ লাখ টাকা। গত ৬ মাসে এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

চট্টগ্রামের ওই নারীর কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা তদন্তের ধারাবাহিকতায় জ্বিনের বাদশা পরিচয় দেওয়া চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

তারা হলেন- মূলহোতা মো. আল আমিন, মো. রাসেল ও মো. সোহাগ।

বুধবার (৪ আগস্ট) দুপুরে মালিবাগের সিআইডি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদসম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তা ধর।

তিনি জানান, চট্টগ্রামের একজন ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বিদেশ থাকেন, তার একটি দুরারোগ্য ব্যাধি ছিল। এই রোগ থেকে মুক্তির আশায় টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন দেখে জ্বিনের বাদশাকে ফোন করলে ওই ভুক্তভোগী নারীকে বলা হয়, তার  সমস্যার সমাধান করা হবে।

জ্বিনের বাদশা নামধারী চক্রটি ওই নারীকে ফাঁদে আনার জন্য গরীব মানুষদের খাওয়ানোর জন্য প্রথমে ৯৯৯ টাকা নেয়। এরপর ধাপে ধাপে জ্বিনের বাদশার সঙ্গে কথা বলে দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তির আশায় প্রায় ২২ লাখ টাকা খোয়ান ওই নারী। একপর্যায়ে ওই নারী প্রতারণার স্বীকার হয়েছে বুঝতে পেরে চট্টগ্রামের খুলশী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যে মালার তদন্তে চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

এসএসপি মুক্তা ধর বলেন, জ্বিনের বাদশা চক্রের মো. আল আমিন জয়যাত্রা টিভিসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও কেবল নেটওয়ার্কের লোকাল চ্যানেলে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করা, বিদেশে যাওয়ার সুব্যবস্থা করা, দাম্পত্য কলহ দূর করা, বিয়ের বাধা দূর করা, অবাধ্যকে বাধ্য করা, চাকরিতে পদোন্নতির বিজ্ঞাপন দিতো। সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন মানুষ যোগাযোগ করলে মেয়ের কণ্ঠ সেজে কথা বলে সরলমনা মানুষকে ফাঁদে পেলে এবং পরবর্তীতে তাদের কথা অনুযায়ী কাজ না করলে প্রিয়জনের ক্ষতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতো।

তিনি বলেন, বিজ্ঞাপনে দেওয়া নম্বরে ফোন দিলে একজন ফোন রিসিভ করে বিস্তারিত তথ্য নিতেন। পরে ওই ফোনদাতাকে বলা হতো তারা কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে গরিব মানুষকে এক বেলা খাবার দিতে হবে। ৯৯৯ টাকা বা ১১১১ টাকা পাঠাতে হবে। টাকা পাঠানোর পর জ্বিনের বাদশার নম্বর দিলে রাত দুইটা থেকে তিনটার মধ্যে ফোন করলে কথা বলবেন বলে জানানো হয়।

ওই টাকা দেওয়ার পরবর্তী ধাপে ওই নম্বরে ফোন দিলে একজন পুরুষ ফোনটি রিসিভ করেন। সালাম বিনিময়ের পরিবারের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য নেন। জ্বিন-পরির মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবেন। পরে সাধনা করে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।

চট্টগ্রামের ২২ লাখ টাকা খোয়া যাওয়া ওই ভুক্তভোগী নারীকে বলা হয়, নারীর বাসার নিচে আড়াই কেজি স্বর্ণ লুকায়িত আছে সেটা পাহারায় অজাগর সাপ রয়েছে। ওই স্বর্ণ আনতে পারলে আমাদের একটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করে দিতে হবে। পরে তাকে বলা হয়, সাপকে খাওয়ানোর জন্য আড়াই মন দুধ ও ১০ কেজি আতর লাগবে। এভাবে বিভিন্ন সময় ওই নারীর কাছ থেকে চক্রটি ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

এমনকি ওই নারীকে বলা হতো তার স্বামী-সন্তান বা অভিভাবককে এসব কথা যেন না জানায়। এতে তার স্বামী ও সন্তানের ক্ষতি হতে পারে।

সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, ছয় মাসে চক্রটি কয়েকজনের কাছ থেকে ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে, তাদের জব্দ করা ব্যাংক হিসাবে ১২ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। এছাড়া আমরা কয়েকজন ভুক্তভোগীর কাছে থেকে যে তথ্য পেয়েছি, তাদের অভিযোগ তদন্ত করলে এর পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২১
পিএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।