বরিশাল: মাহাবুব আলম পেশাদার শিল্পী। করোনা মহামারির কারণে উপার্জনে ভাটা পড়ায় রং-তুলি ছেড়ে ধরেছেন রিকশার হ্যান্ডেল।
বাংলানিউজকে শিল্পী মাহবুব বলেন, ঢাকায় থাকতাম, সব হারিয়ে ২০০৬ সালে বরিশালে আসি। ব্যানার-সাইনবোর্ড লেখালেখির কাজ করতে পারায় কালিবাড়ি রোডে অন্যের দোকানে কাজ নেই। দীর্ঘদিন কাজ করতে করতে নিজেই মাহাবুব আর্ট নামে একটি দোকান দেই। বরিশাল শহরের কাউনিয়ায় ভাড়া বাসায় স্ত্রী আর কন্যা মুসকান জাহান তাইয়্যেবাকে নিয়ে ভালোভাবেই দিন কাটছিল। কিন্তু করোনা আর লকডাউনে কাজ কমে যাওয়া ও দোকান বন্ধ থাকায় উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, বাধ্য হয়ে রিকশা চালাতে শুরু করি। কিন্তু যা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। দুই বছরের কন্যার দুধ কিনে দিতে পারছি না। মেয়েটি যখন আধো আধো মুখে দুধ খাওয়ার কথা বলে, খুব কান্নাকাটি করে, তখন আর আমি আর ঘরে থাকতে পারি না। চেষ্টা করছি মেয়ের মুখের হাসি ধরে রাখার। কিন্তু অভাব সেই হাসি কেড়ে নিচ্ছে।
করোনাকালের প্রতিটি লকডাউনেই দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে। আর যতটুকু পুঁজি ছিল তা গত বছর ঘরে বসেই শেষ করেছি। এ বছর স্বামী-স্ত্রী মিলে কোনো কোনো দিন একবেলা ভাত খেয়ে কাটিয়েছি। তারপরও লোকলজ্জার কারণে হাত পাততে পারিনি, সাহায্য চাইতে পারিনি। করুণ অবস্থায় থাকলেও কাউকে বলতে পারিনি। কিন্তু মেয়ের দুধ খাওয়ার আকুতিতে আর ঘরে বসে থাকতে পারিনি, বলেন মাহবুব।
দিনে লোকলজ্জার ভয়ে বের না হলেও রাতে রিকশা নিয়ে নেমে পড়েন মাহবুব আলম।
রিকশা চালানোকে খাটো করে দেখেন না তিনি। তবে সব কাজ সবার জন্য নয়, এটা তিনি বিশ্বাস করেন। ১৯৯১ সালে এসএসসি পাস করা মাহবুব আলম বলেন, দুই মাসের বেশি সময় ধরে দোকান খুলতে পারছি না। দোকান মালিককে অগ্রিম যে টাকা দিয়েছি তা হয়তো বন্ধ থাকা অবস্থায় ভাড়া বাবদ কেটে নেবে। এখন রিকশা চালানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২১
এমএস/এমজেএফ