ঢাকা: করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে বিপাকে পড়েছেন রাজধানীতে নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ। দিন এনে দিন খাওয়া এই মানুষগুলোর আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে তারা দুঃসহ জীবনযাপন করছেন।
বুধবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন এসব তথ্য।
খেটে খাওয়া এসব মানুষ জানিয়েছেন, করোনার অভিশাপ আমাদের জীবনকে শেষ করে দিয়েছে। করোনার আগে পরিবার নিয়ে কোনো মতো দু-বেলা ডাল-ভাত খেয়ে জীবন চলে যাচ্ছিল। কিন্তু করোনা আমাদের ডাল-ভাত কেড়ে নিয়েছে। পরিবার নিয়ে এই শহরে বেঁচে থাকাটাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানায় তারা।
এ ব্যাপারে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, পরিবার নিয়ে ঢাকা শহরে বাস করি। পাঁচ সদস্যের পরিবারে একজনের আয়ে সংসার চলে। কোনো মতো দিন চলে যাচ্ছিল। কিন্তু করোনা আমাদের শেষ করে দিয়েছে। বিধিনিষেধের কারণে গাড়ি চালাতে পারি না। কোথাও থেকে কোনো সহায়তাও পাচ্ছি না। জানি না জীবন কীভাবে চলবে।
বাজারে সবকিছুর দাম অনেক চড়া। পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে সরকারের ওএমএস ও টিসিবি থেকে পণ্য নিতে লাইনে দাঁড়িয়ে দিন কেটে যায়। তারপরও পণ্যের দেখা পাই না। পরিবারের জন্য ডাল-ভাতও জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেগম রোকেয়া সরণিতে ফার্নিচার দোকানের ভ্যানচালক রুবেল।
তিনি বলেন, দোকান খোলা থাকলে কাজ থাকে। আমরা দিন এনে দিন খাই। জমানো কোনো টাকা নেই। কয়েক মাসের বাসা ভাড়াও বাকি। বাসায় কোনো বাজার-সদাই নেই। হাতেও কোনো টাকা পয়সা নেই। এভাবে চললে আমরা না খেয়ে মরবো।
করোনা গরিবের কি করবে। কাজ কাম নেই, টাকা পয়সা নেই। আমরা এমনেই মরে যাবো বলেও উল্লেখ করেন ভ্যানচালক রুবেল।
সরকার থেকে সাহায্য দেওয়ার কথা বলা হলেও আমরা কিছুই পাইনি বলে জানালেন দিনমজুর রহিম মিয়া।
তিনি বলেন, সরকারের সাহায্য আমরা পাবো না। এগুলো কাদের কাছে আসে সেগুলোও আমরা জানি না। আমরা চাই সরকার আমাদের দুটো ভাত দিক। আর তা না হলে বিধিনিষেধ তুলে আমাদের বাঁচতে দিক। এভাবে চললে আমরা আর বাঁচবো না।
প্রডাকশনে কাপড় সেলাই করে সংসার চালাই। কাজ নেই, সব বন্ধ কীভাবে বাঁচবো, বাকি দিনগুলো কীভাবে যাবে কিছুই বুঝতে পারছি না বলে জানালেন দর্জি কবির হোসেন।
তিনি বলেন, টেইলারিং দোকানে আমরা প্রডাকশনে কাজ করি৷ এখন টেইলার্স দোকান বন্ধ, আমাদেরও কাজ নেই। খুব কষ্টে দিন কাটছে।
এদিকে রাজধানীর পথে পথে কর্মহীন অসহায় মানুষের আহাজারি দেখা গেছে। জীবনে বাঁচার তাগিদে তাদের একটাই আবেদন টাকা নয় আমাদের দু-বেলা দুটো আহারের ব্যবস্থা করে দিক সমাজের বিত্তবানরা। তা না হলে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকাটা কষ্টকর হবে বলেও জানিয়েছেন এসব অসহায় মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ১২১১ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২১
এসএমএকে/আরআইএস