ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে আসে না টিসিবির ট্রাক 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২১
নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে আসে না টিসিবির ট্রাক 

ঢাকা: করোনা পরিস্থিতিতে চলমান কঠোর লকডাউনে রাজধানীসহ সারা দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্তের সুবিধার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। তবে পণ্য কিনতে এসে টিসিবির অব্যবস্থাপনায় পণ্য পাওয়ার অনিশ্চয়তা, প্রতিদিন ট্রাক নির্দিষ্ট সময়ে ও স্থানে না আসাসহ নানাবিধ হয়রানির শিকার হচ্ছেন নিন্ম আয়ের ভোক্তারা।

একই সঙ্গে কয়েক দিন পর পর ট্রাক আসায় অতিরিক্ত ভিড়ের ফলে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না কেউই। সামাজিক দূরুত্ব বজায় না রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন ক্রেতারা।

মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর ধোলাইখাল, দয়াগঞ্জ, লোহারপুল, লক্ষ্মীবাজার, প্রেসক্লাব, সচিবালয় গেট এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

সূত্রাপুর থানার চারটি স্থানে ট্রাকে করে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির কথা থাকলেও মঙ্গলবার শুধু একটি স্থানে পণ্য বিক্রি হতে দেখা গেছে। সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানে টিসিবির ট্রাক পৌঁছানোর কথা থাকলেও ট্রাক আসে ১১টায়। কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যেও পণ্য কিনতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে নিন্ম আয়ের মানুষকে।

এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ে ও স্থানে ট্রাক না পৌঁছানোর ফলে এক স্থানে টিসিবির ট্রাক সেলে কম দামে পণ্য কিনতে নিন্ম আয়ের সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই লাইনে গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে যারা ট্রাকে পণ্য বিক্রি করছেন তাদেরও মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। ক্রেতা-বিক্রেতা যারা মাস্ক পরেছেন তাদেরও থুতনিতে নামিয়ে রাখতে দেখা গেছে। গতকাল পণ্য না পেয়ে ঘুরে গেছেন অনেকেই। তাই শেষ পর্যন্ত পণ্য হাতে পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় থাকেন ভোক্তারা। এরই মধ্যে রয়েছে নিয়ম ভঙ্গের নানা অভিযোগ।

এ বিষেয়ে লক্ষ্মীবাজার টিসিবি ট্রাকের ডিলার জাহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আজ আমাদের আসতে দেরি হয়েছে। গুদামে সিরিয়াল ছিল। আগে দুইটা গুদাম থেকে মাল দিতো, এখন একটা গুদাম থেকে মাল দিচ্ছে। ২৩০ নং গুদাম থেকে মাল দিচ্ছে ৩৪৪ নং গুদাম থেকে দিচ্ছে না। আমাদের প্রতিদিন পণ্য দেয় না, রোস্টার অনুযায়ী দেওয়া হয়। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৭ জন ডিলারকে পণ্য দেয়। আমি সপ্তাহে একদিন মাল পাই। আশেপাশের ডিলাররা মাল পায়নি তাই ট্রাক নিয়ে আসেনি।

স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির ডিলার বলেন, বার বার বলা হলেও কেউ কথা শোনে না। আমরা আসার পর গোল দাগ দিয়ে দিয়েছি। প্রশাসনের লোকজন এ পর্যন্ত তিন বার লাইন ঠিক করে দিয়েছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আমরা এখন ট্রাক নিয়ে চলে যেতে পারি, এছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই।

ট্রাকের লোকজন মাস্ক পরা নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতক্ষণ পরেই ছিলো, গরমের কারণে একটু খুলেছে। আবার পড়বে। তবে আমরা মাস্ক না পরলে কাউকে পণ্য দিচ্ছি না। আমরা ৪০০ কেজি ডাল, ৪০০ কেজি তেল ও ৭০০ কেজি চিনি দিচ্ছি। একজনকে সর্বোচ্চ তিন কেজি চিনি, এক কেজি ডাল ও ২ লিটার তেল দিচ্ছি।  

টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য নিতে সকাল থেকে অপেক্ষা করছেন সজীব বসাক। বাংলানিউজকে জানান, সবাই তো বিপদে পড়ে আসে। দোকানে পণ্যের দাম বেশি। গতকাল না পেয়ে ঘুরে গেছি। আজ আবার এসেছি। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। ৯টা বাজে ট্রাক আসার কথা থাকলেও এসেছে ১১টার পরে। দুই কেজি তেল, দুই কেজি চিনি ও দুই কেজি ছোলার জন্য চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। আরও কত যে সময় লাগবে, জানি না। এত লোকের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানা আসলে অনেক কঠিন। সকার থেকে দুই তিন বার প্রশাসনের লোক এসে লাইন ঠিক করে দিয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা!

স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কোতোয়ালি থানার কনস্টেবল স্বপন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এই থানার না, পাশের থানার। এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম, এরকম জটলা দেখে দাঁড়িয়ে দেখি টিসিবির ট্রাক আমাদের থানায় দাঁড় করিয়েছে। তাই ট্রাকটাকে একটু সরিয়ে দাঁড়াতে বললাম। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে নির্দিষ্ট দূরত্বে লাইন করে দিয়েছি। মাত্র লাইন ঠিক করে দিয়ে আসলাম। কিন্তু মানুষ নিজে সচেতন না হলে কোনো লাভ হবে না।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত ১৯ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত সাত দিন ট্রাকসেল বন্ধ থাকার পর গত ২৬ জুলাই সোমবার থেকে আবার ন্যায্যমূল্যে ট্রাকসেল শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ২৯ আগস্ট পর্যন্ত। সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন এই ট্রাকসেল চলবে।

চলমান লকডাউনে গত ৫ জুলাই থেকে খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি শুরু করেছে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সারাদেশে ৪৫০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে প্রতিটি ট্রাকে ৫০০ থেকে ৮০০ কেজি চিনি, ৩০০ থেকে ৬০০ কেজি মসুর ডাল এবং ৮০০ থেকে ১২০০ লিটার করে সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে। একজন সাধারণ ক্রেতা ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ চার কেজি চিনি, ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ দুই কেজি মসুর ডাল, ১০০ টাকা দরে দুই থেকে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল এবং ২০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২১
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।