ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ, রাতে ইলিশ শিকারে সমুদ্রে যাবে জেলেরা

শফিকুল ইসলাম খোকন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২১
৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ, রাতে ইলিশ শিকারে সমুদ্রে যাবে জেলেরা

বরগুনা: এখন সাগরের বুকজুড়ে থাকবে শুধু জেলে আর ট্রলার। সারিবদ্ধ ট্রলার আর পানিতে পানিতে জাল।

এক প্রকার সাগরের বুকজুড়ে জেলেদের মিলন মেলা ঘটবে। আবারও সরগরম হয়ে উঠবে জেলে পল্লী। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসবে তাজা ইলিশ কিনতে। বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সারিবদ্ধ থাকবে মাছবাহী ট্রাক। আবারও ইলিশ ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠবে দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটা। ট্রলারগুলো মাছ ধরে কয়েকদিন পর ঘাটে ফিরতে শুরু করলেই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে।

মৎস্য অবতরণ এলাকার ঘাটগুলো আবার সরব হয়ে উঠেছে। যেখানে নিষেধাজ্ঞার সময় শূন্যতা বিরাজ করছিল সেখানে এখন আবার প্রাণ সঞ্চার ফিরে এসেছে। তবে এই উৎসবের মধ্যে রয়েছে করোনা আতঙ্ক। ২৩ জুলাই থেকে বৈশ্বিক মহামারি করোনার ‘লডকাউন’, এ অবস্থায় সাগর থেকে মাছ ধরে ফিরে আসা জেলেদের মধ্যেও হতাশা ছাপ থাকবে বলে জানান মৎস্য সেক্টর সংশ্লিষ্টরা।

সাগরে সব ধরনের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মৎস্য শিকারের উপর টানা নির্ধারিত ৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে শনিবার (২৪ জুলাই) থেকে সাগরে যাচ্ছে উপকূলীয় এলাকা পাথরঘাটার জেলেরা। শুক্রবার (২৩ জুলাই) রাত ১২টার পর থেকেই মাছ ধরা ট্রলার নিয়ে সাগরের দিকে ছুটবেন জেলেরা।  

গভীর সাগরে ইলিশ পাওয়ার আশায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে দলবেধে বেরিয়ে পড়ছে জেলেরা। তাদের প্রত্যাশা নিষেধাজ্ঞার ফলে আগের চেয়ে ইলিশ বেশি ধরা পড়বে সাগরে। এর আগে, ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।

সমুদ্রগামী একাধিক জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনার প্রাদুর্ভাবে ও ৬৫ দিনের সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা কারণে বেকার বসে থেকে ধার-দেনা করে চলতে হয়েছে সমুদ্র উপকূলীয় জেলেদের। প্রস্তুতির শেষ দিনে শুক্রবার জেলেরা নতুন করে বিনিয়োগ করে সমুদ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। জেলেরা জানিয়েছেন, করোনা প্রকোপে ধারদেনা শেষে সমুদ্রে নামার পূর্বে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সমুদ্রে নামছেন তারা।

মৎস্য বিভাগ বলছে, নিষেধাজ্ঞায় সাগর ও তার মোহনায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ সময় জেলেরাও মাছ ধরা থেকে বিরত ছিল। কয়েকদিন অপেক্ষা করলেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত রূপালি ইলিশ। ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষতিপূরণ হিসেবে জেলেদের ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। ৬৫ দিন পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে কষ্ট হলেও আবারও নিজ পেশায় ফিরতে পেরে খুশি জেলেরা।

এ দিকে আড়ৎদাররাও তাদের আড়ৎ নতুন করে সাজিয়ে নিচ্ছেন। নতুন করে আবার ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন ইলিশ বিক্রির জন্য।  

সাগরে যাত্রাকালে জাকির মাঝি, মোস্তফা মাঝি ও নুরুল ইসলাম মাঝি জানান, ৬৫ দিন মাছ ধরা থেকে বিরত থাকার পর শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে সাগরে মাছ শিকারে যাচ্ছেন তারা। ইলিশ মাছ ধরা একমাত্র পেশা হওয়ায় এতোদিন অলস সময় পার করতে হয়েছে তাদের। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় ধার-দেনা করে সংসার চালিয়েছেন তারা। এখন সমুদ্রে ইলিশ ধরা পড়লে সামনের দিনগুলো ধার-দেনা পরিশোধ করতে পারবে বলে আশা তাদের।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, অলস সময় কাটিয়ে জেলেদের অনেক আশা নিয়ে সাগরে পাঠানো শুরু করেছি। আশা করছি ভালো মাছ পাবেন জেলেরা। আবারও জেলেদের মুখে হাসি ফুটবে। জেলেসহ আমাদের ধারদেনাও শোধ করতে পারবো।

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্তু কুমার অপু বাংলানিউজকে জানান, সাগরে মাছসহ মূল্যবান প্রাণিজ সম্পদের ভাণ্ডার সুরায় চলতি বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। আজ থেকে ইলিশসহ অন্য সব ধরনের মাছ শিকারে আর কোনো বাধা নেই।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বাংলানিউজকে জানান, বরগুনা জেলায় মোট নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৩৬ হাজার ২২ জন। তার মধ্যে সমুদ্রগামী ২৭ হাজার ২শ ৭৭ জেলে। সকলেই ৬৫ দিনের খাদ্য সহায়তা ৮৬ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।

২০১৫ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি করতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও তা কেবলমাত্র চট্টগ্রামের ২৫৫টি ফিশিং বোডের জন্য বলবৎ ছিলো। পর বছর থেকে সাগরে মাছ আহরণের জন্য ব্যবহৃত যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে জেলেরা আন্দোলন করলেও নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে। এতে চরম বিপাকে পড়েন এ পেশার সঙ্গে জড়িত জেলে পরিবার, ট্রলার মালিক-শ্রমিক, আড়তদার, দাদনদার, বরফকলের সঙ্গে সম্পৃক্তসহ জাল প্রস্তুতকারী, তেল সরবরাহকারি, খাবার সরবরাহকারি লাখ লাখ পরিবার।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।